হঠাৎ অস্থির ডলার বাজার

৭ মাসে মধ্যপ্রাচ্য থেকে রেমিট্যান্স

নিজস্ব প্রতিবেদক: আন্তঃব্যাংক লেনদেনেই (ব্যাংকগুলোর নিজেদের মধ্যে কেনাবেচা) ডলারের দর ৮৫ টাকায় উঠেছে। ব্যাংকগুলো নগদ ডলার বিক্রি করছে ৮৭ টাকার বেশি দরে। খোলাবাজারে আরও বেশি; এক ডলারের জন্য গুণতে হচ্ছে ৮৭ টাকা ৪০ পয়সা।

মাসখানেক ধরে ডলারের বাজার চড়া। ৩১ অক্টোবর আন্তঃব্যাংক লেনদেনে ডলারের ছিল ৮৪ টাকা ৭০ পয়সা। অল্প অল্প বেড়ে বৃহস্পতিবার তা ৮৫ টাকা হয়েছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক গত বৃহস্পতিবার ৮৭ টাকা দরে নগদ ডলার বিক্রি করেছে। অন্যদিকে খোলাবাজারে (কার্ব মার্কেটে) ডলার বিক্রি হয়েছে ৮৭ টাকা ৩০ পয়সায়।

আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে পাঁচ মাস আগে ৩১ অক্টোবর ডলার বিক্রি হয়েছিল ৮৪ টাকা ৫০ পয়সায়। এক বছর আগে ছিল ৮৩ টাকা ৯০ পয়সা।

মতিঝিলে কার্ব মার্কেটের ডলার ব্যবসায়ী রিপন মিয়া বলেন, ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলারের সঙ্কট না থাকলেও খোলাবাজারে সরবরাহ কমে গেছে। আবার চাহিদাও অনেক। এ কারণেই দর চড়া।

অর্থনীতির গবেষক আহসান এইচ মনসুর খোলা বাজারে ডলারের দর বৃদ্ধি নিয়ে বলেন, সাম্প্রতিক দুর্নীতিবিরোধী অভিযানকে ঘিরে যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে, তাতে একটি গোষ্ঠীর মধ্যে বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা বেড়ে গেছে। আবার অনেকে দেশে থাকলেও টাকা পরিবর্তন করে ডলার করে রাখছেন।

এ ক্ষেত্রে বেশিরভাগ লোকই খোলাবাজার থেকে ডলার কিনছেন। কারণ, ব্যাংক থেকে ডলার কিনতে গেলে তার জন্য নানা কাগজপত্র লাগে। কিন্তু খোলাবাজার থেকে সহজে টাকা দিয়ে ডলার কেনা যায়। এ পরিস্থিতিতে খোলাবাজারে ডলারের চাহিদা বাড়লেও সে অনুযায়ী সরবরাহ নেই। এ কারণেই চাপ বেড়ে গেছে।

এক মাস আগেও খোলাবাজারে প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য ছিল ৮৫ টাকা ৫০ পয়সা। গত মঙ্গলবার প্রতি ডলার ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা পর্যন্ত উঠেছিল বলে জানান ব্যবসায়ী রিপন।

খোলাবাজারে ডলার আসে মূলত বিদেশফেরতদের কাছ থেকে। তারা দেশে যে ডলার নিয়ে আসেন, তা খোলাবাজারে বিক্রি করে দেন। মানি চেঞ্জারগুলোও বিদেশফেরত লোকজনের কাছ থেকে ডলার কিনে থাকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকও ডলারের চাহিদার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বাজারে ডলার ছাড়ছে। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের পাঁচ মাসে (১ জুলাই থেকে ২৮ নভেম্বর) ৩০ কোটি ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মধ্যে জুলাই মাসে বিক্রি করে ৩ কোটি ৬০ ডলার, আগস্টে ২ কোটি ৩০ লাখ ডলার।

চাহিদা না থাকায় সেপ্টেম্বরে কোনো ডলার বিক্রি করেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। অক্টোবরের মাঝামাছি সময় থেকে চাহিদা বেড়েছে বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

সাধারণত ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে চাহিদা তৈরি হলে ডলার বিক্রি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ব্যাংকগুলোর কাছে ২৩৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার বিক্রি করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

ডলারের দাম আরও বাড়ানোর পক্ষপাতি আহসান মনসুর বলেছেন, বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম ৮ থেকে ১০ শতাংশ বাড়াতে হবে। চীন, ভারত, ভিয়েতনামসহ প্রতিযোগী দেশগুলো তাদের রপ্তানিকারক ও প্রবাসীদের সুবিধা দিতে তাদের মুদ্রার মান কমিয়েছে।  ডলার শক্তিশালী করা ছাড়া আমাদের সামনে আর কোনো বিকল্প পথ খোলা নেই। অর্থনীতির স্বার্থেই এটা করতে হবে।

দীর্ঘদিন ডলার-টাকার বিনিময় হার ধরে রাখা ঠিক হয়নি মন্তব্য করে ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান মনসুর বলেন, অনেক পিছিয়ে গেছি আমরা। আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলো বিশ্ববাজার দখল করতে তাদের মুদ্রার মান অনেক কমিয়েছে; আমরা করিনি।

এখন টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বাড়াতে ‘বড় ধরনের অ্যাকশনে’ যাওয়ার পক্ষপাতি তিনি। তার হিসাবে, ডলারের দর এখন ৯৩ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৯১ টাকা ৮০ পয়সা হওয়া উচিৎ।