হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতকালে

আল্লামা মুহম্মদ আল আমীন: আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত খিলাফত পরিচালনাকালে যে সকল কাজ ও বিভাগের সর্বপ্রথম সূচনাকারী হিসেবে চিরস্মরণীয়, যেগুলো উনার পূর্বে আর কেউ করেনি সেগুলোকে আউয়ালিয়াতে সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম বলা হয়। নিম্নে সংক্ষিপ্তভাবে সেগুলোর তালিকা দেয়া হলো।
১. বায়তুল মালের উদ্ভাবন।
২. বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠা ও কাযী মনোনয়ন।
৩. হিজরী সনের প্রচলন।
৪. ‘আমীরুল মু’মিনীন’ লক্বব মুবারক গ্রহণ।
৫. পৃথক সৈন্য বিভাগ স্থাপন।
৬. স্বেচ্ছাসেবক উনাদের ভাতা ধার্য করা।
৭. সম্মানিত খিলাফত মুবারক উনার কাজের সুবিধার জন্য দফতর বা সেকরেটারিয়েট স্থাপন করা।
৮. জরিপ প্রথার প্রচলন। (ভূমি জরিপ স্থাপন)
৯. আদমশুমারি তথা লোকগণনার রেওয়াজ দান।
১০. সেচ ও যোগাযোগের সুবিধার জন্য খনন বিভাগ স্থাপন।
১১. নতুন শহর প্রতিষ্ঠা করা।
১২. দেশকে প্রদেশে বিভক্ত করা।
১৩. উৎপন্ন ফসলের উশর রাজস্ব হিসেবে গ্রহণ। (তা শুধু সম্মানিত মুসলমান উনাদের থেকে গ্রহণ করা হতো।)
১৪. সমুদ্রে উৎপন্ন মৎস্য আম্বর ও মুক্তার উপর কর ধার্যকরণ।
১৫. অমুসলমান দেশের ব্যবসায়ীদিগকে ব্যবসা করার জন্য প্রবেশাধিকার দান।
১৬. জেলখানা স্থাপন।
১৭. শাস্তির জন্য চামড়ার দুররা ব্যবহার করা।
১৮. রাত্রিকালে ঘুরে জনসাধরণদের দুঃখ-দুর্দশা পর্যবেক্ষণ।
১৯. পুলিশ বিভাগ প্রতিষ্ঠা।
২০. ব্যারাক ও সেনানিবাস স্থাপন।
২১. ঘোড়ার বংশের উন্নতি সাধন। (প্রজনন পদ্ধতির সাহায্যে)
২২. মুহাররির (মোহরী) দরখাস্ত লিখক সাব্যস্তকরণ।
২৩. পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে পবিত্র মদীনা শরীফ যাওয়া পর্যন্ত রাস্তায় স্থানে স্থানে মুসাফিরদের (পথিকদের) সুবিধার্থে গৃহ নির্মাণ।
২৪. রাস্তায় পরিত্যক্ত শিশুদের পালনের জন্য ভাতার ব্যবস্থাকরণ।
২৫. বিভিন্ন শহরে ও নগরে অতিথিশালা স্থাপন।
২৬. আরবজাতির জন্য (ধর্ম নির্বিশেষে) দাসত্ব রহিতকরণ।
২৭. নিঃস্ব খ্রিস্টান ও ইহুদীদের জন্য তথা বির্ধমীদের জন্য ভাতা নির্ধারণ।
২৮. সর্বজাতির গোলামদের জন্য (গোলামদের স্ব উপার্জিত) অর্থের বিনিময়ে স্বাধীন হওয়ার ব্যবস্থাকরণ।
২৯. মুয়াল্লিম তথা তা’লীম-তালকীনদানকারী উনাদের জন্য ভাতা নির্ধারণ।
৩০. পবিত্র কুরআন শরীফ সঙ্কলন করে সকল প্রদেশে পাঠানোর ব্যবস্থাকরণ। এই কাজ সম্পূর্ণরূপে সম্পন্ন হয় হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সময়ে।
৩১. পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ দ্বারা ব্যবহার শাস্ত্র (ফিক্বহ) সংগঠন। এর মৌলিক সূত্রগুলি (উছূল) হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার দ্বারা উদ্ভূত হয়।
৩২. ফারায়েযে (সম্পত্তি বণ্টনে) ‘আউল’ নামীয় বিশেষ ধারার উদ্ভাবন।
৩৩. ফজরের আযানে اَلصَّلـٰوةُ خَيْرٌ مّـِنَ النَّوْمِ – ‘নামায ঘুম হতে শ্রেষ্ঠ’ এই কথা মুবারকখানা তিনি প্রবর্তন করেন।
৩৪. রমযান মাসে তারবীহ নামায উনার জামায়াত ক্বায়িম করা।
৩৫. এক সাথে তিন তালাককে (বাইন) বিচ্ছেদকারী তালাক সাব্যস্ত করা।
৩৬. শরাব বা মদ পানের জন্য আশি কোড়া (বেত্রাঘাত) শাস্তিরূপে ধার্য করা।
৩৭. তিজারত বা বাণিজ্যের ঘোড়ার উপর যাকাত আরোপ করা।
৩৮. ওয়াকফ প্রথার উদ্ভাবন।
৩৯. জানাযা উনার নামাযে চার তাকবীর উচ্চারণে সকলের এক হওয়া হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার চেষ্টার ফল।
৪০. মসজিদসমূহে ওয়ায তথা তা’লীম-তালকীন উনার ব্যবস্থা করা। হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার আদেশক্রমে সর্বপ্রথম হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি মসজিদে নববী শরীফ-এ ওয়াজ শরীফ করেন।
৪১. ইমাম ও মুয়াজ্জিন উনাদের বেতন ধার্যকরণ।
৪৩. মসজিদসমূহে রাত্রিকালে আলোর ব্যবস্থা করা।
৪৪. নিন্দাসূচক কবিতার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি এবং নিন্দাবাদী কবিদের শাস্তির ব্যবস্থা করা।
৪৫. প্রসংশামূলক, নিন্দাসূচক ও ভাবাবেগের কবিতায় মহিলাদের নাম প্রয়োগ নিষিদ্ধকরণ।
৪৬. এছাড়াও মুসলমান নারীদের জন্য অমুসলমান নারীদের সম্মুখে পর্দা করা ইত্যাদি বহু বিষয়। (কিতাবুল আওয়াইল, তারীখে ত্ববারী)

লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট