গুজরাটে মুসলিম বিরোধী দাঙ্গায় অভিযুক্তরা সবাই হিন্দু
ডেস্ক: ভারতের একটি বিশেষ আদালত গুজরাট দাঙ্গায় জড়িত থাকার অভিযোগে ২৪জনকে অভিযুক্ত করেছে। অভিযুক্তরা সবাই হিন্দু। আহমেদাবাদ শহরে গুলবার্গ সোসাইটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় একই সাথে আদালত ৩৬ জনকে খালাস দিয়েছে।
নিহতদের অন্যতম হলো সে সময়কার কংগ্রেস দলের এমপি এহসান জাফরি। তার বিধবা স্ত্রী জাকিয়া জাফরি এ রায়ে হতাশা প্রকাশ করে একে ‘আমার কাছে অর্ধেক ন্যায়বিচার’ বলে মন্তব্য করেছেন।
২০০২ সালে মুসলিম বিরোধী ওই দাঙ্গার সময় গুলবার্গ সোসাইটি কমপ্লেক্সে আক্রমণের পর কুপিয়ে ও আগুনে পুড়িয়ে অন্তত ৬৯ জনকে হত্যা করা হয়েছিলো। গুজরাট দাঙ্গা ছিল স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ দাঙ্গার ঘটনা।
ওই দাঙ্গায় প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ নিহত হয়েছিলো যার বেশিরভাগই ছিল মুসলিম। একটি ট্রেনে আগুনে ৬০ জন হিন্দু তীর্থযাত্রীর প্রাণহানিকে কেন্দ্র করে দাঙ্গার সূচনা হয়। ট্রেনে আগুন দেয়ার জন্যে তখন মুসলিমদের দায়ী করা হচ্ছিলো।
এরপর মুসলিমদের বাড়িঘরে হামলা শুরু হয়। ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। সে ঘটনার সময় তিনি নিরব ভূমিকা পালন করেছেন বলে অভিযোগও রয়েছে। সূত্র: বিবিসি, নিউইয়র্ক টাইমস
উল্লেখ্য, ভারতের গুজরাট রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০০২ সালের মুসলিমবিরোধী ভয়াবহ দাঙ্গার সময় দাঙ্গাবাজ হিন্দুদের না ঠেকাতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে পদস্থ এক পুলিশ কর্মকর্তা সঞ্জিব ভাট ভারতের সুপ্রিমকোর্টে দেয়া এফিডেভিটে উল্লেখ করেছেন। সঞ্জিব ভাট সুপ্রিমকোর্টে দাঙ্গা সম্পর্কিত মামলায় এ এফিডেভিট দেন।
সঞ্জিব ভাট বলেন, ২০০২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি গোধরা দাঙ্গার পর নরেন্দ্র মোদি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকে হিন্দুরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে যেন তাদের ক্ষোভ মেটাতে পারে, পুলিশকে সে সুযোগ করে দেয়ার নির্দেশ দেন। ভাট এক্ষেত্রে নরেন্দ্র মোদির নির্দেশ সরাসরি তুলে ধরেন, যাতে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, মুসলমানরা যাতে আবার ট্রেনে আগুন দেয়ার মতো ঘটনা ঘটাতে না পারে, সেজন্য তাদের উচিত শিক্ষা দেয়ার এটি মোক্ষম সময়।
গুজরাটের গোধরা স্টেশনে একটি ট্রেনে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় অর্ধশতাধিক হিন্দু নিহত হওয়ার পর মুসলিমবিরোধী দাঙ্গা শুরু করা হয়েছিল। গোধরার ট্রেনে আগুন লাগানোর জন্য মুসলমানদের দায়ী করা হলেও পরবর্তী সময়ে তদন্তে দেখা গেছে, উগ্র হিন্দুরাই মুসলিমবিরোধী দাঙ্গা বাধানোর উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে ট্রেনটিতে আগুন দিয়েছিল।
গুজরাট রাজ্যে ২০০২ সালে মুসলিম বিরোধী দাঙ্গায় ২ হাজার মুসলিম নিহত হয়েছে বলে প্রচারিত হলেও ভারতের বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী ওই দাঙ্গায় ৫ হাজার মুসলমান হত্যার তথ্য প্রকাশ হয়।
দাঙ্গার সময় মুসলিম মহিলারা পুলিশের কাছে তাদের ইজ্জত রক্ষার আবেদন জানালে পুলিশ বলেছিল, ‘তোমাদেরকে তো শেষমেষ মেরেই ফেলবে। তার আগে ইজ্জত থাকলো কি চলে গেল তাতে কি’।
এমনকি তলোয়ার হাতে দাঙ্গাকারীরা গর্ভবতী মুসলিম নারীদের পেট ফেঁড়ে ভ্রুণ বের করে তা তরবারি’র আগায় বিদ্ধ করে নারকীয় উল্লাস প্রকাশ করেছে বলেও সে সময় গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছিল।
এর আগে ২০১৪ সালে সেপ্টেম্বর মাসে গুজরাট দাঙ্গা নিয়ে ওঠা অভিযোগের ওপর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি সমন জারি হয় নিউইয়র্কের একটি আদালত। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালে রাজ্যটিতে সংঘটিত মুসলিমবিরোধী ভয়াবহ দাঙ্গা থামাতে ব্যর্থহয়েছিলেন তিনি—এমন অভিযোগে এর আগে আদালতে একটি মামলা করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতেই এই সমন জারি করা হয়। খবর রয়টার্স ও বিবিসির।