কোন মানুষটা ঘুষ খায় না -এনবিআর চেয়ারম্যান

কোন মানুষটা ঘুষ খায় না

নিজস্ব প্রতিবেদক: শুধু সরকারি কর্মকর্তারাই নন, অধিকাংশ মানুষের মধ্যেই দুর্নীতি রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। গতকাল এক আলোচনা সভায় একথা জানান তিনি।

মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, সাধারণ মানুষ বলে- সরকারি চাকরিজীবীরা ঘুষ খায়, অমুকে খায়, তমুকে খায়। যদি সুবিধা পায়, কোন মানুষটা খায় না?

মানুষ সরকারকে ঠকাতে তৎপর বলে মন্তব্য করে তিনি দাবি করেন, ৭০-৮০ হাজার টাকা দিয়ে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকে, অথচ আয়কর দেয় না। বলে, আমার তো বাড়িই নেই। আবার অনেকের বাড়ি আছে; তারপরও টিআইএন সার্টিফিকেট নেই। কেউ কর দিতে রাজি নয়। আমাদের দেশে কর দেওয়ার সামর্থ্য রাখে, এমন মানুষের সংখ্যা প্রায় চার কোটি। অথচ আয়কর রিটার্ন জমা দেয় মাত্র ২০-২২ লাখ মানুষ।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, দুর্নীতির বিষয়ে কথা এলেই সাধারণ মানুষ প্রথমেই আঙুল দিয়ে দেখায় সরকারি অফিস। কারণ, সরকারি অফিসে গেলে হয়রানি হতে হয়। বিদ্যুৎ অফিসে গেলে পয়সা ছাড়া কিছু করাই যায় না। ট্যাক্স দিতে কাস্টমসকে টাকা দিতে হয়, পুলিশে তো কথাই নেই। আর দুই-তিনটা জায়গার কথা উচ্চারণ করতে মানা; সমস্যা হয়ে যাবে। এসব জায়গার কথা বলা যাবে না।’

তিনি বলেন, আমরা দেখি, প্রত্যেকটা মানুষের মধ্যে দুর্নীতি রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে এরকম হয়, সে কাগজে বলবে ৫০ টন মাল আমদানি করছি। কিন্তু আসলে আনবে ৭০ টন। ৫০ টনের শুল্ক দিয়ে বের করে নিয়ে যেতে চাইবে ৭০ টন। তারপর বলবে গামছা আনছি; কিন্তু আনবে স্যুটের কাপড়। কমদামি কাপড় আনার ঘোষণা দিয়ে আনবে দামি দামি কাপড়।

মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, রফতানির জন্য যেসব কাপড় আনা হয়, সেসব কাপড়ে ডিউটি-ফ্রি সুবিধা রয়েছে। তারা ডিউটি-ফ্রি কাপড় আমদানি করে গার্মেন্টসে পোশাক তৈরির পর রফতানি করে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা আনবে। কিন্তু বৈদেশিক মুদ্রা সরকারকে দিয়ে দেবে না তারা। এজন্য সরকার তাদের সমান টাকা দিয়ে দেবে। লাভটা তারাই ভোগ করবে।

তিনি বলেন, এ সুযোগ নিয়ে ডিউটি-ফ্রি কাপড় এনে সে পোশাক তৈরির পর রফতানি না করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে দেয়। সরকারকে প্রায় ৫০ শতাংশ ট্যাক্স না দিয়ে এনে এটা দেশেই বিক্রি করে দেয়। এতে অনেক লাভ। কারণ সে ট্যাক্স বাবদই ৫০ শতাংশ ছাড় পেয়েছে। এসবের জন্য ইসলামপুর, নয়াবাজার, তাঁতিবাজার এরকম কত বাজার গড়ে উঠেছে, শুধু এধরনের বন্ডের কাপড় দিয়ে। শুধু ঢাকায় না, চট্টগ্রাম, খুলনা সব জায়গায়।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, এক ধরনের ব্যবসায়ী কম দামে নিম্নমানের বিদেশি কাগজ এনে দেশের বাজার নষ্ট করে দিচ্ছে। এতে করে দেশের কাগজের মিলগুলো লোকসানে পড়ছে।’ তিনি বলেন, এতকিছুর পরও ২০০৬ সাল থেকে ২০১৮ সালে আমাদের জাতীয় আয় বেড়েছে চারগুণ। আগামী ২০৩০ সালে এটা আরও চারগুণ বাড়বে।’