লোহিত সাগরে আমিরাতের জাহাজ আটকাল হুথি বিদ্রোহীরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: লোহিত সাগর উপকূলে আমিরাতের একটি জাহাজ আটক করেছে হুথি বিদ্রোহীরা। তাদের অভিযোগ- এই জাহাজটি দিয়ে তাদের শত্রুপক্ষ সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের জন্য অস্ত্র ও রসদপত্র নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।

অন্যদিকে, সৌদি সরকার এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে এক বিবৃতিতে বলেছে, হুথি বিদ্রোহীরা জাহাজটি ডাকাতি করেছে।

আমিরাতের যে জাহাজটি আটক করেছে হুথিরা, তার নাম রাওয়াবি। সোমবার এক বিবৃতিতে এই আটকের সংবাদ প্রথম নিশ্চিত করে যুক্তরাজ্যের সামরিক বাহিনীর সামুদ্রিক বাণিজ্য দফতর ইউনাইটেড কিংডম মেরিটাইম ট্রেড অপারেশন্স। তবে মেরিটাইম ট্রেড অপারেশন্সের বিবৃতিতে জাহাজটির নাম এবং কারা এটি আটক করেছে তা উল্লেখ করা হয়নি; কেবল বলা হয়েছে, রোববার মধ্যরাতের দিকে লোহিত সাগরের বাণিজ্যিক জলপথে একটি জাহাজ আটক হয়েছে।

সামুদ্রিক বাণিজ্য ও জাহাজ চলাচল বিষয়ক ওয়েবসাইট মেরিনট্রাফিক ডট কম এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, জাহাজটি আটকের পর কয়েক ঘণ্টা স্যাটেলাইটে এটির কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

তারপর সোমবার এক টুইটবার্তায় হুথি বিদ্রোহীগোষ্ঠীর মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারি জানান, লোহিত সাগরে ইয়েমেনের জলসীমা ব্যবহার করে জাহাজটি সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের জন্য অস্ত্র ও সামরিক উপকরণ নিয়ে যাচ্ছিল, এ কারণেই আটক করা হয়েছে জাহাজটি।

এদিকে পাল্টা এক বিবৃতিতে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের পক্ষ থেকে বলা হয়, জাহাজটিতে কোনো সামরিক উপকরণ নয়, বরং ছিল চিকিৎসা সামগ্রী। লোহিত সাগরের দ্বীপ সোকোত্রায় সৌদি ফিল্ড হাসপাতালের জন্য এই চিকিৎসা সামগ্রীগুলো পাঠানো হচ্ছিল।

সৌদি সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তুর্কি আল মালকি বিবৃতিতে হুথি বিদ্রোহীগোষ্ঠীকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘অবশ্যই এবং অবিলম্বে এই জাহাজটি ছেড়ে দিতে হবে হুথি বিদ্রোহীদের। যদি তারা তা না করে, সেক্ষেত্রে শক্তিপ্রয়োগসহ প্রয়োজনীয় যেসব পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন- সবই নেবে সামরিক জোট।’

এই নিয়ে চতুর্থবারের মতো লোহিত সাগরে জাহাজ আটকাল হুথি বিদ্রোহীরা। সর্বপ্রথম ২০১৬ সালে সুইফ-ওয়ান নামের একটি জাহাজ আটকেছিল তারা এবং সেটিও ছিল আমিরাতের।

২০১৫ সালের শুরুর দিকে হুথি বিদ্রোহীদের হামলার মুখে সৌদি-সমর্থিত ইয়েমেনের ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট আব্দ রাব্বু মনসুর আল হাদি ক্ষমতা ছেড়ে সৌদি আরবে পালিয়ে যান। ক্ষমতাচ্যুত এই প্রেসিডেন্টকে ফেরাতে সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ইয়েমেনে হুথিদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে।

কিন্তু এই অভিযানের শুরুর পর ইয়েমেনের রাজনৈতিক সংকটের অবসান হওয়ার পরিবর্তে তা আরও তীব্র হয়ে ওঠে। বর্তমানে ইয়েমেনে কার্যত দুই শাসকগোষ্ঠী সক্রিয় আছে। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সামরিক সহযোগিতার ওপর ভর করে দেশটির দক্ষিণাঞ্চল এখনও মনসুর হাদির নেতৃত্বাধীন সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে, অন্যদিকে উত্তরাঞ্চল সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে হুথি বিদ্রোহীরা।

ইয়েমেনের এই সংঘাতকে মধ্যপ্রাচ্যে আধিপত্যের লড়াইয়ে সৌদি-ইরানের ছায়াযুদ্ধ হিসেবে দেখা হয়। টানা গৃহযুদ্ধ ও সংঘাত চলার ফলে প্রায় ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ এবং একদা স্বচ্ছল এই দেশটি।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৫ বছরের যুদ্ধে ইয়েমেনে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন প্রায় ৪০ লাখ মানুষ। জাতিসংঘের খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক প্রতিষ্ঠান বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশটিতে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ।

সূত্র: আলজাজিরা