সিনহা হত্যাকাণ্ড পূর্বপরিকল্পিত : আদালত

সিনহা হত্যাকাণ্ড পূর্বপরিকল্পিত : আদালত

কক্সবাজার সংবাদাতা : সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যাকাণ্ডকে পূর্বপরিকল্পিত বলে মন্তব্য করেছেন আদালত। সোমবার (৩১ জানুয়ারি) বিকেলে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল রায়ের পর্যবেক্ষণে এ মন্তব্য করেন।

সিনহা হত্যা মামলায় কক্সবাজারের টেকনাফের বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ দাশের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

বিকেল সোয়া ৪টার দিকে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল এ রায় দেন। হত্যা মামলার রায়ে ৬ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৭ জনকে খালাস দিয়েছেন আদালত।

যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত (৩০), সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. লিটন মিয়া (৩০), ওসি প্রদীপের দেহরক্ষী রুবেল শর্মা (৩০), কনস্টেবল সাগর দেব, স্থানীয় বাসিন্দা বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের মো. নুরুল আমিন (২২), মো. নিজাম উদ্দিন (৪৫) ও মোহাম্মদ আইয়াজ (৪৫)।

খালাসপ্রাপ্তরা হলেন- কনস্টেবল ছাফানুর করিম (২৫), মো. কামাল হোসাইন আজাদ (২৭), মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন, এপিবিএনের এসআই মো. শাহজাহান আলী (৪৭), কনস্টেবল মো. রাজীব হোসেন (২৩), আবদুল্লাহ আল মাহমুদ (২০)।

এর আগে দুপুর পৌনে ২টার দিকে ওসি প্রদীপসহ ১৫ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। দুপুর ২টা ২৫ মিনিটের দিকে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল ৩০০ পৃষ্ঠার রায়ের সার সংক্ষেপ পড়া শুরু করেন। রায় পড়া শেষ হয় বিকেলে সোয়া ৪টায়।

এদিকে মামলার রায় ঘোষণা ঘিরে আদালতপাড়ায় উৎসুক মানুষের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। সকালে সিনহার বোন ও আসামিদের স্বজনরা আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত হন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আলোচিত এ রায়কে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষ, আইনজীবী, পুলিশ ও সাংবাদিকদের উপস্থিতিও বাড়তে থাকে।

এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যানারে ৪০ থেকে ৫০টি পরিবারের সদস্যরা ওসি প্রদীপের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন করেন। তারা কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত ও হয়রানির শিকার পরিবারের সদস্য।

গত ১২ জানুয়ারি রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন শেষে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালত রায় ঘোষণার জন্য আজকের দিন দিন ধার্য করেছিলেন।

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের টেকনাফের বাহারছড়া চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে খুন হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।

এ ঘটনার পাঁচদিন পর ওই বছরের ৫ আগস্ট নিহত সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের তৎকালীন ইনচার্জ লিয়াকত আলীকে প্রধান আসামি এবং টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে ২য় আসামি করে ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় র‍্যাব।

চার মাসের বেশি সময় ধরে চলা তদন্তের পর ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকাণ্ডকে ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

চার মাসের বেশি সময় ধরে চলা তদন্তের পর ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকাণ্ডকে ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।