সংকুচিত হচ্ছে সাধারণ ব্যাংকের ‘ইসলামি শাখা’র কার্যক্রম

ঢাকা: দেশে সাধারণ ব্যাংকের ইসলামি শাখার কার্যক্রম ধীরে ধীরে সংকুচিত হচ্ছে। গত বছর ৯ মাসের ব্যবধানে সাধারণ বা কনভেনশনালব্যাংক তিনটি ইসলামি শাখা বন্ধ করে দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক বছরেরের ব্যবধানে কনভেনশনাল ব্যাংকে ইসলামি শাখা বন্ধের হার ৫দশমিক ২৬ শতাংশ।

প্রসঙ্গত, দেশে বর্তমানে ২৫টি ব্যাংক ইসলামি ব্যাংকিং করছে। যার মধ্যে ৮টি পূর্ণাঙ্গ ইসলামি ব্যাংক এবং ১৭ বাণিজ্যিক ব্যাংক সাধারণ ব্যাংকিংয়ের পাশাপাশি ইসলামিব্যাংকিংও পরিচালনা করে। এর মধ্যে ২০১৬ সালের মার্চ মাসে ২১টি শাখায় ইসলামি ব্যাংকিং করতো ৯টি কনভেনশনাল ব্যাংক। গত ডিসেম্বরেএই ব্যাংকগুলোতে ইসলামি শাখার সংখ্যা নেমে আসে ১৮টিতে। অর্থাৎ ৯ মাসের ব্যবধানে ৩টি ইসলামি শাখা বন্ধ করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বলেছে, ‘যারা পুরোপুরি ইসলামি ব্যাংকিং করছে,তারা খারাপ করছে না। তবে কনভেনশনাল ব্যাংকগুলো মুনাফা করতে না পেরে ইসলামি শাখা গুটিয়ে নিচ্ছে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৯ মাসে কনভেনশনাল ব্যাংকের তিনটি ইসলামি শাখা বন্ধ হলেও পুর্ণাঙ্গ ইসলামি ব্যাংকগুলো শাখা বেড়েছে। গত এক বছরের ব্যবধানে ৮ ব্যাংকের শাখা বেড়েছে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এই ৮ ব্যাংকে মোট আমানত রয়েছে ১ লাখ ৭৮ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা। এছাড়া, একই সময় পর্যন্ত এইব্যাংকগুলো মোট বিনিয়োগ করেছে ১ লাখ ৬০ হাজার ৮৩১ কোটি টাকা। এই ৮ ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ৯ হাজার ৭৮ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত এক বছরে ইসলামি শাখায় কাজ করা ৬ দশমিক ১৮ শতাংশ ব্যাংক কর্মকর্তা চাকরি হারিয়েছেন। এক বছর আগে কনভেশনাল ব্যাংকের ইসলামি শাখায় কাজ করতেন ৪২১ জন। এখন সেখানে কাজ করেন ৩৯৫ জন। একবছরের ব্যবধানে এসব শাখা থেকে ২৬ জন কর্মকর্তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ইসলামি ব্যাংকগুলোতেও রেমিট্যান্স প্রবাহ মারাত্মকভাবে হ্রাস পেয়েছে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে ৯ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকার রেমিট্যান্স আসলেও ২০১৬ সালের ডিসেম্বর শেষে রেমিট্যান্স এসেছে ৯ হাজার ১৬৯ কোটি টাকার। এক বছরের ব্যবধানে ৬০৯ কোটি টাকার রেমিট্যান্স কমে গেছে। এরমধ্যে কনভেশনাল ব্যাংকের ইসলামি শাখায় কমেছে ৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোতে মুনাফার প্রবৃদ্ধি ক্রমেই নেতিবাচক হচ্ছে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে এইব্যাংকগুলো নিট মুনাফা করেছিল ২ হাজার ৬২৪ কোটি টাকা। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর শেষে এই ব্যাংকগুলো মুনাফা করেছে ১ হাজার৬৬৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৯ মাসের ব্যবধানে মুনাফা কমেছে ৯৬০ কোটি টাকা।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘নানা কারণে কনভেনশনাল ব্যাংক নিজেরাই বিপদে আছে। রেমিট্যান্সের অবস্থাও ভালো নয়। এ কারণে কনভেনশনাল ব্যাংকের ইসলামি শাখাগুলো হয়ত গুটিয়ে নিতে হচ্ছে।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি ২৫টি ব্যাংক ১ হাজার ৯০টিশাখার মাধ্যমে ইসলামি ব্যাংকিং করছে। এরমধ্যে ৮টি ব্যাংক তাদের ১ হাজার ৪৭টি শাখার মাধ্যমে পুরোপুরি ইসলামি ব্যাংকিং করছে।এছাড়া ৯টি বাণিজ্যিক ব্যাংক সাধারণ ব্যাংকিংয়ের পাশাপাশি ১৮টি ইসলামি শাখা এবং ৮টি বাণিজ্যিক ব্যাংক সাধারণ ব্যাংকিংয়ের পাশাপাশি ২৫ ইসলামি উইন্ডোর মাধ্যমে ব্যাংকিং করছে। যদিও এসব ব্যাংক চলছে সুদভিত্তিক ব্যাংক ব্যবস্থার জন্য প্রণীত ব্যাংক কোম্পানি আইন দিয়েই।

বর্তমানে বাংলাদেশে যেসব ব্যাংক পূর্ণাঙ্গভাবে ইসলামি নামে কার্যক্রম চালাচ্ছে এগুলো হলো- ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, এক্সিম ব্যাংক লিমিটেড, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, ফার্স্টসিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেড ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক লিমিটেড।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ইসলামি শাখাগুলোতে মোট আমানত রয়েছে ১ লাখ ৮৭ হাজার৬৯৪ কোটি টাকা। এছাড়া, একই সময় পর্যন্ত মোট বিনিয়োগ করেছে ১ লাখ ৬৮ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে পুরো ব্যাংক খাতে অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ইসলামি ব্যাংকগুলোতে অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে ১০ হাজার ৪১৫ কোটি টাকা।