সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা, জেলে পল্লীতে হাহাকার

সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা, জেলে পল্লীতে হাহাকার

পটুয়াখালী সংবাদদাতা: সরকার থেকে আরোপিত সমুদ্রে ৬৫ দিনের মৎস্য আহরণ নিষেধাজ্ঞার ফলে চরম বিপাকে পড়েছে বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন উপকূলের জেলেরা। একদিকে মাছ শিকার বন্ধ, অন্যদিকে লকডাউনের কারণে বিকল্প কাজও নেই। এ কারণে সাগর উপকূলের জেলেদের চরম দুর্দিন যাচ্ছে। সংসারের ব্যায়ভার বহন ও মহাজনের কাছ থেকে আনা দাদনের টাকা শোধ নিয়ে দুচিন্তায় পরেছেন জেলেরা। আয় রোজগারের পথ বন্ধ হওয়ায় দীর্ঘদিন বেকার সময় কাটাতে হচ্ছে। এমন অবস্থায় উপকূলের জেলে পল্লীগুলোতে শত শত জেলে হাহাকার করছে।

মৎস বিভাগ ঘোষিত নিষেধাজ্ঞার আগ থেকেই লকডাউনের কারণে উপকূলে ইলিশ শিকার প্রায় বন্ধ ছিল। গত ২৬ মার্চ দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষিত হওয়ায় বরফ সঙ্কট ও মাছ চালান দিতে না পারায় অনেক জেলেই মাছ ধরতে যেতে পারেনি। এরপরে আবার লকডাউন শিথিল হতে না হতেই ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। এতে প্রায় তিন মাস ধরে ইলিশ শিকার বন্ধ রয়েছে উপকূলের জেলেদের।

জেলেরা জানান, সরকারী নিষেধাজ্ঞার কারণে বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকারে যেতে পারছেন না তারা। এদিকে লকডাউনের কারণে গ্রামেও অন্য কোনো কাজ নেই। বিগত বছরগুলোতে মাছ ধরা বন্ধ থাকলে জেলেরা সমুদ্র থেকে উঠে এসে এলাকায় দিনমুজুরা বা অন্য কোনো কাজ করে সংসার চালাতো। কিন্তু এ বছর লকডাউনের কারণে কোনো কাজ পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে ঘরে বসেই বেকার সময় পার করতে হচ্ছে জেলেদের। সংসারে ব্যায় ভারের একমাত্র মাধ্যম ছিল জেলে পেশা। এখন বিকল্প কোনো আয়ের উৎস না থাকায় বিপাকে পরেছেন তারা। অন্যদিকে মাছের ব্যবসার জন্য মহাজনের কাছ থেকে আনা দাদনের টাকা কিভাবে শোধ করবে, তা নিয়েও চরম দুচিন্তায় রয়েছেন তারা।

জেলেরা আরো জানান, সরকার মৎস আহরণে বিরত থাকা জেলেদের জন্য যে প্রণোদনা দেন তা খুবই সামান্য। এ দিয়ে কোনো মত দু’বেলা ভাত খাওয়া সম্ভব। কিন্তু সংসারের অন্য সব ব্যয়ভার বহন সম্ভব নয়। এর মধ্যে আবার যেসব জেলেদের নিবন্ধন তালিকায় নাম নেই কিন্তু সমুদ্রগামী প্রকৃত জেলে, তারা সরকারী সহায়তা থেকে বঞ্চিত হয়।

গঙ্গীপাড়ার জেলে কাজী বলেন, আমরা ইলিশ শিকারী জেলে। বঙ্গোপসাগরে ইলিশ শিকারই আমাদের পেশা। বছরে তিন-চার বার মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকে। এর মধ্যে আবারো যোগ হয়েছে লকডাউন। এ বছর সাগরে ভালো করে এক মাসও মাছ ধরতে যাইতে পারি নাই। তাহলে আমাগো পুরা বছরের সংসার কীভাবে চালামু। সরকার যে সহায়তা দেয় তাও সামান্য।

চরমোন্তাজ স্লইসঘাট এলাকার জেলে আব্দুল জানান, রাঙ্গাবালী উপজেলায় বিদ্যুৎ না থাকায় এখানে কোনো বরফ কল নেই। ঢাকা ও জেলা শহর পটুয়াখালী থেকে লঞ্চযোগে বরফ আনতে হয়। কিন্তু লকডাউনের কারণে যথাসময়ে বরফ না পাওয়ায় আমরা ধরতে পারি নাই। এছাড়াও লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় মাছ চালান করতে না পেরে আমরা প্রায় দুই মাস যাবৎ ইলিশ ধরতে যাইনি। এরপর লকডাউন উঠানো হলে আবার কিছুদিন মাছ ধরতে সাগরে যাই। জালে ইলিশ ভালোই ধরা পরছিল। কিন্তু হঠাৎ করে আবার ৬৫ দিনের অবরোধ। যার কারণে সাগরে মাছ ধরতে পারছি না। মাছের বোট করার জন্য মহাজনের কাছ যে টাকা এনেছি, এখন সেই টাকা পরিশোধের জন্য মহাজন বারবার চাপ দিচ্ছে। কিন্তু মাছ ধরা বন্ধ, আমরা টাকা পামু কই।

একই এলাকার জেলে কামাল ব্যাপারী জানান, উপকূলের অধিকাংশ মানুষ জেলে। এখানে মাছ ধরাই অনেকের একমাত্র পেশা। এর মধ্যে এই বছর ভালো করে এক মাসও মাছ ধরতে পারে নাই। তাহলে কী দিয়া এখানকার জেলেরা সংসার চালাইবে। ধার দেনায় জর্জরিত হয়ে মানুষ এখন হাহাকার করছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি দেনা নিয়ে খুবি টেনশনে আছি। কী দিয়া দেনা দিমু, কী দিয়া সংসার চালামু আর কী দিয়া ছেলে-মেয়েদের লেখাপাড়া করামু?