হিন্দুত্ববাদীদের আগুনে পুড়ছে ঘর-বাড়ি এবং মসজিদ: আতঙ্কে দিল্লী ছাড়ছেন মুসলমানরা

‘দিল্লির দাঙ্গায় মুসলিমবিরোধী ভূমিকায় ছিল পুলিশ’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতের রাজধানী দিল্লি এখন হিন্দুত্ববাদীদের আগুনে পুড়ছে মসজিদ এবং মুসললমানদের ঘরবাড়ি, দোকানপাট। হাতের কাছে যে মুসলমানদের পাওয়া যাচ্ছে তাদেরকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করা হচ্ছে। লুটপাট হচ্ছে তাদের ঘর-বাড়ি। আহতদের হাসপাতালে যেতে দেয়া হচ্ছে না।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, পুলিশের উপস্থিতিতেই এভাবে মুসলমানদের উপর নির্যাতন চালাচ্ছে উগ্রহিন্দুত্ববাদীরা। গত ৩-৪ দিনে চলতে থাকা মুসলিমবিরোধী সহিংসতায় ইতোমধ্যে অর্ধশতাধিক মুসলমান নিহত হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। উত্তর-পূর্ব দিল্লির এলাকাগুলোর অসংখ্য মুসলিমদের বাড়িঘর-দোকানপাটে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। মুসলিমবিরোধী নাশকতার এই আগুন থেকে বাদ পড়েনি মসজিদ-মাজার শরীফও। পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কায় বাড়িঘর ছাড়ছে আতঙ্কিত মুসলমানগণ।

জানা গেছে, উত্তর-পূর্ব দিল্লির মুস্তাফাবাদ এলাকার মুসলমানরা আরও হিন্দুত্ববাদীদের হামলার আশঙ্কায় ব্যাগ-বস্তা নিয়ে বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। এই সহিংসতার শিকার মুসলমানরা জানিয়েছে, সহিংসতার সময় হিন্দুত্ববাদী হামলাকারীদের উৎসাহ দিয়েছে দিল্লী পুলিশ। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে পুলিশ নিজেও মুসলশানদের উপর হামলায় অংশ নিচ্ছে বলে জানা গেছে।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, দিল্লির মুসলিমবিরোধী সহিংসতা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ নিজের ঘরকেও আর নিরাপদ মনে করছেন না। সহিংসতা এই উত্তেজনায় তারা বাড়িঘর রেখে দিল্লি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।

উল্লেখ্য, উগ্র মৌলবাদী হিন্দু নেতা বিজেপি নেতা কপিল মিশ্রের উস্কানিতে গত রোববার থেকেই ভারতের উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে মুসলিমদের টার্গেট করে ব্যাপক সহিংসতার সৃষ্টি হয়েছে। বেছে বেছে স্থানীয় শত শত মুসলিম ব্যবসায়ীদের দোকানে অগ্নিসংযোগ ভাংচুর এবং লুটপাট করা হয়েছে বলে ভারতীয় বিভিন্ন সুত্র জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছে, মুজাফফরনগরের আদলে দিল্লীতে বসবাসরত মুসলিমদের উপর হামলার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আর এক্ষেত্রে দিল্লী পুলিশের অবস্থান নিয়েও ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় মুসলিমদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ এবং মুসলিমদের বাড়িতে ঢুকে নারীদের শ্লীলতাহানী করার হলেও এ ব্যাপারে পুলিশ সম্পূর্ণ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে বলে তারা জানিয়েছে।

সুত্রে জানা গেছে, মুসলমানদের ঘর-বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, মসজিদে আগুন দিয়ে মিনারের চূড়ায় হনুমানের পতাকা লাগিয়ে দিয়েছে উগ্র হিন্দুরা। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন দুই শতাধিক মুসলমান।

প্রত্যক্ষদর্শী ফয়সাল মোহাম্মদ আলী জানিয়েছে, সংঘর্ষকারী হিন্দুদের অনেকের হাতে বন্দুক দেখা গেছে এবং তাদের হিন্দুত্ববাদী সেøাগান দিতে দেখা গেছে। সহিংসতা হয়েছে মূলত উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে। এসব এলাকার সড়কগুলো এখন অনেকটা ধ্বংসস্তূপের মতো রূপ নিয়েছে, রাস্তায় পুড়ছে যানবাহন, উড়ছে ধোঁয়া- বলেন সংবাদদাতা ফয়সাল মোহাম্মদ আলী। হামলার মুখে অনেকেই বাড়িঘর ছাড়ছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, তারা পুড়ে যাওয়া মসজিদ দেখেছেন, যেখানে মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার পাতা। ব্যাপক প্রচার হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে একদল সন্ত্রাসী লোক মসজিদের মিনারে উঠছে। মসজিদের মাইক ভেঙ্গে ফেলে। তারপর মিনারের চূড়ায় চাঁদ-তারা খচিত ফলক উপড়ে ফেলে সেখানে হনুমান পতাকা টানিয়ে দেয়। অন্য একজন ভারতের পতাকা নিয়ে এসে মিনারে টানিয়ে দেয়। মসজিদে অগ্নি সংযোগের পর আশেপাশের সব দোকানে লুটপাট চালানো হয় বলে স্থানীয়রা জানায়।