তুরস্কে ইসলামপন্থি সরকারের বিরুদ্ধে সেকুলার সেনা বিদ্রোহের ইতিহাস

ডেস্ক: তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেফ তাইয়েফ এরদোয়ানের সরকারের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান চেষ্টার পর সারা বিশ্বে আলোচনার শীর্ষে উঠে এসেছে এ ঘটনা। তুরস্কের এ সেনা অভ্যুত্থান চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।

তবে তুরস্কের সামরিক বাহিনীতে সরকারের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান এটিই প্রথম নয়। দেশটির সেনাবাহিনী আগাগোড়া কথিত সেকুলার। তাই প্রায়ই ইসলামপন্থি বিভিন্ন দল বা সরকারের সঙ্গে বিরোধ লেগেই ছিল সামরিক বাহিনীর। এর আগে আরও পাঁচবার ক্যু ঘটেছে দেশটিতে।

১৯৬০: প্রায় রক্তপাতহীন এ সামরিক অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে ছিলেন ইস্তাম্বুল ও আঙ্কারা ওয়্যার কলেজের কর্মকর্তা ও শিক্ষানবিশ কর্মকর্তারা (ক্যাডেট)। পরের দিন স্থলবাহিনীর প্রধান জেনারেল সিম্যাল গারসেল রাজনৈতিক সংস্কার দাবি করেন। কিন্তু তার দাবি প্রত্যাখ্যান করা হয়। তাই তিনি পদত্যাগ করেন। অভ্যুত্থানের নেতারা ৩৮ সদস্যবিশিষ্ট ন্যাশনাল ইউনিটি কমিটি গঠন করেন। ওই ঘটনার চেয়ারম্যান ছিলেন গারসেল। এ সময় বিচার হয় ৬০১ জনের, যাদের ৪৬৪ জনকেই বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়।

১৯৭১: বামপন্থি ও জাতীয়তাবাদীদের মধ্যে দীর্ঘ লড়াইয়ে দেশ বিপর্যস্ত। মাসের পর মাস চলছিল ধর্মঘট। রাজপথে প্রায়ই লড়াই চলছিল দুপক্ষের মধ্যে। এ সময় সামরিক বাহিনী সরকারকে আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের জন্য সতর্ক করে দেয়। কয়েক মাস পর প্রধানমন্ত্রী সুলেমান ডেমিরেল পদত্যাগ করেন। রক্ষণশীল রাজনীতিক ও আমলারা সামরিক বাহিনীর তত্ত্বাবধানে আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের পথ বেছে নেয়। ফলে বেশ কয়েকটি প্রদেশে সামরিক শাসন জারি করা হয়। ১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বরের আগে সেনাশাসন সমপূর্ণভাবে প্রত্যাহার করা হয়নি।

১৯৮০: ওই বছরের ১২শে সেপ্টেম্বর জেনারেল কেনান ইভরেনের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর জ্যেষ্ঠ কমান্ড অভ্যুত্থান পরিচালনা করে। এ ঘটনার পরপর আবারও রাজপথে সংঘাত বাধে বামপন্থি ও জাতীয়তাবাদীদের। শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিকদের গ্রেপ্তার করা হয়। পার্লামেন্ট, রাজনৈতিক দল ও সব ট্রেড ইউনিয়ন বিলুপ্ত করে দেয়া হয়। ৫ সদস্য বিশিষ্ট জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ দেশের নিয়ন্ত্রণভার গ্রহণ করে। সংবিধান বাতিল করে দেয়া হয়। প্রভিশনাল সংবিধান প্রণয়ন করা হয়, যাতে প্রায় অসীম ক্ষমতা পান সামরিক কমান্ডাররা।

১৯৯৭: ওই বছরের ১৮ই জুন প্রধানমন্ত্রী নেকমেত্তিন এরবাকান পদত্যাগ করেন। প্রতিপক্ষরা তাকে দেশের ধর্মনিরপেক্ষ পরিচিতির প্রতি বিপজ্জনক হিসেবে আখ্যায়িত করে। একপর্যায়ে সামরিক বাহিনী, ব্যবসায়ী, বিচার বিভাগ ও রাজনীতিবিদদের উপর্যুপরি চাপে এরবাকান পদত্যাগ করেন। মুস্তাফা কামাল আতাতুর্কের প্রতিষ্ঠিত ধর্মনিরপেক্ষ তুরস্ককে সুরক্ষিত করতে নিজেদেরই যোগ্য মনে করেন সেনাবাহিনীর জেনারেলরা।

২০০৭: লোকচক্ষুর আড়ালে থাকা এরগেনেকোন গোষ্ঠী প্রথম নজরে আসে এ বছর। ইস্তাম্বুলের একটি ঘরে পুলিশি অভিযানে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করা হয়। শেষ পর্যন্ত শ’ শ’ মানুষকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রিসেফ তাইয়িফ এরদোগানের বিরুদ্ধে কথিত অভ্যুত্থান চেষ্টার দায়ে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়। সাংবাদিক, কর্মকর্তা, আইনজীবীসহ ২৭৫ জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। তবে ২০১৬ সালে আপিল আদালত ওই আদেশ বাতিল করে দেন। আদালতের রায়ে বলা হয়, এরগেনেকোন নামে কোন গোষ্ঠীর অস্তিত্বই প্রমাণ করতে পারেনি সরকার।