হার্ভার্ডের গবেষণা: হারিকেন রিকোয় ‘নিহতের সংখ্যা ছিল সরকারের দাবির ৭০ গুন’

গত বছর ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে আঘাত হানা হারিকেন মারিয়ার কারণে পুয়ের্তো রিকোতেই চার হাজার ছয়শ জনের বেশি নিহত হন বলে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের করা এক অনুসন্ধানে জানা গেছে।
এই সংখ্যা ওই ঘূর্ণিঝড়ে সরকারিভাবে ঘোষিত নিহতের অন্তত ৭০ গুণ বলে জানিয়েছে বিবিসি।
চার মাত্রার ওই ঘূর্ণিঝড়ে মাত্র ৬৪ জন নিহত হয়েছিল বলে সেসময় জানানো হয়েছিল।
নিহতদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশই ঝড়ের কারণে সৃষ্ট দীর্ঘ সময়ের বিদ্যুৎহীনতা ও চিকিৎসা সেবার অপ্রতুলতার শিকার হন বলে দাবি হার্ভার্ডের গবেষকদের।
ঘোষিত সংখ্যার চেয়ে নিহতের পরিমাণ যে অনেক বেশি তা আগে থেকেই ‘অনুমান করা হচ্ছিল’ বলে জানিয়েছে পুয়ের্তো রিকোর সরকার।
ধ্বংসস্তূপের বিস্তৃতির কারণে ঝড়ে ল-ভ- দ্বীপটিতে প্রকৃত নিহতের সংখ্যা বের করা বেশ জটিল, এটি আগে থেকেই বলে আসছে বিশেষজ্ঞরা।
হার্ভার্ডের অনুসন্ধানকে স্বাগত জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে থাকা ক্যারিবীয় এ দ্বীপটির ফেডারেল অ্যাফেয়ার্স অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের কর্মকর্তা কার্লোস মারকাদের।
“হারিকেন মারিয়ার কারণে সৃষ্ট এ মর্মান্তিক দুর্যোগ অনেক মানুষের মৃত্যুর কারণ ছিল,” বলে সে।
নিহতের সংখ্যা বের করতে দ্বীপ কর্তৃপক্ষ জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়কে দায়িত্ব দিয়েছিল, ওই অনুসন্ধানের ফলও দ্রুত প্রকাশিত হবে বলে জানায় মারকাদের।
হার্ভার্ডের গবেষকরা চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত পুয়ের্তো রিকোর তিন হাজার বাড়ির বাসিন্দাদের ওপর জরিপ চালান। যদৃচ্ছভাবে ঠিক করা এসব বাড়ির বাসিন্দাদের কাছে তারা ঝড়ের কারণে স্থানচ্যুতি, স্থাপনার ক্ষয়ক্ষতি ও ঘটে যাওয়া বিভিন্নজনের মৃত্যুর কারণ সম্বন্ধে জানতে চায়।
ঝড় পরবর্তী মৃত্যুহারের সঙ্গে গবেষকরা ২০১৬ সালের একই সময়ের মৃত্যুহারের তুলনা টানে। তারা দেখেছে, ঝড়ের পর দ্বীপটির প্রথম তিনমাসের মৃত্যুহার স্বাভাবিকের চেয়ে অন্তত তিনগুণ বেশি ছিল।
মারিয়া আঘাত হানার কয়েক মাস পর পর্যন্ত দ্বীপটিতে যে অতিরিক্ত মৃত্যুহার দেখা গেছে তার পেছনে ‘চিকিৎসা সেবার অপ্রতুলতাই প্রাথমিক কারণ’, বলছে তারা।
গবেষকরা প্রাকৃতিক দুর্যোগে মৃত্যুহার ও মানসিক অস্থিরতা বাড়ার কারণ হিসেবে দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে দীর্ঘস্থায়ী রোগ এবং এর চিকিৎসায় ব্যবহৃত অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতিতে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগের ঘাটতিকেও দায়ী করেছে।
পুয়ের্তো রিকোর সবচেয়ে বড় শহর সান জুয়ানের মেয়র কারমেন ইউলিন ক্রুজ টুইটারে বলেছে, “যে অবহেলায় এত মৃত্যু, তা ভুলে যাওয়া হবে না।”
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী অনেকেই মৃতের সংখ্যা তিন হাজার ছাড়িয়ে যাওয়ায় ঘূর্ণিঝড় মারিয়াকে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ারে হামলার চেয়েও বড় বিপর্যয় হিসেবে অভিহিত করেছে।
ঘূর্ণিঝড় মারিয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশিদিন বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন ছিল ক্যারিবীয় দ্বীপ পুয়ের্তো রিকো, যেখানে প্রায় ৩৪ লাখ মার্কিন নাগরিকের বাস। ওই ঝড়ে ৯০ বিলিয়ন ডলারের বেশি আর্থিক ক্ষতি হয়েছিল বলে জানিয়েছিল মার্কিন ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন।
দ্বীপটির বিদ্যুৎ সংযোগ পুনরায় চালু হলেও এখনও তা নিরবিচ্ছিন্ন নয় বলে জানিয়েছে বিবিসি। বিদ্যুৎ না থাকায় ঘূর্ণিঝড়ের সাত মাস পরে চলতি এপ্রিলেও একবার পুরো পুয়ের্তো রিকো অন্ধকারে ডুবে গিয়েছিল।