“সুস্থ্য থাকতে পবিত্র সুন্নতি সামগ্রী ব্যবহারের বিকল্প নেই”: আন্তর্জাতিক সুন্নত প্রচারকেন্দ্র

“সুস্থ্য থাকতে পবিত্র সুন্নতি সামগ্রী ব্যবহারের বিকল্প নেই”

নিজস্ব প্রতিবেদক: সারাবিশ্বে পবিত্র সুন্নত মুবারক ব্যাপকভাবে প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে পবিত্র রাজারবাগ দরবার শরীফ উনার পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্রের উদ্যোগে আজ জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে সুন্নতি খাবার, তৈজসপত্র, পোশাক-পরিচ্ছদসহ বিভিন্ন সুন্নতি সামগ্রীর এক বিশেষ প্রদর্শনী ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রদর্শনীতে শতাধিক পবিত্র সুন্নতি সামগ্রী প্রদর্শিত হয়।

আলোচনা সভায় পবিত্র সুন্নত মুবারক উনার ফাযায়িল-ফযীলত এবং পবিত্র সুন্নত মুবারক জারীকরণে ঢাকা রাজারবাগ শরীফের মহাসম্মানিত শায়খ মুজাদ্দিদে আযম, সুলতানুন নাছীর, আহলু বাইতি রসুলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুরশিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার অবদান তুলে ধরেন দৈনিক আল ইহসান ও মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার বিশিষ্ট কলামিষ্ট মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম এবং মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ গবেষণা কেন্দ্রের অন্যতম গবেষক ও মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ মাদরাসার মুহাদ্দিছ মুহম্মদ ফজলুল হক্ব। এছাড়া ব্যবহারিক জীবনে পবিত্র সুন্নত মুবারক উনার উপকারিতা এবং অপরিহার্যতা নিয়ে গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, বিশিষ্ট গবেষক, ফার্মাসিষ্ট এবিএম রুহুল হাসান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মুহম্মদ আবু বকর সিদ্দীক হাসান।

আলোচনায় মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালিন, ইমামুল মুরসালিন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যে ব্যক্তি আমার পবিত্র সুন্নত মুবারক উনাকে মুহব্বত করলো সে আমাকে মুহব্বত করলো। আর আমাকে যে মুহব্বত করলো সে আমার সাথেই পবিত্র জান্নাতে থাকবে।” সুবহানাল্লাহ! তাই যে ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দেখানো আদর্শ তথা মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক অনুযায়ী স্বীয় জীবনকে পরিচালিত করবে এবং মুহব্বত করবে, সে জান্নাত লাভ করবে। সুবহানাল্লাহ! আর এই পবিত্র সুন্নত মুবারক উনার ব্যাপক সমাহার রয়েছে, রাজারবাগ দরবার শরীফে।
পবিত্র সুন্নতের উপকারিতা এবং অপরিহার্যতা নিয়ে আলোচনায় বিশিষ্ট গবেষক, ফার্মাসিষ্ট এবিএম রুহুল হাসান বলেন, সুস্থ্য থাকতে পবিত্র সুন্নতি সামগ্রী ব্যবহারের বিকল্প নেই। এ প্রসঙ্গে তিনি পবিত্র হাদীস শরীফের উদ্বৃতি দিয়ে তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মৃত্যু ছাড়া এমন কোন রোগ নেই কালোজিরায় যার আরোগ্যতা নেই।” (মুসলিম শরীফ: কিতাবুস সালাম: হাদীছ শরীফ নং ৫৬৬১)
তিনি আরো বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা অবশ্যই চোখে ইসমিদ সুরমা ব্যবহার করবে। কেননা তা চোখের ময়লা দূর করে, দৃষ্টিশক্তি বাড়ায় এবং চোখের পাতায় লোম গজায়।” (ইবনে মাজাহ শরীফ: হাদীছ শরীফ নং ৩৪৯৫)

তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, সিরকা কতোইনা উত্তম খাদ্য, হে মহান আল্লাহ পাক! সিরকার উপর আপনার অশেষ রহমত বিদ্যমান কেননা এটি আমার, পূর্ববর্তী নবী রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরও খাদ্য ছিল এবং যে ঘরে সিরকা থাকবে সে ঘর কখনো দারিদ্রতার মুখ দেখবেনা।” (ইবনে মাজাহ শরীফ: কিতাবুত ত্ব‘য়ামাহ্: হাদীছ শরীফ নং ৩৩১৮)

আলোচনায় হাফিযুল হাদীস, মুফতি মুহম্মদ ফজলুল হক্ব বলেন, একজন বান্দা-বান্দীর কামিয়াবী নির্ভর করে সাইয়্যিদুল মুরসালিন, ইমামুল মুরসালিন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসরনের উপর। উনাকে যে যত বেশি অনুসরণ করবে সে ততবেশি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের রেযামন্দি সন্তুষ্টি মুবারক অর্জন করতে পারবে। মূলত, পবিত্র সুন্নত মুবারক উনার আমলের মাধ্যমে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মুহব্বত করা সম্ভব। কেননা মুহব্বতের অপর নাম অনুসরণ, এখন কোনো ব্যক্তি যদি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অনুসরণ করতে পারে, তাহলে তার জন্য নাজাত অবধারিত। সুবহানাল্লাহ!

