৬ ইউনিট নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড

৬ ইউনিট নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার্থীদের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড গঠনের কাজ শুরু হয়েছে। সাধারণ বোর্ডগুলোর আলোকে ৬টি ইউনিটে নতুন এই বোর্ড গঠন করা হবে। ইতোমধ্যে এ বোর্ড পরিচালনায় বোর্ড অব অর্ডিন্যান্স বা আইনের খসড়া প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই) থেকে তৈরির পর তা মূল্যায়ন করা হচ্ছে। আগামী সপ্তাহে এটি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এ বছর থেকেই বোর্ডটির কার্যক্রম শুরু করা হবে বলে জানা গেছে।

সারাদেশে ৬৫ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রতিবছর ৩০ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। অধিকসংখ্যক পরীক্ষার্থীর চাপ সামলাতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছেন কর্মকর্তারা। পরীক্ষা সামাল দিতে গিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের অন্য সব কাজ স্থবির হয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় আগামী বছরেই শিক্ষা বোর্ড গঠন করতে চায় মন্ত্রণালয়। তার আলোকে প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড গঠনের আইন তৈরির কাজ শুরু করা হয়েছে।

প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ডের খসড়া আইনে দেখা গেছে, সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের আলোকে প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ডের রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে। নতুন এ শিক্ষা বোর্ডের কার্যক্রম পরিচালনায় প্রধান ছয়টি ইউনিট তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে চেয়ারম্যান দফতর, সচিব দফতর, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শাখা, বিদ্যালয় পরিচালনা শাখা, সিস্টেম অ্যানালিস্ট ও হিসাব শাখা যুক্ত করা হয়েছে। এসব বিভাগে মোট ১২ জন কর্মকর্তার পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। বোর্ডের সর্বোপরি ক্ষমতা চেয়ারম্যানকে দেয়া হয়েছে। সচিব প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অধীনে পরীক্ষা আয়োজন, খাতা মূল্যায়ন ও ফলাফল প্রকাশ করা হবে।

জানতে চাইলে ডিপিই’র প্রশাসন পরিচালক সাবের হোসেন বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের আলোকে প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ডের আইন তৈরি করা হয়েছে। এ বোর্ডের মধ্যেমে পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা আয়োজন, পরিচালনা ও ফলাফল প্রকাশ, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠনসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হবে।’

তিনি বলেন, ‘প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় ইতোমধ্যে নতুন এ বোর্ড পরিচালনায় খসড়া আইন তৈরি করা হয়েছে। বর্তমানে সেটি মূল্যায়ন করা হচ্ছে। চলতি সপ্তাহে তা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।’

ডিপিই সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে অসন্তোষ থাকলেও পরীক্ষা শিগগির বাতিল হবে না। তাই পরীক্ষা চালু রাখতে হলে কী প্রক্রিয়ায় শিক্ষা বোর্ডকে কার্যকর করা যায় তার পথ বের করতে এখন কাজ করছেন কর্মকর্তারা।

এদিকে সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক বিষয়ক কমিটির (একনেক) সভায় পঞ্চম শ্রেণির পাবলিক পরীক্ষা বা পিইসি পরীক্ষা আয়োজনের বিষয়ে নতুন করে ভাবনার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ বাড়ছে বলে পর্যবেক্ষণ দেন সরকারপ্রধান। তার এমন মন্তব্যের পর অনেকে ভাবছিলেন, পঞ্চম শ্রেণির এ পরীক্ষা হয়তো থাকছে না।

তবে এর মধ্যেই পরীক্ষাটি নিয়মিত করতে নতুন শিক্ষা বোর্ড গঠনের কাজ শুরু হলো।

জানা গেছে, প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড গঠনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির পক্ষ থেকে সুপারিশ আসার পরই কাজ শুরু হয়। সংসদীয় কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, ৩০ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থীর পরীক্ষার জন্য কোনো বোর্ড না থাকা শিক্ষার মানের জন্য সুখকর নয়। সেজন্য দ্রুত বিষয়টিতে নজর দেয়া দরকার। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাজে গতি না থাকায় জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না বলেও সংসদীয় কমিটি মত দেয়। কমিটি শিক্ষার মান বাড়াতে মন্ত্রণালয়কে তাদের কাজে গতিশীল হওয়ারও সুপারিশ করে। এর পরপরই অধিদফতর শিক্ষা বোর্ড গঠনে একটি প্রস্তাব পাঠালে নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রণালয়।

জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম আল হোসেন বলেন, ‘আমরা আইনের খসড়া তৈরির জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরকে বলেছিলাম, তার ভিত্তিতে একটি খসড়া আইন তৈরি করে তা মূল্যায়ন করা হচ্ছে। এটি মন্ত্রণালয়ে জমা দিলেই আমরা আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করে দ্রুত ক্যাবিনেটে দিয়ে দেব। মন্ত্রিপরিষদ সিদ্ধান্ত নেবে এ পরীক্ষা থাকবে নাকি বাতিল করা হবে। মন্ত্রিপরিষদ থেকে অনুমোদন দেয়া হলে আগামী অর্থবছরেই প্রাথমিক শিক্ষার জন্য আলাদা বোর্ড কার্যকর করা সম্ভব হবে।’