আদালত প্রাঙ্গনে গ্রীক মূর্তি স্থাপন সরকার বিরোধী গভীর চক্রান্ত : ওলামা লীগ

ঢাকা: সুপ্রিমকোর্টের সামনে গ্রীক মূর্তি স্থাপন সংবিধানের ২ (ক), ১২ এবং ২৩ অনুচ্ছেদের সম্পূর্ণ বিরোধী। এটা সরকারের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র। সরকারের বিরোধী আন্দোলনের সুযোগ করে দিতেই এ ষড়যন্ত্র। অবিলম্বে এটা অপসারণ করতে হবে। আজ শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক বিশাল মানববন্ধনে বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগের নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন।

বক্তারা বলেন, সুপ্রিমকোর্টের ৩০১ জন বিশিষ্ট আইনজীবিও গ্রীক মূর্তি অপসারনের জন্য আহবান জানিয়েছেন। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল বাসেত মজুমদারও বলেছেন প্রধান বিচারপতি সুপ্রিমকোর্টে মূর্তি স্থাপন নিয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করেননি।’ অন্যান্য আইনজীবীরাও বলেছেন, এই ভাস্কর্য নিয়ে আইনজীবী এবং সাধারণ মানুষের আপত্তি রয়েছে।

বক্তারা আরো বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সরকারকে বিব্রত করতে, অস্থিতিশীল করতে এবং বিএনপি-জামাতকে খুশী করতে কৌশলে কাজ করা হচ্ছে। অথচ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে বিচার বিভাগ যে স্বাধীনতা ভোগ করছে তা নজীরবিহীন। তা না হলে তার সরকারের আমলে তার সরকারের দুইজন মন্ত্রীকে কখনোই শাস্তি দেয়া যেতো না। বিরোধীদলীয় নেতা কর্মীরাও কোন জামিন পেতো না। একই ধারাবাহিকতায় সরকারকে অস্থিতিশীল ও বিব্রত করতেই বিএনপি জামায়াতের গোপন এজেন্ডা বাস্তবায়নে সুপ্রিম কোর্টের সামনে গ্রীক দেবীর মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। যাতে সরকার বিরোধী আন্দোলনের সুযোগ তৈরী হয়।

বিএনপির রুহুল কবির রিজভীর বক্তব্যে প্রধান বিচারপতির বিএনপি কানেকশন এবং সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন মানিকের বক্তব্যে যুদ্ধাপরাধী জামাত কানেকশন রয়েছে বলে একটি মহল প্রচারণা করছে। তারা প্রশ্ন তুলেছে বিএনপি জামাত কানেকশন থাকাতে বিএনপি-জামায়াতের মদদেই কি সরকার বিরোধী আন্দোলনের ইস্যু তৈরী করতে সুপ্রিমকোর্টের সামনে গ্রীক মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে? তাদের যুক্তি সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন মানিক বলেছে- “প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা আত্মস্বীকৃত শান্তি কমিটির সদস্য, স্বাধীনতাবিরোধী এবং রাজাকার’। এজন্য তার বিরুদ্ধে লিগ্যাল নোটিশও করা হয়েছে।

বক্তারা বলেন, এরুপ বক্তব্য দ্বারা বুঝা যায় মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সরকারকে বিব্রত করতে, অস্থিতিশীল করতে এবং বিএনপি-জামাতকে খুশী করতে কৌশলে কাজ করা হচ্ছে। অথচ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে বিচার বিভাগ যে স্বাধীনতা ভোগ করছে তা নজীরবিহীন। তা না হলে তার সরকারের আমলে তার সরকারের দুইজন মন্ত্রীকে কখনোই শাস্তি দেয়া যেতো না। বিরোধীদলীয় নেতা কর্মীরাও কোন জামিন পেতো না।