তিনি আরো বলেন, রাজারবাগ দরবার শরীফের আন্তর্জাতিক মহাপবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্রে সর্ব প্রকার সুন্নতি সামগ্রী পাওয়া যায়। এছাড়া সারা দেশব্যাপী ভ্রাম্যমান ও জেলাভিত্তিক সুন্নত সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্রের গাড়ী এবং অনলাইনে এসব সুন্নতি সামগ্রীর চাহিদা পেশ করা যায়।

প্রদর্শনীতে আন্তর্জাতিক মহাপবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্রের উদ্যোগে শতাধিক সুন্নতী সামগ্রীর প্রদর্শনী করা হয়। সুন্নতী দ্রব্যসামগ্রীর মধ্যে পুরুষদের পোষাক: সুন্নতী কুম্মাহ বা টুপি, সুন্নতী কিনায়া, সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তা, সুন্নতী ইযার বা লুঙ্গী, সুন্নতী সেলোয়ার, সুন্নতী ইমামাহ বা পাগড়ী, সুন্নতী মাথার রুমাল, সুন্নতী আবা বা জুব্বা, লিবাসুশ শীতা বা শীতকালীন পোষাক, সুন্নতী হুবরাহ বা চাদর, সুন্নতী খুফ্ফুন বা মোজা, সুন্নতী না’লাইন বা সেণ্ডেল।

মহিলাদের পোষাক: সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তা, সুন্নতী সেলোয়ার, সুন্নতী ওড়না, সুন্নতী হিজাব বা বোরকা, সুন্নতী খুফ্ফুন লিলইয়াদ বা হাত মোজা, সুন্নতী খুফ্ফুন লিররিজলি বা পা মোজা, সুন্নতী না’লাইন বা সেণ্ডেল। প্রশাধনী- সুন্নতী আতর বা সুগন্ধি, ইসমিদ সুরমা, তাসবীহ, মেসওয়াক, মেহেদী।

তৈজষপত্র: সুন্নতী প্লেট, সুন্নতী ক্বদহুন বা পেয়ালা, সুন্নতী লবনদানী, সুন্নতী সুফর বা দস্তরখানা, চামড়ার সুন্নতী মশক, খিলাইল, ধুন্দলের ছোবড়া, ঝামা পাথর।

আসবাবপত্র: সুন্নতী সারীর বা চকি, সুন্নতী উইসাদাহ বা বালিশ, সুন্নতী চাটাই, সুন্নতী মিম্বর, সুন্নতী আসা বা লাঠি, হাতির দাতের সুন্নতী চিরুনী, পিতলের বদনা, মাটির পাত্র, সিককীন বা ছুরি।

পানীয়: মাউন বা পানি, হালীব বা দুধ, খল বা সিরকা, মধু বা আসাল, নাবীয বা খেজুরের শরবত।

ফল-ফলাদী: তামর বা খেজুর, খুরমা বা শুকনা খেজুর, আনাব বা আঙ্গুর, যাবীব বা কিশমিশ, রুম্মান বা আনার/ বেদানা, তীন বা ডুমুর, যাইতুন, মাওযুন বা কলা, আপেল, সফরজল, বিত্তীখ বা তরমুজ, বরই।

শস্য ও ফসল: হাব্বাতুস সাওদা বা কালোজিরা, মেথি, কিছ্ছা বা শসা, কদু, কচু, ডাল, বীটরুট, ঘৃতকুমারী, বেগুন, লেবু, সরিষা, মিষ্টিকুমড়া, মাসরুম, হেলেঞ্চা শাক, মূলা, গাজর।

তৈল: জয়তুনের তেল, কালিজিরার তৈল, সরিষার তেল।

মসলা: পিঁয়াজ, মরিচ, রসুন, আদা, গোল মরিচ, মৌরী, ধনিয়া, জিরা, বাদাম, আখরোট।

খাবার: শায়ীর বা যব, বুর বা গম, রুযযুন বা চাল, মিলহুন বা লবন, যুবনাহ বা পনির, যুব্দাহ বা মাখন, সাওয়ীক্ব বা ছাতু, বাইদ্বা বা ডিম, চর্বি, মাছ, ভাত, লাহমুন বা গোশত, ছারীদ, তালবীনাহ, হাইসাহ্, হারীসাহ্, খ্বুবযুশ শায়ীর বা যবের রুটি, খুবযুল বুর্রি বা গমের রুটি, হালুয়া ইত্যাদি।

বক্তারা বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বতামুন্ নাবিয়্যীন, রহমতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক সম্মানার্থে অনন্তকালব্যাপী জারীকৃত পবিত্র সাইয়্যিদুল আইয়াদ শরীফ মাহফিল উনার মধ্যে বিশেষ আয়োজন হিসেবে আগামী ২৮শে মুহররম শরীফ ১৪৪৩ হিজরী মুতাবিক ৮ই রবি’ ১৩৮৯ শামসী বা ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ঈসায়ী তারিখ হতে রাজারবাগ দরবার শরীফে শুরু হতে যাচ্ছে ৬৩ দিনব্যাপী বিশেষ মাহফিল। মুসলিম উম্মাহ সকলের উচিত উক্ত বেমেছাল বরকতময় মাহফিলে অংশগ্রহণ করা। সে মাহফিলেও রুইয়াতুস সুন্নাহ বা সুন্নতি সামগ্রীর প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। সেখান থেকেও পবিত্র সুন্নতী সামগ্রী সংগ্রহ করা যায়। সুবহানাল্লাহ!