যুদ্ধাপরাধী তিন ভাইয়ের ১ জনের ফাঁসি, ২ জনের যাবজ্জীবন

ঢাকা: একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে হবিগঞ্জের মহিবুর রহমান ওরফে বড় মিয়াকে মৃত্যুদণ্ড ও মুজিবুর রহমান এবং আব্দুর রাজ্জাককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

বিচারপতি আনোয়ারুল হক নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল বুধবার দুপুরে এ রায় ঘোষণা করেন।

এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাদের বিরুদ্ধে ২৪০ পৃষ্ঠার রায় ঘোষণা শুরু করে ট্রাইব্যুনাল।

ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যানের প্রারম্ভিক বক্তব্যের পর বিচারপতি সোহরাওয়ার্দী ২৪০ পৃষ্ঠার রায়ের সার সংক্ষেপ পড়েন। এরপর বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম রায়ের বাকি অংশ পড়েন। সবশেষে বিচারপতি আনোয়ারুল হক সাজা ঘোষণা  করেন।

এর আগে সকাল পৌনে ১০টার দিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তিনজনকে ট্রাইব্যুনালের হাজতখানায় আনা হয়।

এ রায় ঘিরে ট্রাইব্যুনাল এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের সবগুলো প্রবেশ পথে করা হয় তল্লাশির ব্যবস্থা। ২০১০ সালের ২৫ মার্চ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর এটি ২৪তম রায়।

গত ১১ মে মামলাটি যে কোনো দিন রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়েছিল।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় চারটি ঘটনায় হত্যা, অপহরণ, আটক, নির্যাতন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণের মতো অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন ও প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী গোলাম কিবরিয়া, পারভেজ হোসেন ও এম. মাসুদ রানা।

প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন সাংবাদিকদের বলেন, এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ১২ জন এবং আসামিপক্ষে সাত জনের সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছে।

গত বছর ২৯ সেপ্টেম্বর যুদ্ধাপরাধের চার ঘটনায় অভিযোগ গঠনের মধ্যে দিয়ে এই তিন ভাইয়ের বিচার শুরু করে আদালত। সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় ২১ অক্টোবর।

আসামিদের মধ্যে মহিবুর রহমান ওরফে বড় মিয়া (৬৫) হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলাধীন খাগাউড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। তার ভাই মুজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়া (৬০) বর্তমান চেয়ারম্যান।

দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি তদন্ত শুরু করে প্রসিকিউশনের তদন্ত দল। তদন্তের সময় ২১ জনের বক্তব্য শোনেন তদন্ত কর্মকর্তা।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধের সময় খাগাউড়া গ্রামে নেজামে ইসলামের এমএনএ সৈয়দ কামরুল আহসানের বাড়িতে রাজাকার ক্যাম্প ও টর্চার সেল ছিল। আর তাদের বড় ভাই কলমধর ছিলেন খাগাউড়া ইউনিয়ন শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান এবং ছোট ভাই মোস্তফা ছিলেন রাজাকার কমান্ডার।

প্রসিকিউশনের আবেদনে ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনাল দুই সহোদরের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। ওইদিনই বানিয়াচং থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে স্থানীয় পুলিশ। ১২ ফেব্রুয়ারি তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

অন্যদিকে গত বছরের ১৭ মে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির দুইদিন পর মহিবুর-মুজিবুরের চাচাতো ভাই রাজ্জাককে মৌলভীবাজারের আথানগিরি পাহাড় থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ওইদিনই ট্রাইব্যুনালে তিনজনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয় প্রসিকিউশন। ট্রাইব্যুনাল ৩১ মে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেয়।

তিন আসামির বিরুদ্ধে চার অভিযোগ:

১. একাত্তর সালের ১১ নভেম্বর বানিয়াচং উপজেলায় অভিযান চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধা আকল আলী ও রজব আলীকে হত্যা করে লাশ গুম করেন আসামিরা।

২. তারা পাকিস্তানি বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মেজর জেনারেল এমএ রবের বাড়িতে হামলা চালিয়ে অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজ করেন।

৩. একই দিন খাগাউড়া এলাকার উত্তরপাড়ায় আসামিদের সহযোগিতায় পাকিস্তানি বাহিনী মঞ্জুর আলীর স্ত্রী ও আওলাদ ওরফে আল্লাত মিয়ার ছোট বোনকে ধর্ষণ করেন। পরে আল্লাত মিয়ার বোন বিষপানে আত্মহত্যা করেন।