রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ব্যাংক কর্মকর্তারা জড়িত : মওদুদ

নিউজ নাইন২৪ডটকম, ঢাকা: বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সহযোগিতা ছাড়া ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক থেকে বাংলাদেশের দশ কোটি মার্কিন ডলার রিজার্ভ চুরি হওয়া সম্ভব নয় বলে মনে করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ।

শনিবার সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘আজকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুণ্ঠন করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত একটিরও বিচার হয়নি। এখন তারা থাবা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে।

“…মানে শেষ। আমাদের রিজার্ভ একাউন্টের হাজার কোটি টাকা বাইরে চলে গেছে। আমাদের রিজার্ভ থেকে বিভিন্ন জায়গায় যে টাকা জমা ছিল, সেখান থেকে হ্যাকারদের মাধ্যমে এটা করেছে। এটা কী কেউ বিশ্বাস করবে যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সহযোগিতা ছাড়া এই হ্যাকারদের মাধ্যমে টাকা লুণ্ঠন সম্ভব। দেশের কোনো মানুষ এটা বিশ্বাস করবে না।”

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকে বাংলাদেশের সঞ্চিত ১০কোটি ডলার চীনা হ্যাকাররা হাতিয়ে নেয় বলে সম্প্রতি ফিলিপিন্সের একটি সংবাদপত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, ব্যাংক চ্যানেলে ফিলিপিন্সে ওই অর্থ নিয়ে সেখান থেকে ক্যাসিনোসহ একাধিক হাত ঘুরে অন্য দেশে নিয়ে যাওয়া হয় বাংলাদেশের এই অর্থ।

লোপাট অর্থের একটি অংশ উদ্ধারের কথা সোমবারই জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে কী পরিমাণ অর্থ সরানো হয়েছিল এবং তার কতটুকু উদ্ধার হয়েছে, ‘তদন্তের স্বার্থে’ সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।

তবে হ্যাকারদের এই অর্থ লোপাটে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো দায় দেখছেন না অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। অর্থ ফেরতে প্রয়োজনে মামলা করবেন বলেও জানান তিনি।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের এই অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা তদন্তে যুক্তরাষ্ট্রের সাইবার নিরাপত্তা কোম্পানি ফায়ারআইয়ের ম্যানডিয়েন্ট ফরেনসিক বিভাগের সহযোগিতা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

মওদুদ আহমেদ বলেন, ‘বর্তমানে দেশে শাসন আছে কিন্তু সুশাসন নেই। একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে সরকার পরিচালনার জন্য সুশাসনের যে ঐতিহ্য গড়ে তুলেছিলাম সেই সুশাসন ভুলন্ঠিত হয়ে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুণ্ঠন করা হয়েছে। শেয়ারবাজার, ডেসটিনি, হলমার্কের মাধ্যমে সরকারের মদদপুষ্ট ব্যবসায়ীরা জনগণের অর্থ চুরি করেছে। এখন প্রতিদিন আমরা সহিংসতার খবর পাই। অথচ এখন কঠিন কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি নেই। এরপরও কেন এতো নৈরাজ্য? শিশুহত্যার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দেশে কী কোনো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নেই, সরকার নেই; যে এগুলো রোধ করতে পারে।’

বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ প্রয়াত মশিয়ূর রহমান যাদু মিয়ার ৩৭তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই ‘মুক্তমঞ্চ আলোচনা ও স্মারক সম্মাননা প্রদান’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে মশিয়ূর রহমান যাদু মিয়া স্মুতি রক্ষা কমিটি।

সম্প্রতি নিরাপত্তার অজুহাতে বাংলাদেশ থেকে কার্গো বিমানে মালামাল পরিবহনে যুক্তরাজ্যের নিষেধাজ্ঞায় রপ্তানির ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন মওদুদ আহমেদ।

“এতে একশ কোটি টাকার যে রপ্তানি হতো প্রত্যেক ফ্লাইটে সেগুলো এখন বন্ধ। তারা ওয়ার্নিং দিয়েছে যে, বাংলাদেশ বিমানের যে সরাসরি ফ্লাইট হয় সেটাও বন্ধ করে দেবে। এতে তো হাজার হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হবে। ব্রিটেনে হাজার হাজার প্রবাসী বসবাস করে। তাদের যাতায়াতের কি অবস্থা হবে? …দেশের কোনো সরকার আছে বলে মনে হয় না।”

