বাংলাদেশে বেড়েছে হিন্দু, কমেছে মুসলিম জনগোষ্ঠী: পরিসংখ্যান ব্যুরো

নিউজ নাইন, ডেস্ক: বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বলছে এক বছরের ব্যবধানে দেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বী ১৫ লাখ বেড়ে গেছে। বিবিএস-এর হিসেব অনুযায়ী ২০১৫ সালে হিন্দু ধর্মাবলম্বী ছিল দেশের মোট জনসংখ্যার ১০ দশমিক ৭ শতাংশ।

আগের বছর এর হার ছিল ৯ দশমিক ৯ শতাংশ। বিবিএস এর ২০১৫ সালের স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে।

বিবিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৫ সাল নাগাদ দেশের মোট জনসংখ্যা ১৫ কোটি ৮৯ লাখ।
সেই হিসাবে, হিন্দু ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা ১ কোটি ৭০ লাখ। বিবিএসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৪ সালে দেশের জনসংখ্যা ছিল ১৫ কোটি ৬৮ লাখ।

এ হিসাব ধরে তখন হিন্দু ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৫৫ লাখ। এর মানে, ১ বছরের ব্যবধানে হিন্দু জনগোষ্ঠী বেড়েছে ১৫ লাখ। তবে এই বর্ধিত সংখ্যক হিন্দু জনগোষ্ঠী বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত, না কি পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে এসে নাগরিকত্ব নিয়েছে সে তথ্য দেয়া হয়নি।

এর আগে বাংলাদেশে সরকারি আদমশুমারি অনুযায়ী বলা হচ্ছিল হিন্দু জনসংখ্যা প্রতি বছরই কমছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠনও এতদিন দাবি করে আসছে, সংখ্যালঘু নির্যাতনের ফলে দেশে হিন্দুর সংখ্যা অনেক কমে গেছে। বলা হচ্ছে, বাংলাদেশে ধর্মীয় বৈষম্য এবং নির্যাতনের মুখে এদের বেশিরভাগই ভারতে চলে যাচ্ছেন।

এর আগে বিবিসি বাংলার একটি প্রতিবেদনে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতা কাজল দেবনাথ বলেছিলেন, বাংলাদেশে হিন্দু জনসংখ্যার হার কমছে।

“১৯৫১ সালে যে আদমশুমারি ছিল তাতে হিন্দু জনসংখ্যা ছিল ২২ শতাংশ। ১৯৭৪ সালের আদমশুমারিতে এটা নেমে আসলো ১৪ শতাংশে। আর সর্বশেষ ২০১১ সালের আদমশুমারিতে এটা নেমে এসেছে ৮ দশমিক ৪ শতাংশে।” বলছিলেন মি. দেবনাথ।

সম্প্রতি প্রকাশ করা এই প্রতিবেদেনে বিবিএস বলছে এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে খ্রিষ্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যাও। হিসাবে, মোট জনসংখ্যার ১ দশমিক ১ শতাংশ খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মাবলম্বী। ২০১৪ সালে এ হার ছিল দশমিক ৯ শতাংশ।

বিবিএস স্যাম্পল ভাইট্যাল স্ট্যাটেসটিকস-এর মাধ্যমে প্রতিবছর জন্ম, মৃত্যু, আয়ুষ্কাল, বিয়েসহ বিভিন্ন বিষয় পর্যবেক্ষণ করে থাকে।

এ দিকে ২০০৯ সালের হিসাব অনুযাযী গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের প্রস্তুতকৃত তথ্য-উপাত্ত মোতাবেক ২০০৯ সালেই বাংলাদেশে অবস্থানকারী অবৈধ ভারতীয়দের সংখ্যা ছিলো প্রায় ৫ লক্ষ, যে সব ভারতীয়রা বাংলাদেশের বিভিন্ন এনজিও, গার্মেন্টস, টেক্সটাইল, আইটি প্রতিষ্ঠানসহ বিবিধ সংস্থায় অবৈধভাবে কাজ করে হুন্ডির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে ভারতে টাকা পাচার করে চলেছে। এদের বেশিরভাগই ট্যুরিস্ট ভিসার মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রবেশ করে, কিন্তু ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও ভারতে ফিরে না গিয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করে যাচ্ছে।

প্রাপ্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মিজোরাম রাজ্যসমূহ থেকে লক্ষ লক্ষ ভারতীয় অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করে উন্নত জীবন ও জীবিকার খোঁজে বাংলাদেশের বিভিন্ন শহর এবং গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে, কেননা উল্লেখিত ভারতীয় রাজ্যসমূহ অপেক্ষাকৃত অত্যন্ত অনুন্নত ও দারিদ্রপীড়িত।

সম্প্রতি ভারতের ইন্ডিয়া টাইমস, ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসহ বেশ কিছু প্রথম সারির সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে, ভারতে ৫টি কুলির পদের জন্য আবেদন করেছে ৫ MPhil, ২৫৩ MA ও ১০ হাজার গ্র্যাজুয়েটেরও বেশি চাকরিপ্রার্থী। এ চিত্র থেকে স্পষ্টভাবেই বাংলাদেশে গণহারে হিন্দু প্রবেশের কারণ অনুমান করা যাচ্ছে।

আরেক হিসাব থেকে দেখায় যায়, বাংলাদেশে পোশাকশিল্পে কর্মরত ২৬ হাজার বিদেশী নাগরিকদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশই হচ্ছে ভারতীয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে ওয়ার্কপারমিট নিয়ে গার্মেন্টস, বায়িং হাউস, ফ্যাশন হাউস, এয়ারলাইন্স ও বিভিন্ন বিপণন প্রতিষ্ঠানে লক্ষাধিক ভারতীয় কাজ করছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। বৈধ কাগজপত্র না থাকায় এদের আয়ের সঠিক হিসাব নেই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে। ফলে মোটা অঙ্কের বেতন-ভাতা পেলেও রাজস্ব দিতে হয় না এসব অবৈধ বিদেশীর। এর ফলশ্রুতিতে দেশ থেকে পাচার করা হচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থ।
সূত্রমতে, ভারতীয় নাগরিকের বেশিরভাগই এদেশে ‘ট্যুরিস্ট ভিসায়’ এসে আর ফেরত যাচ্ছেন না। কাজের ক্ষেত্র খুঁজে নিয়ে থেকে যাচ্ছে বাংলাদেশেই।

এদিকে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গার ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে ভুয়া নাগরিকরা পুলিশে নিয়োগ হচ্ছে গণহারে । যাদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে তাদের কাউকেই চিনেন না সেই সব এলাকার স্থানীয় লোকজন। চেনেন না, স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, এলাকার বয়স্করা লোকজন ।