রমজান এলেই বাড়িয়ে দেয়া হয় পণ্যের দাম – ‘এটা মুসলমানদের উপর জুলুম’

ঢাকা: পবিত্র রমজান মাস এলেই কৌশলে বাড়িয়ে দেয়া হয় নিত্যপণ্যের দাম। প্রতি বছর সরকারের খই ফুটানো প্রতিশ্রুতি থাকলেও কোন বছরই তা কার্যকর হতে দেখা যায়নি। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। রমজানের শুরুতে রাজধানীর কারওয়ান বাজার, কাঁঠালবাগান বাজার ও হাতিরপুল বাজার আর এক সপ্তাহ পরে আবার সেই বাজারের মধ্যে দেখা যায় দামের পার্থক্য বেশ।

রমজানের ইফতারে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় ছোলা। এই ছোলার দাম রোজার শুরুতে ছিল ৮০ টাকা। এক সপ্তাহ পরে এই পণ্যের দাম হয় ৮৫ টাকা। একইভাবে চিনির দাম রোজার শুরুতে ৬৮ থেকে ৭০ টাকা হলেও এখন তা ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। এ বিষয়ে কারওয়ান বাজারের শাহ জালাল জেনারেল স্টোরের বিক্রেতা হৃদয় বলেন, ‘ছোলা আর চিনির দাম আমরা বাড়াইনি। এটি পাইকারি বাজারে বেড়েছে বলে আমাদের বেশি দামে বেঁচতে হচ্ছে।’

আর পাইকারি ব্যবসায়ীদের কথা, আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়েছে বলে তাঁদেরও বাড়াতে হয়েছে। কারওয়ান বাজারে জনতা স্টোরের পাইকারি বিক্রেতা আবুল খায়ের বলেন, ‘প্রতি বস্তা ছোলা ৩ হাজার ৯০০ টাকায় বিক্রি করছি। আমার লাভ সামান্য। বস্তাপ্রতি মাত্র ৫০ টাকা লাভ করছি। এ ছাড়া চিনিতেও লাভ কম।’ তাঁর দাবি, আন্তর্জাতিক বাজারে ছোলার দাম বেড়েছে। তাই তাঁদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। আর এ জন্যই তিনি বেশি দামে বিক্রি করছেন।

এদিকে রমজান উপলক্ষে সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) কম দামে নানা পণ্য বিক্রি করছে। সেখানে ৭০ টাকা কেজি দরে ছোলা আর ৫৫ টাকা দরে দেশি চিনি বিক্রি হচ্ছ।

নিত্যপণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ভারত থেকে আমদানি করা রসুনের দাম। রোজার শুরুতে এই রসুন প্রতি কেজি ২৮০ টাকা ছিল। এখন সেই রসুন প্রতি কেজি ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে দেশি রসুনের দাম অপরিবর্তিত। বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়।

কারওয়ান বাজারের রসুন বিক্রেতা মামুন বলেন, ‘পাইকারি বাজারে গেলে দোকানের মালিকেরা বলেন রসুনের আমদানি নাই, মাল কম আহে তাই দাম বেশি।’ তিনি বলেন, চার দিন আগে তিনি ১০ কেজি রসুন এনেছেন, বিক্রি করেছেন মাত্র ২ কেজি। বেশি দামের কারণে মানুষ রসুন কম কিনছেন বলে তাঁর মত। ইফতারে বেগুনির চাহিদা বেশি থাকায় রোজায় যেসব পণ্যের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে তার মধ্যে অন্যতম বেগুন। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৪০ টাকা থেকে বেড়ে ৬০-৭০ টাকা হয়েছে।

রোজার আগে কাঁচা মরিচ ছিল ৩০ টাকা কেজি, আর এখন তা ৪০ টাকা। শসা ছিল ২০ টাকা, এখন তা ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি। ধনেপাতা ছিল ১২০, এখন ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, লেবু এক হালির দাম ছিল ২০ টাকা। এখন তা ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

পণ্যের দাম বাড়ছে কেন জানতে চাইলে হাতিরপুল বাজারের বিক্রেতা আবুল হাসেম বলেন, ‘রোজায় এগুলোর চাহিদা বেশি থাকে। আর মাল কম আসে বইলাই দাম বেশি। এতে আমাগো করার কিছুই নাই।’ তাঁর দাবি, দাম বেশি বলে পণ্য বিক্রি হচ্ছে কম। এতে তাঁরাও বেশি লাভ করতে পারছেন না।

ইফতারের অন্যতম আরেক পণ্য হচ্ছে খেজুর। এই খেজুর রোজার আগে বিক্রি হয় সর্বনিম্ন ১১০ টাকায়। সেই খেজুর এখন ১২০ টাকা।
আজ সকালে কাঁঠালবাগান বাজারে বাজার করতে এসেছিলেন আফতাব চৌধুরি। তিনি বলেন, ‘পবিত্র রমজানে দ্রব্যমূল্য সহনীয় করা সরকারের নৈতিক দায়িত্ব, কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসে কখনো এর নজির দেখা যায়নি। এক্ষেত্রে সব সরকারই ব্যার্থ। রমজান আসলেই সব কিছুর দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়। এটাতো ঠিক না। এটা এদেশের মুসলমানদের উপর জুলুম।’