সর্বোচ্চ খরচ করে সর্বনিম্ন বেতন বাংলাদেশী শ্রমিকদের

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিদেশ যেতে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি খরচ গুনতে হয় বাংলাদেশি শ্রমিকদের। বেতন কাঠামোতেও তাদের অবস্থান সবার নিচে। ফলে প্রতি বছর বিদেশ যাওয়া লোকের সংখ্যা বাড়লেও সেই অনুপাতে বাড়ছে না রেমিট্যান্স।

অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গণহারে অদক্ষ শ্রমিক বাইরে পাঠানোর ফলে এই বৈষম্য বাড়ছে। এ অবস্থায় শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষ শ্রমিক বিদেশে পাঠানোর ওপর জোর দেন তারা।

সাইফুল নামে কুমিল্লার এক ওমান প্রবাসী বলেন, দালালের মাধ্যমে ৩ লাখ টাকা দিয়ে না জেনে ফ্রি ভিসায় ওমান এসেছিলাম ২০১৩ সালে। ওমানের বৈধ ভিসা না থাকায় এখন কোনো কোম্পানিতেই কাজে নিচ্ছে না, এমনকি দেশেও যেতে পারছেন না তিনি। তার মতো এমন অবৈধ বাংলাদেশি প্রায় এক লাখের মতো হবে বলে জানান তিনি। এরা সবাই আউট পাসের অপেক্ষায় অধীর আগ্রহ নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন।

জানা গেছে, প্রতি বছর প্রায় সাত থেকে আট লাখ মানুষ বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। এদের মধ্যে অধিকাংশই মধ্যপ্রাচ্যে যাচ্ছেন। যাদের বেশিরভাগ আবার না জেনে ফ্রি ভিসায় যান। কেউ কেউ কোম্পানির ভিসায় গেলেও কাজ না জেনে অদক্ষ হয়ে যাওয়ার কারণে ভোগান্তিতে পড়ছেন পদে পদে।

প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ২০১৪ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত বছরে গড়ে রেমিট্যান্স এসেছে ১৩০০ থেকে ১৬০০ কোটি ডলার। অথচ বাংলাদেশের চেয়ে পাঁচ লাখ কর্মী কম পাঠিয়েও ভারত রেমিট্যান্স পেয়েছে বাংলাদেশের প্রায় চারগুণ। নেপাল বাংলাদেশের চারভাগের একভাগ লোক বাইরে পাঠিয়ে উপার্জন করছে ৯ বিলিয়ন ডলার। আর বাংলাদেশের অর্ধেক লোক পাঠিয়ে বাংলাদেশের দ্বিগুণ রেমিট্যান্স আয় করে ফিলিপাইন। দক্ষ জনশক্তি পাঠাতে না পারায় বাংলাদেশ পিঁছিয়ে পড়ছে বলে মনে করেন এই খাতের বিশেষজ্ঞরা।

বিশ্ব ব্যাংকের হিসাব মতে, বিদেশ যেতে পৃথিবীতে বাংলাদেশি শ্রমিকদেরই সবচেয়ে বেশি টাকা গুণতে হয়। ব্যাংকটির বিবেচনায়, অভিবাসনের সর্বোচ্চ ব্যয় ধরা আছে মাত্র ২০০ ডলার। তবে তথ্য বলছে, ভারতীয় শ্রমিকদের বিদেশ যেতে খরচ হয় গড়ে এক লাখ ৮০ থেকে দুই লাখ টাকা। নেপালের ক্ষেত্রে যেটা একলাখেরও নিচে। আর ফিলিপাইন সরকারতো ঘোষণাই দিয়েছে অভিবাসন ব্যয় শূন্যের কোটায় নিয়ে আসার। অথচ বিপরীত চিত্র বাংলাদেশের। এখানে একজন শ্রমিকের বাইরে যেতে সর্বোচ্চ সাড়ে সাত লাখ টাকা পর্যন্ত গুণতে হচ্ছে। তবে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, সর্বোচ্চ খরচ করে সর্বনিম্ন বেতন পাচ্ছে বাংলাদেশিরাই।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনেকটা বিনাবিনিয়োগে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রেমিট্যান্স আয়ের এই খাতের চলমান সমস্যাগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় না নিলে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের অর্থনীতি সংকটে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।