মূলধনও খেয়ে ফেলেছে দেশের ৭ ব্যাংক

ঢাকা: সরকারি-বেসরকারি খাতের সাত ব্যাংকের আর্থিক ভিত্তির দুর্বলতা প্রকট হয়ে পড়েছে। এসব ব্যাংক ঋণের মান অনুযায়ী সঞ্চিতি রাখতে গিয়ে আর্থিক ব্যবস্থাপনায় পুরো হোঁচট খেয়েছে। ফলে ব্যাংকগুলো নিজের মূলধন তো হারিয়েছেই, উপরন্তু সাড়ে ১৬ হাজার কোটি টাকার ঘাটতিতে পড়েছে। ব্যবসার পরিবর্তে এসব ব্যাংক এখন মূলধন যোগান নিয়েই চিন্তিত। ব্যাংক সাতটি হলো সোনালী, রূপালী, বেসিক, কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন, বাংলাদেশ কমার্স ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক।

এছাড়া সরকারি-বেসরকারি ৬ ব্যাংক ঋণের মান অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। মুনাফার অংশ থেকে ব্যাংকগুলোকে সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হয়। ব্যাংকগুলো হলো সোনালী, রূপালী, বেসিক, বাংলাদেশ কমার্স, ন্যাশনাল ও প্রিমিয়ার।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মির্জ্জা এ.বি আজিজুল ইসলাম বলেন, ব্যাংকগুলোর খারাপ ঋণের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এজন্য অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা ঠিক করতে হবে। কাদের ঋণ দেয়া হচ্ছে, এসব সঠিকভাবে দেখতে হবে। যারা ঋণ পরিশোধ করছে না, তাদের বিরুদ্ধে যথাসময়ে আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে। আজিজুল ইসলাম বলেন, যেসব ঋণ নিয়ে মামলা রয়েছে, তা নিষ্পত্তির জন্য জোর পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রয়োজনে বাংলাদেশ ব্যাংক, অ্যাটর্নি জেনারেল ও প্রধান বিচারক নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করতে পারে।

জানা গেছে, ২০১৬ সাল থেকে ব্যাসেল-৩ নীতিমালা অনুযায়ী ব্যাংকগুলোকে ১০ শতাংশ ন্যূনতম মূলধনের পাশাপাশি দশমিক ৬২ শতাংশ হারে অতিরিক্ত মূলধন সংরক্ষণ (ক্যাপিটাল কনজারভেশন বাফার) করতে হয়। গত বছর শেষে ন্যূনতম মূলধন সংরক্ষণ করতে ব্যর্থ হয়েছে সাত ব্যাংক। এছাড়া ব্যাংক খাতে মূলধন সংরক্ষণের হার দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৮০ শতাংশ।

তথ্যমতে, ২০১৬ সাল শেষে সোনালী ব্যাংকের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা। এছাড়া বেসিক ব্যাংকে ঘাটতি হয়েছে ২ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা ও রূপালী ব্যাংকের ৭১৪ কোটি টাকা। এছাড়া বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ঘাটতি হয়েছে ৩৪৫ কোটি টাকা, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের ১ হাজার ৪৫১ কোটি টাকা। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৮৩ কোটি টাকা ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ঘাটতি ৭৪২ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে সাত ব্যাংকের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৪৯৩ কোটি টাকা।

এছাড়া দশমিক ৬২ শতাংশ হারে অতিরিক্ত মূলধন সংরক্ষণ (ক্যাপিটাল কনজারভেশন বাফার) সংরক্ষণ করতে পারেনি ১১ ব্যাংক। ব্যাংকগুলো হলো সোনালী, রূপালী, জনতা, অগ্রণী, বেসিক, কৃষি, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন, বাংলাদেশ কমার্স, আইসিবি ইসলামিক, ফারমার্স ও এবি ব্যাংক।

এদিকে অনিয়মের মাধ্যমে দেয়া ঋণ আদায় করতে না পেরে ৬ ব্যাংক ঋণের বিপরীতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। উপরন্তু ২০১৬ সাল শেষে ৬ ব্যাংকের নিরাপত্তা সঞ্চিতি ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৫৩৯ কোটি টাকা। এ সময়ে বেসিক ব্যাংকের ঘাটতি হয়েছে ৪ হাজার ৬৩ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংকের ঘাটতি ২৪১ কোটি টাকা, সোনালী ব্যাংকের ঘাটতি ১ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা। এছাড়া বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ঘাটতি ২৮৮ কোটি টাকা, ন্যাশনাল ব্যাংকের ১২৩ কোটি টাকা ও প্রিমিয়ার ব্যাংকের ৪৮ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, যাচাই-বাছাই না করে দেয়া ঋণ খেলাপি হয়ে পড়ছে। নিয়মবহির্ভূতভাবে দেয়া ঋণও আদায় করা যাচ্ছে না। ফলে এসব ঋণের বিপরীতে সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হচ্ছে ব্যাংকগুলোকে। মুনাফা না হওয়ায় অনেকে সঞ্চিতিও রাখতে পারেনি। এতেই টান পড়ছে মূলধনে।