কৃষকের ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতে অর্থনৈতিক সহযোগিতার প্রকল্প গ্রহণ

ঢাকা: প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকদের ফসলের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে একটি প্রকল্প নিয়েছে সরকার।
ফসল ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই কৃষক যাতে তা বিক্রি করতে বাধ্য না হন সেজন্য অর্থনৈতিক সহযোগিতার মাধ্যমে তাদের সামর্থ্য উন্নয়নে কাজ করা হবে এ প্রকল্পে।
‘প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকদের শস্য সংগ্রহ পরবর্তী সহযোগিতার মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণ’ শিরোনামের এই প্রকল্প মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়।

বৈঠক পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, এ প্রকল্পের আওতায় নির্বাচিত প্রান্তিক কৃষকদের শস্য সংগ্রহ পরবর্তী সময়ে মাত্র ৭ শতাংশ সুদে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা করে ঋণ দেওয়া হবে। একইসঙ্গে তাদের শস্য উৎপাদন, মৎস্য চাষ, হাঁস-মুরগি পালন ও অন্যান্য আয়বর্ধক কর্মকাণ্ডের ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
আয় বর্ধক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে উপার্জন বাড়িয়ে তাদের কাছ থেকে সাপ্তাহিক বা মাসিক কিস্তির ভিত্তিতে ঋণ আদায় করা হবে। একইসঙ্গে ওই সব কৃষককে ক্ষুদ্র সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করা হবে।

প্রকল্পটির মাধ্যমে ৬০০ গ্রামভিত্তিক সংগঠন করে প্রাথমিকভাবে ১৫ হাজার প্রান্তিক কৃষককে এ সুবিধা দেওয়া হবে বলে মন্ত্রী জানান।
প্রকল্পের জন্য ৭৪ কোটি ২৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, নয় জেলার ৫০টি উপজেলা থেকে এসব কৃষককে বাছাই করা হবে।

প্রকল্পের উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, “প্রান্তিক কৃষকরা উৎপাদিত ফসল পাওয়ার সাথে সাথে বিক্রি না করে মজুদ করবে। ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করার মতো তাদের সামর্থ্যবান করে তোলা হবে।”

পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেক সভায় এ প্রকল্পসহ এক হাজার ৮১৭ কোটির ব্যয়ের ছয়টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়।
এসব প্রকল্পে সরকারি তহবিল থেকে ১ হাজার ৮০২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ১৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা যোগান দেওয়া হবে।

মন্ত্রী জানান, অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পগুলোর মধ্যে ডিএনডি (ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ- ডেমরা) এলাকার পানি নিষ্কাশন প্রকল্প রয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৫৮ কোটি ২০ লাখ টাকা।
“এ এলাকায় প্রায় ২০ লাখ মানুষ বসবাস করেন। দীর্ঘদিন ধরে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে তারা উপকৃত হবেন।”

এই প্রকল্পের আওতায় ডিএনডি এলাকায় নতুন পাম্পসহ পাম্প স্টেশন ও পাম্পিং প্লান্ট স্থাপন, বর্তমান পাম্প স্টেশন পুনর্বাসন, সেচ খাল নিষ্কাশন, খাল পুনঃখনন এবং ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মাণের মাধ্যমে নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হবে। এছাড়া এলাকার জনগণের স্বাভাবিক জীবনমান নিশ্চিত অর্থাৎ আর্থ-সামাজিক ও পরিবেশগত মান উন্নয়ন এবং প্রকল্প এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করা হবে।

অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যগুলো হলো-৬২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ফরিদপুর জেলার পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প। ২৮০ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম জেলার উপকূলীয় পতেঙ্গা, আনোয়ারা ও পটিয়ায় পুনর্বাসন প্রকল্প।
১৭৬ কোটি ৬০ লাখ টাকার ভোমরা স্থলবন্দর সংযোগসহ সাতক্ষীরা শহর বাইপাস সড়ক নির্মাণ প্রকল্প।

এবং ফেনী জেলার সোনাগাজীতে ১০০ মেগাওয়াট সৌর ও ১০০ মেগাওয়াট বায়ুচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্যে ভূমি অধিগ্রহণ। এর জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১০২ কোটি ৯২ লাখ টাকা।