৬ কারণে লাভের মুখ দেখছে না পাটকলগুলো

সরকারের ১৪ পাটকল লিজ নিতে ৫১ আবেদন

নিজস্ব প্রতিবেদক: দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত নয় পাটকল লাভের মুখ দেখতে পারছে না। এর পিছনে ছয় কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। কারণগুলো হচ্ছে- ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের অভাব, প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনা, সময়মতো কাঁচামাল কিনতে না পারা, উৎপাদনের কাজে অদক্ষ শ্রমিকের ব্যবহার, শ্রমিক অসন্তোষ এবং দীর্ঘ প্রায় ৭০ বছরের পুরাতন মেশিনারিজ ব্যবহার।

উল্লিখিত কারণেই জুট মিলগুলোতে কাঙ্খিত উৎপাদন হচ্ছে না। ফলে বছরের পর বছর ধরে পাটকলগুলোকে লোকসানের বোঝা বহন করতে হচ্ছে।

এদিকে, গত পাঁচ বছরে খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত নয় জুট মিলে এক হাজার ৪৭৫ কোটি ৫৭ লাখ ১৫ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে। বর্তমানেও মজুরি কমিশনসহ সবমিলে আরো প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার মত বকেয়ার বোঝা মাথায় রয়েছে। এ অবস্থায় রাষ্ট্রায়ত্ত জুট মিলগুলোর ভবিষ্যৎ এক ধরণের অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে।

বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি) সূত্র জানায়, গত শতকের ৫০’এর দশকে খুলনা মহানগরীর ভৈরব নদের তীরে প্রথম জুট মিল স্থাপিত হয়। এরপর লাভজনক হওয়ায় একের পর এক গড়ে ওঠে রাষ্ট্রায়ত্ত জুট মিল। বর্তমানে দেশে বিজেএমসি নিয়ন্ত্রিত জুট মিল রয়েছে ৩২টি। এরমধ্যে চালু রয়েছে ২৬ জুট মিল। এই ২৬ জুটমিলের মধুমতি জুট মিলই খুলনা অঞ্চলে অবস্থিত।

এদিকে, প্রায় এক যুগ ধরে খুলনা অঞ্চলের নয় জুট মিলে ধারাবাহিকভাবে লোকসান হচ্ছে। তবে, শেষ পাঁচ বছরে লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৪৭৫ কোটি ৫৭ লাখ ১৫ হাজার টাকা। বিজেএমসি খুলনা আঞ্চলিক অফিস সূত্র জানায়, ২০১৪-১৫ অর্থ বছর থেকে ২০১৮-১৯ অর্থ বছর পর্যন্ত মাত্র বছরে খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত নয় জুট মিলে এক হাজার ৪৭৫ কোটি ৫৭ লাখ ১৫ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে।

এরমধ্যে আলীম জুট মিল ৭১ কোটি ৬৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা, কার্পেটিং জুট মিল ৪৫ কোটি ৫৬ লাখ ১৪ হাজার টাকা, ক্রিসেন্ট জুট মিল ৪৬৬ কোটি ১৫লাখ ৯ হাজার টাকা, দৌলতপুর জুট মিল ৩৭ কোটি ৫১ লাখ ৯২ হাজার টাকা, ইস্টার্ন জুট মিল ৮৯ কোটি ১৮ লাখ ৬২ হাজার টাকা, জেজেআই জুট মিল ১৩০ কোটি ৮১ হাজার টাকা, খালিশপুর জুট মিল ১১৯ কোটি ৩৭ লাখ ৯হাজার টাকা, প্লাটিনাম জুবিলি জুট মিল ৩১৮ কোটি ৪০ লাখ ৫৮হাজার টাকা ও স্টার জুট মিল ১৯৭ কোটি ৬৯লাখ ২০ হাজার টাকা লোকসান দিয়েছে। ধারাবাহিকভাবে মিলগুলোতে এই লোকসান অব্যাহত রয়েছে।

প্লাটিনাম জুবিলি জুট মিলের শ্রমিক মিজানুর রহমান বলেন, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাব, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনিয়ম-দুর্নীতি ও চাহিদামত কাঁচা পাট সরবরাহ না করার কারণে মিলগুলোতে লোকসান হচ্ছে।

বাংলাদেশ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মুরাদ হোসেন জানান, বিজেএমসি পাট কেনার মৌসুম শেষে এক হাজার ২০০ টাকা মণের কাঁচা পাট কিনে এক হাজার ৯০০ টাকা থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা দরে। সময়ের পাট অসময়ে কিনতে গিয়ে সরকারের কোটি কোটি টাকা লোকসান হয়।

বিজেএমসির খুলনা অঞ্চলের সমন্বয়ক (লিয়াজোঁ কর্মকর্তা) বনিজ উদ্দীন মিঞা বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো ঠিকমত চালু রাখতে হলে প্রথমেই পাটকলগুলোর সমস্যা চিহ্নিত করে তার সমাধান করাসহ পাটক্রয় মৌসুমে চাহিদা অনুযায়ী পাটক্রয় এবং যেখানে যেখানে যে ধরনের দক্ষ লোকের প্রয়োজন তাদের সেখানে নিয়োগ দেয়া জরুরি। এছাড়া শ্রমিকদের সময়ভিত্তিক মজুরি বাতিল করে পিচরেট (কাজ না করলে কোনো মজুরি পাবে না) ভিত্তিতে মজুরি প্রদান করতে হবে।

সর্বোপরি দীর্ঘ প্রায় ৭০ বছর আগের পুরাতন মেশিনারিজের পরিবর্তে চতুর্থ জেনারেশনের মেশিনারিজ দিয়ে মিলগুলো চালানো গেলে মিলগুলো অবশ্যই লাভজনক করা সম্ভব হবে। তবে, উল্লিখিত বিষয়গুলো ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে।