দেশের প্রথম প্লাস্টিকের ‘বোতল বাড়ি’ (ছবি)

ডেস্ক: একমাত্র শিশুপুত্র রাফিদুলের জন্যই গ্রামে ফিরে আসা। ছেলেটির কথা বলার সমস্যা ছিল। চিকিৎসক বলেছিলেন, তাকে খোলামেলা পরিবেশে নিয়ে গেলে কথা বলতে পারবে। তাই ঢাকা থেকে একেবারে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জের নওদাবাস গ্রামে। সেখানে পৈতৃক বাড়ির ৪০ শতক জায়গায়ও পেলো। প্রথমে ইটের দালান তৈরি করবে বলেই মনস্থ করেছিলো। খরচ বেশি ও পরিবেশের ক্ষতির দিকটি বিবেচনায় এল। অতঃপর সিদ্ধান্ত, বাড়ি হবে পরিবেশবান্ধব প্ল্যাষ্টিকের বোতলে বালি ভরে। এই হলো এ নওদাবাস গ্রামের বোতলবাড়ি নির্মাণের কাহিনি। চন্দ্রপুর ইউনিয়নের নওদাবাস গ্রামে ১৭০০ বর্গফুটের বাড়িটি তৈরি করেছে পরিবেশবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী দম্পতি রাশেদুল আলম ও আসমা খাতুন।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সুত্রে জানা গিয়েছে যে- ‘বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় বোতল দিয়ে বাড়ি বানানোর নজির আছে। আমার জানা মতে, বাংলাদেশে এ ধরনের বাড়ি এটাই প্রথম। এটি নিঃসন্দেহে পরিবেশবান্ধব।’
রাশেদুল জানান, গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় বাড়ির কাজ। বাড়িটি নির্মাণে এক লিটার, আধা লিটার ও ২৫০ মিলিগ্রামের খালি প্ল্যাষ্টিকের (পিইটি) ৮০ হাজার বোতল ব্যবহৃত হয়েছে।

এ বাড়িটিতে চারটি শয়নকক্ষ, একটি রান্নাঘর, একটি খাবার ঘর, দুটি শৌচাগার আর একটি বারান্দা আছে। বাড়িটির সেপটিক ট্যাংকও প্ল্যাস্টিকের বোতল দিয়ে তৈরি। বাড়ির শুধু লিনটেনে ইটের খোয়া ও রড ব্যবহার হয়েছে। প্ল্যাস্টিকের বোতলের দেয়াল বা প্রাচীর গাঁথতে সিমেন্ট ও বালির মিশ্রণ ব্যবহার হয়েছে। বাড়ির দরজা ও জানালা যথারীতি স্টিল বা কাঠের ব্যবহার করা হয়েছে। বাড়ির ছাদে টিন ব্যবহার করা হয়েছে।

plastic-bottle-house-2

রাশেদুল আলম বলেন, ‘যা ভেবেছি, তা-ই কাজে পরিণত করতে প্রথমে বোতলবাড়ির বিষয়ে ইন্টারনেটে সার্চ করতে শুরু করি; যা তথ্য পাই, তা বিশ্লেষণ করে স্ত্রীর সম্মতি নিয়ে এবং পরিবারের সদস্যদের বলে প্ল্যাস্টিকের বোতল সংগ্রহের কাজ শুরু করি। ‘লালমনিরহাট বিসিক শিল্পনগরী থেকে এবং স্থানীয়ভাবে প্ল্যাস্টিকের পুরোনো ও কুড়ানো বোতল ২৫ টাকা কেজি দরে ৬০ মণ ৬০ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছি।’ তিনি বলেন, ‘প্রথমে রাজমিস্ত্রিরা এ ধরনের দালান তৈরিতে আগ্রহ না দেখালেও পরে তাদের সবকিছু খুলে বললে তারা রাজি হয়ে যান।’
বাড়ি নির্মাণে অভিনবত্ব বিস্মিত করেছে এলাকার অনেককেই।

plustic_house_bangladesh

কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) বলেন, প্ল্যাস্টিকের বোতলে বালি ভরে বাড়ি নির্মাণে নির্মাণ খরচ কম। এ ধরনের বাড়ি নির্মাণের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ও কারিগরি সুবিধা-অসুবিধা বিষয়ে আরও গবেষণা ও নীতিমালা প্রণয়নের প্রয়োজন রয়েছে। এ ধরনের বাড়ি শীত ও গ্রীষ্মকালে পরিবেশ অনুকূল থাকবে। অর্থাৎ শীতকালে উষ্ণ এবং গ্রীষ্মকালে শীতল থাকবে। এ জন্য তিনি পর্যাপ্ত জায়গা উন্মুক্ত রেখেছেন। এ ছাড়া প্ল্যাস্টিকের বোতলে বালি ভরা থাকায় আগুন ও বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট হওয়া থেকে নিরাপদ থাকবে। কখনো আগুন লাগলে তা অন্যত্র ছড়াবে না। বরং যেখানে আগুন লাগবে সেখানকার বোতলের বালুতে আগুন নিভে যাবে। বাড়িটি নির্মাণে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা খরচ হবে।