অনলাইনে ‘দাওয়াতে তবলিগ’ যেভাবে সন্ত্রাসবাদে লোক সংগ্রহ করে
আবুল বাশার: ৩ জুলাই (২০১৫) বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার একটি খবরে এসেছিলো ঢাকার সদরঘাট, বিমানবন্দর রেলস্টেশন ও মিরপুর এলাকা থেকে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন একিউআইএসের বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারীসহ ১২ জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৪ এর সদস্যরা।
এ উপলক্ষে কুর্মিটোলায় র্যাব সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান কিছু লোম হর্ষক তথ্য জানান।
মুফতি মাহমুদ খান জানান, মালানা মুফতি মাইনুদ্দিন ওরফে আবুল জান্দাল ব্রিটিশ হাইকমিশনারের ওপর হামলা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। তিনি জেলহাজতে থেকে মোবাইল ও চিঠির মাধ্যমে জেলের বাইরে আত্মগোপনে থাকা নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং ‘দাওয়াতে তবলিগ’ এবং ‘৩১৩ বদরের সৈনিক’ নামক সংগঠনের আত্মপ্রকাশের চেষ্টা চালায়। তিন স্তরে কাজও শুরু করেছে দাওয়াতে তবলিগ। তারা ঢাকার বাইরে ট্রেনিং ক্যাম্প গড়ে তোলার পরিকল্পনাও করে। এ জন্য বগুড়ায় একটি মাদ্রাসার মাঠও নির্ধারণ করেছিল। ওই ট্রেনিং পরিচালনার জন্য তাদের বিশেষ প্রশিক্ষণ বই নির্দেশিকা জব্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে ছিল ‘একটি বোমা তৈরি কর-তোমার মায়ের রান্না ঘরে’, ‘কীভাবে ক্রিয়া-বিক্রিয়া ঘটিয়ে বিস্ফোরক বানাতে হয়’, ‘তথ্য সুরক্ষায় একজন মুজাহিদের পাথেয়’, ‘নিরাপত্তা ও ইন্টেলিজেন্স বিষয়ক কোর্স’, ‘একে-এর মাধ্যমে প্রশিক্ষণ (২য় পর্ব)’, ‘নীরবে হত্যার কৌশল’, ‘এয়ার-লানচেড গাইডেড মিসাইল এন্ড গাইডেড মিসাইল লাঞ্চার’, ‘বালাকোট মিডিয়া’, ‘যারা মিডিয়ার মাঠে তাদের জন্য একটি বার্তা’ এবং ‘শতাব্দীর আন্দামানা হতে বলছি’সহ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসবাদে উস্কানিমূলক বই ও ভিডিওচিত্র।
ইতিপূর্বে হরকাতুল জিহাদ আল বাংলাদেশ (হুজিবি) সংগঠনটি যে প্রক্রিয়ায় তাদের কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল বর্তমান বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা তৎপরতার কারণে তা প্রায় নিষ্ক্রিয়। সংগঠনটি পূর্বের কার্যক্রমে নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়ায় নতুন পন্থায় দাঁড়ানোর লক্ষ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টুইটার, ভাইবার ও হটসএ্যাপস-এর মাধ্যমে তাদের দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করে। উদ্দেশ্য ছিল দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করে তাদের সাথীভাই সংগ্রহ করা।
দাওয়াতে তাবলিগে মূলত তিন ধাপে লোক নিয়োগ করা হতো। প্রথম ধাপ হলো দ্বীন কায়েমের সাথী। যারা প্রথমে তাদের ফেসবুকে ফ্রেন্ড হবে তারাই হবে দ্বীন কায়েমের সাথী। দ্বিতীয় ধাপ হচ্ছে বায়াতে ফি-ছাবিলিল্লাহ, এর অর্থ হচ্ছে যারা আল্লাহর পথে দাওয়াতি কার্যক্রমের চুক্তিবদ্ধ বা অঙ্গীকারবদ্ধ হবে তারাই বায়াতে ফি-ছাবিলিল্লাহর সঙ্গে সংযুক্ত হবে। তৃতীয় ধাপ হচ্ছে শহীদি কাফেলা, যাদের ইমান শক্ত এবং জিহাদে শহীদ হওয়ার জন্য প্রস্তুত তারাই শহীদি কাফেলায় অন্তর্ভুক্ত। তাদের সংগঠনের মূল উদ্দেশ্য ছিল ‘আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য সশস্ত্র কিতাল (যুদ্ধ) করার জন্য যতটুক সম্ভব ততটুকু চেষ্টা করা।’ মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ৩১৩ বদরের সৈনিক সংগঠনটির অর্থদাতা সৌদি আরব ও দুবাই থেকে ফিদাই মাওলা নামে ফেসবুক ব্যবহারকারী রফিক নামে এক ব্যক্তি। জাফর আমিন এই টাকা সংগঠনের কাছে পৌঁছে দিতেন।