শুল্ক নিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে নালিশ করবে বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: ভারত বাংলাদেশী পণ্যের উপর থেকে ডাম্পিং বিরোধী শুল্ক প্রত্যাহারে রাজি না হওয়ায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা তাদের একটি শাখাকে দায়িত্ব দিয়েছেন যাতে বিষয়টি মীমাংসার জন্য তারা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডাব্লিউটিও) সাথে যোগাযোগ শুরু করে।

চলতি বছরের জানুয়ারির মাঝামাঝি নয়াদিল্লীতে অনুষ্ঠিত বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বাংলাদেশ পাটজাত পণ্য, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড এবং মাছ ধরার জালের উপর থেকে এন্টি-ডাম্পিং শুল্ক প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়েছিল। কিন্তু ভারত সেটা নাকচ করে দেয়।

কর্মকর্তারা জানিয়েছে, বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের (বিটিসি) পরামর্শ অনুযায়ী বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডাব্লিউটিও সেলকে বলা হয়েছে, যাতে তারা বিবাদ মীমাংসার জন্য নির্ধারিত প্রক্রিয়া শুরু করে।

বিটিসি গত জুলাইয়ে প্রকাশিত এক রিপোর্টে উল্লেখ করে যে, ভারত ‘ডাব্লিউটিও’র নীতিমালা লঙ্ঘন করে’ বাংলাদেশী পণ্যের উপর এন্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করেছে। অ্যাডভাইজরি সেন্টার অব ডাব্লিউটিও ল’ (এসিডাব্লিউএল) থেকে আইনি পরামর্শ নেয়ার পর যদি ডাব্লিউটিও-তে বিবাদ মীমাংসার প্রক্রিয়া শুরু করা যায়, তাহলে ভারত হয়তো এন্টি-ডাম্পিং শুল্ক তুলে নিতে পারে। এসিডাব্লিউএল বিবাদ মীমাংসার ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে আইনি সহায়তাও দিয়ে থাকে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছেন, আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে আইনি প্রক্রিয়া শুরুর জন্য মন্ত্রীর অনুমোদনের অপেক্ষায় আছি। আরেকজন কর্মকর্তা বলেছেন, এই এন্টি-ডাম্পিং শুল্ক প্রত্যাহার করানোর জন্য বাংলাদেশ সম্ভাব্য সব ধরণের চেষ্টা চালিয়েছে, কিন্তু ভারত প্রতিবেশীর অনুরোধের প্রতি কোন গুরত্ব দেয়নি। তিনি আরও বলেন, এখন এর সমাধানের জন্য ডাব্লিউটিও’র কাছে যাওয়া ছাড়া আর কোন পথ খোলা নেই।

২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ভারত বাংলাদেশের পাটজাত পণ্যের উপর টন প্রতি ১৯ থেকে ৩৫২ ডলার প্রতি এন্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করে। ২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে বাংলাদেশের হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের উপরও টন প্রতি ২৭.৮১ থেকে ৯১.৪৭ ডলার পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হয়। বাংলাদেশ হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড উৎপাদন করে, যে রাসায়নিকটি টেক্সটাইল প্রক্রিয়াজাতকরণের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। এক বছর পর, বাংলাদেশ থেকে আমদানিকৃত মাছ ধরার জালের উপরও কেজিপ্রতি ২.৬৯ ডলার এন্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করে ভারত।

ভারতের ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছে যে, বাংলাদেশ তাদের পণ্য ভারতীয় পণ্যের চেয়ে অনেক কম মূল্যে বিক্রি করছে। তারা বলেন, সে কারণে স্থানীয় শিল্প বাংলাদেশের রফতানিকৃত পণ্যের মোকাবেলায় বড় প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়ে গেছে এবং স্থানীয় পণ্যগুলো সেখানে বাজার হারাচ্ছে। তবে, বাংলাদেশের রফতানিকারকরা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তখন থেকেই তারা ভারতের প্রতি অনুরোধ করে আসছেন যাতে এই পণ্যগুলোর উপর থেকে এন্টি-ডাম্পিং শুল্ক প্রত্যাহার করে নেয় ভারত।