মালয়েশিয়া শ্রমিক নিয়োগ চুক্তি ‘বাতিল হওয়া’প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মালয়েশিয়া ১৫ লাখ শ্রমিক নেওয়ার খবরে আনন্দিত হয়েছিলাম। কিন্তু শুনেছি, মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, শ্রমিক নেওয়ার চুক্তি বাতিল করে দেওয়া হয়েছে।

“হোয়াট ডাস ইট মিন। সরকারের কর্মদক্ষতা, দুরদর্শীর ওপর এগুলো নির্ভর করে। এখানে আজ কারা ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন। তাদের চিহ্নিত করা উচিত। সরকারের উচিত হবে, এই অবস্থা থেকে দেশের মানুষকে মুক্তি দেওয়া।”

দেশে জবাবদিহিতা না থাকার কারণেই এই ধরনের ঘটনা ঘটছে দাবি করে মওদুদ আহমেদ বলেন, ‘যে বিরোধীদল আছে তাদের কাছে তো কোনো জবাবদিহিতা করার প্রয়োজন পড়ে না। সুতরাং দেশ এমন একটি শূন্যতা বিরাজ করছে, যেখানে জবাবদিহিতার অভাবে নৈরাজ্যজনক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘দেশে গণতন্ত্র না থাকার কারণে সমাজে রাজনৈতিক অঙ্গনে শূন্যতা সৃষ্টি হয়। সেখানে নৈরাজ্য আসতে বাধ্য। আর এই শূন্যতার সুযোগ নিয়ে সন্ত্রাস, উগ্রবাদ, মৌলবাদ, জঙ্গিবাদের আবির্ভাব হওয়া অবধারিত। আজ সেটাই দেখছি। ভবিষ্যতে হয়তো আরো নগ্ন অবস্থায় দেশের মানুষকে এই অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে যে, গণতন্ত্রহীন অবস্থায় এই শূন্যতা কিভাবে অন্য শক্তি এসে পুরণ করে এবং দেশকে বিনাশ করে।’

‘দেশে রাজনীতি নেই’বলে আলোচনা সভার মতো কোনো অনুষ্ঠানে এসে এখন আর বক্তব্য রাখতে উৎসাহিতবোধ করেন না বলেও জানান প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ।

বিএনপির বিরুদ্ধে প্রগাপাণ্ডা ছড়ানো হচ্ছে-এই অভিযোগ তুলে মওদুদ আহমেদ বলেন, ‘বিএনপি একটি উদার গণতান্ত্রিক এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ রাজনৈতিক দল। বিএনপি উগ্রবাদ-মৌলবাদ-সন্ত্রাস প্রত্যাখ্যান করে। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে এসব নির্মুল করার জন্য বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। বিএনপি কখনো এই উগ্রবাদকে বরদাশত করেনা।’

বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, ‘আজকে যে সংকট চলছে তা আওয়ামী লীগ বা বিএনপির বিষয় নয়। এটি সমগ্রজাতির একটি সমস্যা। এটা ঐক্যবদ্ধভাবে সমাধান করতে হবে। সরকার যদি মনে করেন, পুলিশ আর র‌্যাব দিয়ে এটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে, তারা ভুল করছেন। এই ভুলের মাশুল দেশের মানুষকে দিতে হবে।’

সংকট উত্তরণে সরকারকে উদ্যোগ গ্রহনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, উদ্যোগ নিলে তাতে বিএনপি সহযোগিতা করবে। সময় খুব দ্রুত পার হয়ে যাচ্ছে। সেজন্য একটি অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে।

বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ যাদু মিয়ার স্মৃতিচারণ করে মওদুদ আহমেদ বলেন, তিনি অত্যন্ত উচু মনের মানুষ ছিলেন। তিনি ছিলেন রাজনৈতিক আদর্শের ভিত্তি। এখন সেই ধরনের রাজনীতিবিদ আছেন বলে আমার মনে হয় না। এই সময়ে তার মতো রাজনীতিবিদের খুবই অভাব পরিলক্ষিত হয়।

আয়োজক সংগঠনের সভাপতি শামসুল হকের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহান, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন খান মোহন, প্রয়াত যাদু মিয়ার মেয়ে রিতা রহমান প্রমুখ।