সিটি নির্বাচনের পোস্টার থেকেই ২৫শ টন বর্জ্য

পুনর্মূল্যায়নে অনুমতি পেয়েছে সিটি করপোরেশন

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারণা পর্ব চলছে পুরোদমে। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। উত্তর ও দক্ষিণ অংশে বিভক্ত ঢাকার দুই মেয়র নির্বাচনের এ আনুষ্ঠানিকতা ঘিরে বহু আগে থেকেই চলে আসছিল নির্বাচনী আমেজ, ব্যানার-পোস্টারে অনানুষ্ঠানকিভাবে আসলে বেশ আগে থেকেই চলছিল নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা।

আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরুর পর তো লেমিনেটেড পোস্টারে সয়লাভ পুরো ঢাকা। এ নির্বাচনের প্রচারণা শুরুর প্রায় ১২ দিনের মধ্যেই ২ হাজার ৪৭২ টন লেমিনেটেড প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়েছে। পুরো নির্বাচনে পোস্টার থেকে বর্জ্য জমবে ২ হাজার ৫০০ টন। এছাড়া নির্বাচনী পোস্টারসহ সব মিলে গত বছরজুড়ে ঢাকা শহরে ১০ হাজার টন লেমিনেটেড পোস্টারের বর্জ্য তৈরি হয়েছে।

এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডো) বাংলাদেশে লেমিনেটেড পোস্টার, লিফলেট, স্টিকার ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে ‘থার্মাল লেমিনেশন ফিল্মস : অ্যান ইনসিজিং হেল্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট হ্যাভক অব ঢাকা সিটি’ শীর্ষক একটি গবেষণা সম্পন্ন করেছে। ওই গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। মঙ্গলবার দুপুরে লালমাটিয়ায় নিজেদের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।

নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে ‘গ্রিন ঢাকা’র স্বপ্নবাজরাই ঢাকা ঢেকেছে পলিথিনের পোস্টারে। পরিবেশবাদীরা বলছে, যাদের হাতে পরিচ্ছন্ন ও বাসযোগ্য নগরী গড়ার দায়িত্ব যাবে, তারাই যদি নগরীর পরিবেশের ক্ষতিকর কার্যক্রমে জড়িয়ে যান, তাহলে এ নগরী রক্ষা করবে কে, পরিচ্ছন্ন রাখবে কে? এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন ও সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না বলেও অভিযোগ পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতাদের।

এ ব্যাপারটি গড়িয়েছে আদালত অব্দিও। সারাদেশে নির্বাচন ও অন্যান্য ক্ষেত্রে পলিথিনে মোড়ানো পোস্টার ছাপা ও প্রদর্শন কেন বেআইনি নয়, তা জানতে গত ২২ জানুয়ারি রুল জারি করে হাইকোর্ট।

এসডো বলছে, ঢাকা শহরে প্রতি বছর বিভিন্ন উৎস থেকে গড়ে প্রায় ১০ হাজার টনের ওপর লেমিনেটেড প্লাস্টিকের বর্জ্য উৎপন্ন হয়, যা মানবস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। গবেষণা মতে, ২০১৯ সালে ৭ হাজার ১৪৫ দশমিক ২ টন লেমিনেটেড প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়েছে। ২০২০ সালে আনুমানিক ১০ হাজার ৪৩৮ টন উৎপন্ন হবে যেগুলো পূর্ণ প্রক্রিয়াজাতকরণ (জবপুপষব) সম্ভব নয়। বিশেষ করে অমর একুশে বইমেলা ও অন্যান্য বাণিজ্যিক প্রদর্শনীতে লেমিনেটেড পোস্টার, লিফলেট এবং স্টিকার বিতরণ নিষিদ্ধ করতে কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে এসডোর চেয়ারপারসন সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ বলেন, এসডো ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনী প্রচারণায় লেমিনেটেড পোস্টার এবং অন্যান্য ‘প্লাস্টিক কোটেড’ পণ্য ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে গবেষণা শুরু করে। ২২ জানুয়ারি উচ্চ আদালতের আদেশ অনুসারে কর্তৃপক্ষকে তাৎক্ষণিকভাবে পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানানো হয়। তিনি বলেন, উচ্চ আদালত বিভাগ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে উৎপাদিত এবং বিলি করা লেমিনেটেড পোস্টারের বর্জ্য যথাযথভাবে ব্যবস্থাপনার নির্দেশ দেন। এসডো আশাবাদী পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে এ ধরনের প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেয়া হবে।

সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ বলেন, পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে এসডো ও অন্যান্য এনজিও প্লাস্টিক দূষণ রোধে হাইকোর্টে এক রিট আবেদন করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ পলিথিন ব্যাগ নিষেধাজ্ঞার যথাযথ বাস্তবায়ন এবং ২০২১ সালের মধ্যে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বন্ধের আদেশ জারি করে আদালত।

এ বছর নির্বাচনী পদপ্রার্থীরা প্রচারণার উদ্দেশ্যে আনুমানিক ৩০৪ মিলিয়ন প্লাস্টিক লেমিনেটেড পোস্টার ছেপেছেন। এছাড়া প্রচারণায় ব্যবহৃত স্টিকার, সাধারণ কার্ড, স্বেচ্ছাসেবকের পরিচয়পত্র তৈরিতেও লেমিনেটেড প্লাস্টিকের ব্যবহার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর প্রায় ১২ দিনের মধ্যেই ২৪৭২ টন লেমিনেটেড প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়েছে। অন্যদিকে দৈনিক খবরের কাগজ ঢাকা শহরে লেমিনেটেড প্লাস্টিক ছড়ানোর আরেকটি উৎস বলে অভিহিত করা হয়েছে এসডোর গবেষণায়।

গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, সর্বাধিক প্রচলিত খবরের কাগজগুলোর সাথে দৈনন্দিন হারে অন্ততপক্ষে একটি করে বিজ্ঞাপনী প্রচারপত্র দেয়া হয়। খবরের কাগজগুলোর সাথে থাকা বিজ্ঞাপনী প্রচারপত্র থেকেই প্রায় বছরব্যাপী ২২৭ টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়। গবেষণাটিতে ১১টি প্রধান বাংলা ও ইংরেজি দৈনিক সংবাদপত্র বিবেচনা করা হয়।

এসডোর মহাসচিব ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, প্রাথমিক ব্যবহারের পরে ফেলে দেয়া এ বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্য প্লাস্টিক দূষণের অংশীদার হবে। এসব একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বর্জ্য নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়াবে, পরিবেশ বিপর্যয় ঘটবে, এছাড়া বায়ু ও পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।