রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলা: কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েও সু চির মিথ্যাচার!

কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েও সু চির মিথ্যাচার

নিউজ ডেস্ক: রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর কোনও গণহত্যা সংঘটিত হয়নি বলে মিথ্যাচার করেছে মিয়ানমারের নেত্রী সু চি। বুধবার  হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে গাম্বিয়া যেসব তথ্য দিয়েছে তা অসম্পূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর বলেও সাফাই গেয়েছে রোহিঙ্গা গণহত্যায় দায়ী মিয়ানমারের এই রাজনীতিক।

সু চি জানায়, যদি দেশের অভ্যন্তরে গণহত্যার উদ্দেশ্যে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটে তবে যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে জড়িত সেনা সদস্য, কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এর বাইরে আমি এ বিষয়েও নিশ্চিত করছি যে, আমাদের সবার নজর সেনা সদস্যদের দিকে। একইসঙ্গে অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধেও উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বক্তব্যে একবারের জন্যও রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণ না করে সু চি জানায়, রাখাইনে সেনা অভিযানে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের অভিযোগ হয়ত উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে তার পেছনে যে গণহত্যার উদ্দেশ্য ছিল- এমন ধরে নেয়াটাও মিয়ানমারের জটিল বাস্তবতায় ঠিক হবে না।

সে জানায়, তাঁর দেশের সেনাসদস্যরা যুদ্ধাপরাধ করে থাকলে তা মিয়ানমারের দেশীয় তদন্ত ও বিচারব্যবস্থায় নিষ্পত্তি করা হবে। এটিকে আন্তর্জাতিকীকরণের সুযোগ নেই। তাঁর দাবি, ১৯৪৮-এর গণহত্যা সনদ এখানে প্রযোজ্য নয়। ক্লিয়ারেন্স অপারেশনকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। ক্লিয়ারেন্স অপারেশন শুধু সন্ত্রাস ও বিচ্ছিন্নতাবাদ মোকাবিলার প্রশ্নে ব্যবহৃত হয়েছে। তাঁর দাবি, রাখাইনে কোনো ধরনের বৈষম্য করা হবে না। মুসলমান শিশু ও ছাত্রছাত্রীদের জন্য বৃত্তি চালু করা হচ্ছে। তিনটি আইডিপি (ইন্টারন্যালি ডিসপ্লেসড পিপল) শিবির বন্ধ করা হয়েছে। দেশান্তরিত লোকজনকে স্বেচ্ছামূলক ও নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে নিরাপত্তা চৌকিতে কথিত হামলার অজুহাত দেখিয়ে রোহিঙ্গাদের গ্রামে গ্রামে সেনাবাহিনী গণহত্যা শুরু করে। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় উগ্র সন্ত্রাসী বৌদ্ধরা। রোহিঙ্গাদের ওপর কাঠামোবদ্ধ যে সহিংসতা ও বর্বরতা চালানো হয়েছে, তার মধ্য দিয়ে ১৯৮৪ সালের আন্তর্জাতিক গণহত্যা কনভেনশন ভঙ্গ করেছে মিয়ানমার। আর এই অভিযোগেই ওআইসির সহায়তায় মিয়ানমারকে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালতে এনেছে পশ্চিম আফ্রিকার মুসলিম দেশ গাম্বিয়া।

২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট রাখাইনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ওই অভিযান শুরু হলে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে রোহিঙ্গাদের ঢল নামে। গত দুই বছরে আট লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশের কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে ঠাঁই নিয়েছে। রোহিঙ্গাদের ওপর নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াওয়ের ভয়াবহতাকে জাতিগত নির্মূল অভিযান বলে অভিহিত করে আসছে জাতিসংঘ।