পহেলা বৈশাখ উদযাপন প্রসঙ্গে বক্তারা বলেন, ইউনেস্কো কর্তৃক ঘোষিত মঙ্গল শোভাযাত্রার ব্যাপক প্রচারণা দিয়ে বর্তমান সরকারকে হিন্দুত্ববাদী বলে প্রচার করার ষড়যন্ত্র চলছে। পাশাপাশি পহেলা বৈশাখ পালন করলে মুসলমানিত্ব যায় না- ইনুর এ ফতওয়া ইসলাম ধর্ম ও মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনেছে। কারণ ইসলামে বাংলা ইংরেজী আরবী সব নববর্ষ পালনই হারাম। ধর্মপ্রাণদেরকে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ করার- স্বাধীনতা পরবর্তী জাসদীয় ষড়যন্ত্র নতুন করে বাস্তবায়ন হচ্ছে। পাশাপাশি পহেলা বৈশাখ এর নামে বোনাস না দিয়ে পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানার্থে বোনাস দিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানের ভোট নৌকায় উঠাতে হবে। উল্লেখ্য মাতৃভাষা বাংলা মুসলমানদের ঈমানের অঙ্গ। কিন্তু মাতৃভাষা দিবসে ইউনেস্কোর ভিডিওতে বাংলাভাষাকে জায়গা দেয়া হয়নি। অথচ ইউনেস্কো হিন্দুদের আচার অনুষ্ঠান মঙ্গল শোভাযাত্রাকে বাংলাদেশের সংস্কৃতি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

বক্তারা বলেন, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছে, ‘পহেলা বৈশাখ ও চৈত্র সংক্রান্তির সাথে ইসলামের কোন বিরোধ নেই। এগুলো পালনে মুসলমানিত্ব যায় না।’ বক্তারা বলেন, ইনু বামপন্থী। এদেশের গণতন্ত্র নস্যাৎ করে সমাজতন্ত্র কায়েমই তার মূল উদ্দেশ্য।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কাঁধে ভর করে সে তার ঘৃণ্য উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে চায়। গণতান্ত্রিক সরকারের মন্ত্রী হয়েও সে সমাজতন্ত্র বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পত্রিকায় কলাম-আর্টিকেল লিখে যাচ্ছে। তার  সমাজতন্ত্রে ধর্ম হলো আফিমের মতো। তার মত ধর্মজ্ঞানহীন শক্তি ইসলামী বিষয়ে ফতোয়া দেয় কিভাবে?

 সে তো জানেনা যে, ইসলামে কোন ধরণের নববর্ষ পালন জায়েয নাই। নববর্ষ তথা পহেলা বৈশাখ পালনের উৎসব বিধর্মীদের থেকে। নুরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হিজরতের পর পবিত্র মদীনা শরীফ গিয়ে ঐ এলাকাবাসীর দুটি উৎসব বন্ধ করেছিলেন। একটি হচ্ছে, বছরের প্রথম দিন উদযাপন বা নওরোজ; অন্যটির নাম ছিলো ‘মিহিরজান’। এ উৎসব দুটির বিপরীতে চালু হয় মুসলমানদের দুই ঈদ। (তাফসিরসমূহ দেখতে পারেন) মূলত: নওরোজ বা বছরের প্রথম দিন পালন করার রীতি ইসলামে নেই, এটা পার্সী মজুসীদের (অগ্নিউপাসক) অুনকরণ।

রাষ্ট্রধর্ম নিয়ে উচ্চ আদালতে রিট প্রসঙ্গে বক্তারা বলেন, রাষ্ট্রধর্ম নিয়ে হাইকোর্টের রায় উচ্চ আদালতেও বহাল রাখতে হবে। সরকার বিরোধী, গয়েশ্বর মার্কা উগ্র মৌলবাদী হিন্দুদের চক্রান্তে রাষ্ট্রধর্ম বাতিল করে জামাত-জোট, হেফাযতের হাতে সরকার বিরোধী ইস্যু তুলে দেয়া যাবে না। রাষ্ট্রধর্ম বাতিলের সিদ্ধান্ত ৯৮ ভাগ জনগোষ্ঠী মুসলমান কখনো মেনে নিবেনা।

বক্তারা বলেন, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহালে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম তুলে দিতে আবারো হাইকোর্টে আপিল করেছে গয়েশ্বর মার্কা মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক হিন্দুরা। সংবিধানের ২ (ক) অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বৈধ বলে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিলের শুনানির কথা ছিল ১৯শে মার্চ কিন্তু এখন পূর্বঘোষণা ছাড়াই যে কোন দিন তা হতে পারে।

মানবন্ধনে বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগের সভাপতি আলহাজ্জ মাওলানা মুহম্মদ আখতার হুসাইন বুখারী, আলহাজ্জ কাজী মাওলানা মুহম্মদ আবুল হাসান শেখ শরীয়তপুরী, আলহাজ্জ হাফেজ মাওলানা মুহম্মদ আব্দুস সাত্তার, মাওলানা মুহম্মদ শওকত আলী শেখ ছিলিমপুরী, মাওলানা মুজিবুর রহমান চিশতি, হাফেজ মাওলানা মোস্তফা চৌধুরী বাগেরহাটি হুযূর প্রমুখ।