কানেকটিভিটি নয়, এক তরফা সুবিধা নিচ্ছে ভারত

বিশ্বের সর্বাধিক দূষিত দশ শহরের তিনটাই ভারতের

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে নৌ, রেল, সড়ক-সব পথেই ভারতের ভৌত যোগাযোগ পরিষ্কার। আর এর ফলে কানেকটিভিটিতে এততরফা ফায়দা লুটছে ভারত। ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে এই সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে ভারত। অন্যদিকে, এই কানেকটিভিটিতে বাংলাদেশের বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হলে এর পরিপূর্ণ সুফল ভোগ করবে ভারত বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

জানা গেছে, স্থলপথের পাশাপাশি আকাশ পথেও যোগাযোগ সম্প্রসারণের প্রস্তাবনা রয়েছে। বাংলাদেশের ভূমিতে বিমান বন্দর নির্মাণসহ দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলের শহরগুলো গৌহাটি, শিলচর, আগরতলা, তেজপুর, ডিমাপুর এবং আইজলের সঙ্গে সরাসরি বিমান চলাচলের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ফলে এটা কি ধরনের ‘আঞ্চলিক’ কানেকটিটিভিটি সেই প্রশ্ন উঠেছে।

নেপাল এখনও আটকে আছে ভারতের ‘চিকেন নেকে’ এবং বাংলাদেশগামী ভুটানের পণ্যবাহী ট্রাক আটকানো হচ্ছে আসামে। ফলে যা ঘটছে তা ভারতের সঙ্গে এবং ভারতের জন্যে।

সাউথ এশিয়ান সাব-রিজিওনাল ইকোনোমিক কোঅপারেশন রোড কানেকটিভিটি, ফেইজ-১, ফেইজ-২ শীর্ষক দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সরকার। ওই একই প্রকল্পের ফেইজ-৩ এবং ফেইজ-৪ এর খসড়া প্রণয়ন প্রক্রিয়াধিন রয়েছে। ফেইজ-১ এর আওতায় গাজীপুরের জয়দেবপুর থেকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত ৭৪ কিলোমিটার সড়ক ছয় লেনে উন্নীত করা হবে। ফেইজ-২ এর আওতায় ছয় লেনে উন্নীত হচ্ছে এলেঙ্গা থেকে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল-বগুড়া হয়ে রংপুরের মডার্ন মোড় পর্যন্ত ১৯০.৪ কিলোমিটার সড়ক। ফেইজ-৩ এর আওতায় রংপুরের মডার্ন মোড় থেকে লালমনিরহাটের বুড়িমাড়ি স্থলবন্দর পর্যন্ত সড়কটি ছয় লেনে উন্নীত করা হবে। যেটির সংযোগ ঘটবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চেংড়াবান্ধায়। আর ফেইজ-৪ এর আওতায় ছয় লেনে উন্নীত হবে মডার্ন মোড় থেকে পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থল বন্দর সড়কটি। এটির সংযোগ ঘটবে ভারতের জলপাইগুড়ির ফুলবাড়ি সীমান্তে।

এছাড়া ‘ক্রসবর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইম্প্রুভমেন্ট প্রজেক্ট’ শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকারের সড়ক ও জনপথ বিভাগ। প্রকল্পটির আওতায় দেশের ৮টি মহাসড়কের ৬০০ কিলোমিটারের উন্নয়ন এবং ওই ৬০০ কিলোমিটারের মধ্যে থাকা ১৭টি সেতু, সাতটি কালভার্ট, একটি টোল গেট এবং দুটি এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। যশোর জেলার শার্শা ও ঝিকরগাছা, নড়াইল জেলার সদর ও লোহাগড়া, গোপালগঞ্জের সদর ও কাশিয়ানী, চট্টগ্রামের মিরসরাই, ফটিকছড়ি, পটিয়া ও চন্দনাইশ এবং কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায় বাস্তবায়নাধীন ওই ৮টি সড়কের প্রতিটি ভারত সীমান্তে মিলিত হওয়ায় প্রকল্পটির নাম দেয়া হয়েছে ‘ক্রসবর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইম্প্রুভমেন্ট প্রজেক্ট’।

ভারতের সঙ্গে সর্বশেষ স্বাক্ষরিত প্রটোকল অন ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট অ্যান্ড ট্রেড (নৌ প্রটোকল) চুক্তি অনুযায়ী দুই দেশের মধ্যে তিনটি রুট রয়েছে। যার একটি হলো কলকাতা-হলদিয়া-রায়মঙ্গল হয়ে বাংলাদেশের চালনা-খুলনা-মোংলা-কাউখালী-বরিশাল-হিজলা-চাঁদপুর-নারায়ণগঞ্জ-আরিচা-সিরাজগঞ্জ-বাহাদুরাবাদ-চিলমারি হয়ে ভারতের আসামের ধুবড়ি-পান্ডু পর্যন্ত। দ্বিতীয় রুটটি হলো কলকাতা-হলদিয়া-রায়মঙ্গল হয়ে বাংলাদেশের চালনা-খুলনা-মোংলা-কাউখালী-বরিশাল-হিজলা-চাঁদপুর-নারায়ণগঞ্জ-ভৈরব বাজার-আশুগঞ্জ-আজমীরিগঞ্জ-মারকুলি-শেরপুর-ফেঞ্চুগঞ্জ-জকিগঞ্জ হয়ে ভারতের মেঘালয়ের করিমগঞ্জ পর্যন্ত। আরেকটি ভারতের ধুলিয়ান হয়ে বাংলাদেশের রাজশাহী-গোদাগারী পর্যন্ত।

দুই দেশের মধ্যে রেলপথে পণ্য পরিবহন চুক্তির আওতায় দীর্ঘ দিন ধরেই পণ্য আমদানি-রফতানি হচ্ছে। তবে এবার বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে রেলপথে ট্রানজিট চায় ভারত। বিশেষ করে দুই দেশের মধ্যে কনটেইনার পরিবহন চুক্তির প্রস্তাব করেছে দেশটি। যার শিরোনাম দেওয়া হয়েছে ‘মেমোরেন্ডাম অব আন্ডার স্ট্যান্ডিং বিটুউইন কনটেইনার কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (সিসিবিএল) অ্যান্ড কনটেইনার করপোরেশন অব ইন্ডিয়া লিমিটেড (কনকর) টু প্রোমোট অ্যান্ড এক্সপান্ড কো-অপারেশন বিটউইন ইন্ডিয়া অ্যান্ড বাংলাদেশ ইন দ্য ফিল্ড অব কনটেইনার ট্রান্সপোর্টেশন ফর মিউচুয়াল বেনিফিট অব বোথ কান্ট্রিজ’।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ-ভারত কানেকটিভিটিতে ভারত বাংলাদেশের সুবিধার কথা বললেও মূলত ১০০ ভাগই লাভবান হবে ভারত। আবার এখানে খরচের প্রশ্নেও বেশি খরচের যোগা দিতে হবে বাংলাদেশকে।