দুগ্ধ ঘাটতি মেটাতে ফরিদপুরকেন্দ্রিক হাব

দেশে মাথাপিছু তরল দুধের চাহিদা প্রায় ২৫০ মিলিলিটার হিসাবে পুরো দেশে বছরে দুধের চাহিদা ১৪.৬৯ মিলিয়ন টন। গরু, মহিষ ও ছাগল থেকে তা দিয়ে দেশের দুধের চাহিদা পূরণ হলেও নানা কারনে প্রচুর পরিমাণে গুঁড়ো দুধ আমদানি করা হয়ে থাকে।
নিজস্ব উৎপাদনে গুঁড়ো দুধ ও তরল দুধের উৎপাদন আরো বাড়াতে বড় পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে ফরিদপুরকে কেন্দ্র করে ওই অঞ্চলে একটি হাব’ (কেন্দ্রস্থল) গড়তে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে সরকার। বৃহত্তর ফরিদপুরের চরাঞ্চল এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় গবাদিপশুর জাত উন্নয়ন ও দুগ্ধের বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিতকরণ কারখানা স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে দেশের উৎপাদনেই দুধের পুরো চাহিদা মিটিয়ে রফতানী করা সম্ভব বলে মনে করছে সরকার।

এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, দেশে বর্তমানে তিন লাখ দুধেল গাভী রয়েছে। এসব গাভীর দুধ দিয়েই দেশের চাহিদা মেটানো সম্ভব। কিন্তু দুধ সংরক্ষণের অভাবে তা সম্ভব হয় না। ইউএইচটি (আল্ট্রা হাই টেম্পারেচার প্রসেসিং) মিল্ক প্ল্যান্ট স্থাপন করলে অনায়াসে ৫-৬ মাস দুধ সংরক্ষণ করা যাবে। এটা করলে বিদেশ থেকে দুধ আমদানি করা লাগবে না।
দেশীয় উৎপাদনে দুধের চাহিদা মেটাতে গৃহীত ৩৪৪ কোটি ১৯ লাখ টাকার প্রকল্পটি গত মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পেয়েছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এর আওতায় ফরিদপুর জেলা সদর উপজেলায় মূল দুগ্ধ কারখানা স্থাপন করা হবে। পাশাপাশি স্থাপন করা হবে দুগ্ধ শীতলীকরণ প্ল্যান্ট। এছাড়া ফরিদপুরকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জ, রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ, খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, মাগুরা, চুয়াডাঙ্গা ও নড়াইল জেলা নিয়ে গড়ে তোলা হবে গরুর দুধের হাব’ (কেন্দ্রস্থল)। এসব জেলার খামারিদের গাভী পালনে ঋণ দেবে সরকার।

ফরিদপুরে থাকবে বিশাল ইউএইচটি মিল্ক প্ল্যান্ট, অটোম্যাটিক আইসক্রিম প্ল্যান্ট, চকলেক ও ক্যান্ডি প্ল্যান্ট। আরও থাকবে পাস্তুরিত মিল্ক প্ল্যান্ট, ঘি, রসমালাই, মিষ্টিদই, লাবাং, বাটার, চিজ প্রোডাকশন সেকশন। স্থাপিত হবে ফ্লেডার্স মিল্ক প্রসেসিং প্ল্যান্ট, কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র, মাইক্রো-বাইয়োলজিক্যাল ল্যাবরেটরি, ডেইরি বায়োটেকনোলজিক্যাল ল্যাবরেটরিও মোবাইল ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরি।

কর্মকর্তারা বলছেন, ফরিদপুরে মোট ১৫টি দুগ্ধ শীতলীকরণ কেন্দ্র স্থাপিত হবে। তিন হাজার লোকের সমন্বয়ে ৬০টি সমবায় গঠন করে প্রত্যেক সমবায়ী কৃষককে দ্’ুটি করে বকনা বাছুর কেনার জন্য ১ লাখ ২০ হাজার টাকা ঋণ দেয়া হবে। একবছরে ৫ শতাংশ সার্ভিস চার্জসহ ৩৬ কিস্তিতে ঋণ আদায় করা হবে। এই পশু লালন-পালনে প্রয়োজনীয় ভবন ও শেডও নির্মাণ করা হবে।
ফরিদপুর জেলার ভৌগোলিক অবস্থান, যোগাযোগ ব্যবস্থা, গাভী পালন ও দুগ্ধ খামার স্থাপনের সুবিধা ও অনুকূল পরিবেশ বিবেচনা করে এলাকাটিকে হাব’ গড়ার জন্য নির্বাচন করা হয়েছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সূত্র জানায়, দেশে মোট গাভীর সংখ্যা ১ কোটি ১৬ লাখ। এরমধ্য থেকে সবসময় দুধ পাওয়া যায় তিন লাখ গাভী থেকে। চার হাজার কোটি টাকায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এবং অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড থেকে গুঁড়ো দুধ আমদানি করার কারণে গাভী পালনে খামারিরা আগ্রহ হারাচ্ছে।
দুধ আমদানি ঠেকিয়ে তরল দুধের উৎপাদন উৎসাহিত করতে প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামার) লুৎফর রহমান বলেন, দেশে দুধের কৃত্রিম ঘাটতির জন্য আসলে দায়ী গুঁড়ো দুধ আমদানি। প্রতিবছর প্রায় চার হাজার কোটি টাকার গুঁড়ো দুধ আমদানি করা হয়। এ কারণে তরল দুধের চাহিদা কম। গুঁড়ো দুধ আমদানি ঠেকাতে প্রকল্পটি ভালো ভূমিকা রাখবে। তরল দুধ পানের প্রবণতাও বাড়বে। তাহলে দেশীয় খামারিরাও উৎসাহ হারাবেন না, আমদানির কারণে বাইরে টাকাও যাবে না।