নিউজ ডেস্ক: পাবনার হাট-বাজারে শুক্রবার (১৯ মে) পেঁয়াজের সর্বোচ্চ দাম ছিল ২৮০০-২৯০০ টাকা মণ। এমন দামে কিছুটা লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিলেন চাষিরা। কিন্তু চাষিদের সেই আশায় ‘গুড়েবালি’। কারণ একদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম প্রতি মণে গড়ে ৫০০ টাকা কমে গেছে।

শনিবার (২০ মে) দেশের বৃহৎ পেঁয়াজের হাট বনগ্রামে সবচেয়ে ভালোমানের প্রতি মণ পেঁয়াজ ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে ফাটা পেঁয়াজ আরও কম দামে বিক্রি হচ্ছে। চাষিরা বলছেন, বাণিজ্যমন্ত্রী পেঁয়াজ আমদানির ঘোষণা দেওয়ায় দরপতন শুরু হয়েছে।

শনিবার সরেজমিনে পাবনার বনগ্রাম হাটে গিয়ে দেখা যায়, হাটভর্তি পেঁয়াজ। তবে বাজারে সরবরাহের তুলনায় চাহিদা কম। ব্যাপারীরা বেশি দামে পেঁয়াজ কিনতে উৎসাহী নন। শুক্রবার পাবনার অন্যতম বড় পেঁয়াজের হাট চিনাখড়ায় যে পেঁয়াজ ২ হাজার ৭০০ টাকা মণ বিক্রি হয়েছে; সেই মানের পেঁয়াজ শনিবার বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ২০০-২ হাজার ৩০০ টাকায়। ২ হাজার ৮০০-২ হাজার ৯০০ টাকা মণের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৪০০ টাকায়।

অনেক চাষিই বলছেন, এক রাতের ব্যবধানে দাম এত টাকা কমবে তা তারা ভাবতেও পারেননি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছর মে মাসের প্রথম সপ্তাহে ভালো পেঁয়াজের দাম ছিল ১ হাজার ৪০০-১ হাজার ৫০০ টাকা মণ। দ্বিতীয় সপ্তাহে এসে দাম কমে হয় ১ হাজার ১০০-১ হাজার ২০০ টাকা।

চাষিদের দেওয়া তথ্যমতে, গত বছর মণপ্রতি তাদের খরচ ছিল এক হাজার টাকার বেশি। তার ওপর পেঁয়াজ ঘরে রাখলে ওজনে কমে যায়, পচে যায়। তাই তারা গত বছর লাভবান হতে পারেননি।

তারা বলছেন, এবছর দাম বেশি হলেও ফলন হয়েছে গত বছরের অর্ধেক। সে হিসাবে তাদের উৎপাদন খরচ দ্বিগুণ হয়ে গেছে। মৌসুমের কিছুদিন পর এসে দাম বাড়ায় তারা লাভের আশা করছিলেন। কিন্তু বাণিজ্যমন্ত্রীর আমদানির ঘোষণা তাদের আশায় গুড়েবালি দিয়েছে।

সাঁথিয়া উপজেলার বামনডাঙ্গা গ্রামের চাষি সাগর হোসেন বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুশি শুক্রবার সকালে সাংবাদিকদের বলেন, পেঁয়াজের দাম দু-একদিনের মধ্যে না কমলে আমদানি করা হবে। তার এক ঘোষণায়ই পেঁয়াজের দামের বারটা বেজে গেছে।

চাষিরা দু-একটি ফসলে লাভবান না হলে টিকে থাকবে কীভাবে, মন্ত্রী তা ভাবেননি বলেও অভিযোগ করেন ওই কৃষক।

পাবনা সদর উপজেলার শুকচর গ্রামের শুকুর আলী বলেন, শুক্রবার পেঁয়াজের মণ ছিল ২ হাজার ৮০০- ২ হাজার ৯০০ টাকা মণ। একদিনের মধ্যে পেঁয়াজের দাম কমে হয়েছে ২ হাজার ২০০-২ হাজার ৩০০ টাকা। এত বাজার কমে যাওয়ায় পেঁয়াজ ফেরত নিয়ে যাচ্ছি। এই দামে বেচলে আমাদের পোষাবে না।

তিনি আরও বলেন, সরকার যদি পেঁয়াজ আমদানি করে তাহলে আমাদের বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়াই ভালো।

বনগ্রাম হাটে আসা আরেক চাষি বলেন, হাটে পেঁয়াজ এনে শুনি দাম মণপ্রতি ৫০০ টাকা কমে গেছে। পেঁয়াজের দাম কমে যাওয়ায় গাড়ি থেকে পেঁয়াজ নামাচ্ছি না। সরকার যদি আমদানি করে তাহলে সরকারই ব্যবসা করুক। আমরা পেঁয়াজ লাগাব না। কারণ পেঁয়াজ আমাদের জাত ব্যবসা। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে তো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারবে না।

পেঁয়াজের ব্যাপারী রায়হান উদ্দিন জানান, তিনি চিনাখড়া, বনগ্রাম, পুষ্পপাড়া, হাজিরহাট, আতাইকুলাসহ বিভিন্ন হাট থেকে পেঁয়াজ কেনেন। তিনি জয়পুরহাট এবং ঢাকায় পেঁয়াজ সরবরাহ করেন।

তিনি জানান, একদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কমে গেছে। শনিবার তিনি কিনেছেন ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা দরে। আগেরদিন কিনেছেন ২ হাজার ৪০০ থেকে ২ হাজার৮০০ টাকা দরে।

রায়হান বলেন, আমদানির ঘোষণার পর থেকেই দাম কমতে শুরু করেছে।

বাংলাদেশ কৃষক উন্নয়ন সোসাইটির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এবং পাবনার খ্যাতিমান চাষি সিদ্দিকুর রহমান ময়েজ বলেন, চাষিরা বেশিরভাগ ফসল চাষ করেই ক্ষতির মুখে পড়ছেন। এবার পেঁয়াজে তারা কিছুটা লাভবান হচ্ছেন। তারা যেন ক্ষতির শিকার না হন সেদিকে সরকারকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পাবনার উপ-পরিচালক জামাল উদ্দিন বলেন, চাষির পেঁয়াজ উৎপাদন খরচ পড়ে প্রতি কেজিতে ৩৫-৪০ টাকার ওপর। কিন্তু মৌসুমে চাষিরা ২০-২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন। এতে তারা নিশ্চিতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন।

তিনি আরও বলেন, তখন ওই দরে বিক্রি না করে উপায় থাকে না। কারণ তারা দেনার ভারে জর্জরিত থাকেন। এবছর যে দাম উঠেছে তাতে চাষিরা লাভবান হচ্ছেন। সরকার আমদানি করে দামটা ভারসাম্যপূর্ণ রাখার চেষ্টা করছে। যাতে ক্রেতা-ভোক্তা উভয়েই ভালো থাকেন। এতে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।