‘যুবলীগ চেয়ারম্যানের বক্তব্য নিয়ে কিছু বলার নেই’

আমরা অপরাধী চিনি : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

নিউজ ডেস্ক : রাজধানীর ক্যাসিনোতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান নিয়ে যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর বক্তব্যের বিষয়ে মন্তব্য না করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, সেটি তার নিজস্ব বক্তব্য।

বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।

গত বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীতে সাতটি ক্যাসিনোতে অভিযোন চালিয়ে শতাধিক ব্যক্তিকে আটক করা হয়। ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে গুলশানের বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকেও।

পরে যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বলেন, ‘অপরাধ করলে শাস্তির ব্যবস্থা হবে। প্রশ্ন হলো, এখন কেন অ্যারেস্ট হবে। অতীতে হলো না কেন? আপনি তো সবই জানতেন। আপনি কি জানতেন না? নাকি সহায়তা দিয়েছিলেন, সে প্রশ্নগুলো আমরা এখন তুলবো। আমি অপরাধী, আপনি কী করেছিলেন? আপনি কে, আমাকে আঙুল তুলছেন? এখন বলছেন ৬০টি ক্যাসিনো আছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, আপনারা কি এতো দিন আঙুল চুষছিলেন?’

যুবলীগ চেয়ারম্যানের এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সেটা ওনার নিজস্ব মন্তব্য, আপনারা দেখেছেন, আমিও দেখেছি।

‘প্রশাসন তো বসে নেই, আমাদের নজরে যেগুলো আসছে আমরা সেগুলোর ব্যবস্থা নিয়েছি। আরও যারা চিন্তা-ভাবনা করেছে আমরা অ্যাকশনে যাওয়ার পর বন্ধ করেছে, এটা আমরা জানতাম। ইদানীং আমরা শুনছিলাম এটা বেশ কয়েকটি ঢাকা শহরে হয়েছে, সেই তদন্ত ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতেই এটা (অভিযান) হয়েছে।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রশাসন জানতো কি জানতো না; আমি সেখানে যাচ্ছি না। আমি বলতেছি প্রশাসন যখনই জানছে তখনই অভিযান শুরু করেছে।

‘আমাদের মাননীয় চেয়ারম্যান যুবলীগের, উনি হয়তো তার নিজস্ব মন্তব্য করেছেন, আমার এখানে কিছু বলার নেই।’
দীর্ঘদিন ক্যাসিনো চলে এলেও এতদিন পরে কেন অভিযান- এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যখনই আমাদের কাছে খবর এসেছে, কলাবাগান বন্ধ হয়ে গেছে। কারওয়ান বাজারে একটা উঠছিল, খবর যখন এসেছে তখনই বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক সময় অনেক খবর আসে যেগুলো হয়তো তথ্যভিত্তিক নয়, সেগুলো হয়তো উদ্দেশ্যমূলকভাবে খবর আসে। সেগুলো গিয়ে দেখি এগুলোর ভিত্তি নেই। যে সাতটি আজকে হলো (অভিযান) এগুলোর যখনই তথ্য আসে আমরা তখনই অ্যাকশনে গেছি।
‘আপনারা অনেক আগে দেখেছেন, আমরা আরেকটা বাড়িতে হানা দিয়েছিলাম। সেই বাড়িতে দু’জন বিদেশিও পেয়েছিল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। আমাদের আইন অনুযায়ী তাদেরও ব্যবস্থা হয়েছে।’

ক্যাসিনোগুলোর তথ্য কতদিন আগে জেনেছেন- প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, আমাকে গোয়েন্দারা যখনই জানিয়েছেন তখনেই জেনেছি।

ক্যাসিনোর মেশিন এবং বোর্ডগুলো বিমানবন্দরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে আসা কি সম্ভব?- এমন প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মেশিনগুলো কখনো এই রকম অবস্থায় আসে না। এগুলো ছোট ছোট পার্সের মতো হয়ে ভাগে ভাগে আসে, যেগুলো আপনার চোখেও পড়বে না। ডিক্লারেশন দিয়ে আনেনি বলেই তো তারা অপরাধী, সেজন্য তাদের বিচার হবে। সবগুলোর বিচার হবে যারাই আইন ভঙ্গ করেছে।

ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে অভিযান নিয়ে পরিকল্পনা সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, শুধু ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে অভিযোগ নয়, এটা হলো অবৈধ কোনো ব্যবসার বিরুদ্ধে। সেটা ক্যাসিনো হোক কিংবা ক্লাব হোক কিংবা কোনো কিছু হোক; যেই কিছু অবৈধভাবে স্থাপন করবেন সেটার বিরুদ্ধে আমাদের ব্যবস্থা থাকবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রথম কথা হল ঢাকাতে আমরা শুনছিলাম কতগুলো অবৈধ ক্যাসিনো আছে। আমরা কোনো ক্যাসিনোকে পারমিশন দেইনি। বিভিন্ন হোটেল ও ক্লাবে আমরা বারের পারমিশন দিয়েছি। আমরা শুনছিলাম অনেক জায়গায় নাকি ক্যাসিনো চালাচ্ছে। আমাদের কাছে সেই তথ্য ছিল, সেই অনুযায়ী কালকে রাত্রে ক্লাব ও ক্যাসিনোগুলো চেক করা হয়েছে। আমরা মনে করি ক্যাসিনো করতে হলে সরকারের একটা অনুমতি লাগে, সেগুলো তারা নেয়নি। যেহেতু অনুমতি ছাড়া তারা এগুলো করেছে, তারা অপরাধ করেছে।

প্রশাসনের অনেকে জড়িত বলে অভিযোগ নিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমরা পেয়েছি মাত্র, দেখবো এখন। কে কতখানি সহযোগিতা করেছে, কিংবা এটার জন্য ব্যবস্থা নিয়েছে, এগুলো তদন্তের পর আসবে। আমরা এখন দেখেছি, সিলগালা করছে, ম্যাজিস্ট্রেট তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছেন। তদন্তের পর বেরিয়ে আসবে, কে কোনটায়, কে কোনটার সঙ্গে জড়িত ছিল, কার কতখানি ভূমিকা ছিল, সেটা দেখা যাবে।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ওনার সবসময় ডিরেকশনটা ক্লিয়ার যে, কোনো ধরনের আইনবর্হিভূত কাজ করে থাকলে তাকে বিচারের মুখোমুখি হতেই হবে। আমরা সেটিই করছি, উনি যেভাবে ডিরেকশন দিচ্ছেন।

ক্যাসিনো পরিচালনার বিষয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতা কিনা- প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে গোয়েন্দারাই আমাদের ইনফরমেশন দিয়েছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতেই অপারেশনগুলো হয়েছে। আমি তো সবসময় বলি এখানে যদি কোনো প্রশাসনের লোক জড়িত থাকে কিংবা তারা এগুলোকে সহযোগিতা করেছেন, তাদের নিয়ন্ত্রণে এগুলো হয়েছে। আইন অনুযায়ী তিনিও বিচারের মুখোমুখি হবেন।