স্বাস্থ্যকর্মীদের মনোবল ফিরিয়ে আনা ও সেবা অব্যহত রাখতে কিছু প্রস্তাবনা

করোনা মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকার নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে ।অধিকাংশ ক্ষেত্রে গ্রহণীয় পদক্ষেপ করোনা মোকাবেলায় প্রশংসা পেয়েছে ।মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি । স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতা পরিলক্ষিত হচ্ছে আবার অনেক ক্ষেত্রে বিলম্বে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হচ্ছে, যা সরকারের অনেক অর্জনকে ম্লান করে দিচ্ছে ।তাই গৃহীত সিদ্ধান্তের সাথে নিম্নের পদক্ষেপ গুলো গ্রহন ও জোরদার করা হলে চিকিৎসক ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী আরোও উৎসাহিত হয়ে করোনা মোকাবেলায় আন্তরিকভাবে কাজ করবেন বলে আশা প্রকাশ করছি ।স্বাস্থ্যকর্মীদের মনোবল ফিরিয়ে আনা ও সেবা অব্যহত রাখতে কিছু প্রস্তাবনা :

১। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর করোনা মোকাবেলায় মাঠ পর্যায়ে চিকিৎসকদের সাথে পরামর্শের পরিপ্রেক্ষিতে সমন্বিত ভাবে সিদ্ধান্তগ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
২।করোনা মোকাবেলায় স্বাস্থ্যকর্মীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে উৎসাহ প্রদান করতে হবে। অতিরিক্ত ঝুকি থাকায় স্বাস্থ্য কর্মীদের মাঝে স্বাস্থ্য বিমা প্রদান করা যেতে পারে।
৩।সকল হাসপাতালে চিকিৎসা প্রদান কার্যক্রম পরিচালনার জন্য চিকিৎসকের পাশাপাশি নার্স ,ওয়ার্ড বয় ,আয়া, পরিচ্ছন্নতাকর্মী সহ অন্য কর্মীদের সর্বোচ্চ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
৪।করোনা জাতীয় কমিটিতে ভাইরোলজি , জনস্বাস্থ্য , মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও ঘোষিত করোনা হাসপাতালের পরিচালকবৃন্দকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে । এই কমিটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে চিকিৎসা বিষয়ক সকল বিষয়ে অবহিত করবেন ।
৫। প্রত্যেক বিভাগীয় শহরে সকল সুযোগ সুবিধাসহ পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল নির্মাণ করতে হবে। সেখানে আইসোলেশন ওয়ার্ড , আইসিইউ, অভিজ্ঞ চিকিৎসক ও নার্সসহ অন্যান্য স্টাফ , পর্যাপ্ত পি পি ই, অক্সিজেন সিলিন্ডার ও এ্যাম্বুলেন্স সুবিধা থাকতে হবে । স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালকের মাধ্যমে বিভাগের কার্যক্রম পরিচালিত হবে। পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করতে হবে।
৬। করোনা হাসপাতালের চিকিৎসকসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের বাসস্থান, খাবার ও পর্যাপ্ত পিপিই ব্যবস্থা করতে হবে। হাসপাতালে চিকিৎসকদের জন্য সরকারি গাড়ির ব্যবস্থা রাখতে হবে।
৭।প্রত্যেক হাসপাতালে জরুরী বিভাগের চিকিৎসা ব্যতীত অন্যান্য সেবা সীমিত আকারে থাকতে হবে ।জরুরী বিভাগে পর্যাপ্ত পিপিই সরবরাহ করতে হবে । অবশ্যই প্রতিটি হাসপাতালে প্রবেশের পূর্বে একটি করে জীবাণুনাশক রুম থাকতে হবে ।
৮।সকল জরুরী সার্জারীর পূর্বে কোভিড -19 টেষ্ট করতে হবে।
৯।সকল সরকারী মেডিকেল কলেজে কোভিড 19 এর টেষ্ট করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং নিরবিচ্ছিন্নভাবে পিপিই সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে ।
১o।সকল চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের উপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করছে কি না তা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দেখভাল করবেন ।দায়িত্বে কারও অবহেলা
দেখা গেলে তদন্ত সাপেক্ষে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন ।
১১।পিপিই এর সকল উপাদানের গুনগত মান 100%
নিশ্চিত করতে হবে । প্রতিটি হাসপাতাল ওয়াশিং মেশিনের মাধ্যমে যথাযথ ভাবে পরিস্কার করে পুনরায় ব্যবহার করতে হবে ।অবশ্যই পিপিই র অপব্যবহার গ্রহণ যোগ্য হবে না ।কার্যক্রমটি সরকারী ব্যবস্থাপনায় রাখতে হবে ।
১২।সকল কোভিড 19 রোগীদের যাবতীয় তথ্য সকল হাসপাতালে ই- মেইল যোগে পাঠাতে হবে ।এটি জরুরী বিভাগের স্বাস্থ্যকর্মীদের মাঝে এলাকা ভিত্তিক অগ্রিম সতর্কতা নেওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করবে ।
১৩।সারাদেশে আইসিইউ পরিচালনার জন্য সরকারী এবং বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত সকল আইসিইউ বিষয়ক অভিজ্ঞদের নিয়ে একটি তালিকা প্রণয়ন করতে হবে ।অবশ্যই এক্ষেত্রে তরুণ ও মাঝ বয়সী চিকিৎসকদের প্রাধান্য দিতে হবে ।
১৪।চিকিৎসকদের জন্য ১00 কোটি টাকা ঘোষণা করাতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি ।এই অর্থ ব্যক্তিগত ভাবে চিকিৎসকদের জন্য ব্যয় না করে এই অর্থ দিয়ে শুধুমাত্র স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য ঢাকাতে একটি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল নির্মাণ করা যেতে পারে ।যা হবে চিকিৎসকদের অন্যতম পাওয়া।
১৫।প্রাইভেট হাসপাতালে জরুরী চিকিৎসা চালু থাকবে ।সীমিত আকারে পিপিই সহ বহির্বিভাগ চালু থাকতে পারে ।করোনা মোকাবেলার জন্য সকল বেসরকারী হাসপাতালকে বিধি মোতাবেক প্রস্তুত রাখার জন্য সরকারি আদেশ দেওয়া যেতে পারে ।
১৬।সকল সরকারী চিকিৎসককে করোনা মোকাবেলায় ধাপে ধাপে কাজে লাগাতে হবে ।প্রয়োজনে তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে ।পর্যায়ক্রমে বেসরকারী চিকিৎসককে কাজে লাগানো যেতে পারে ।
১৭।সকল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ভিডিও অথবা অনলাইনের মাধ্যমে রোগীর চিকিৎসা প্রদান করবেন ।
১৮।যে সকল জেলা অথবা বিভাগে করোনা কমিউনিটি ট্রান্স মিশন হয়ে গেছে সে সকল স্থানে মাঠ পর্যায়ের স্বাস্থ্য সেবা বন্ধ করে সে সকল কর্মীদের করোনা হাসপাতালে সেবা প্রদানের জন্য সংযুক্ত করা যেতে পারে ।
১৯।করোনা চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ মতামত ব্যতিত অন্যান্য মতবাদ প্রচারে গণমাধ্যমের ভূমিকার দিকে নজর দারি করতে হবে ।

লেখক :ডা.ইফতেখার হোসেন চৌধুরী অনি