রোগী আসছেও কম, হাসপাতাল রাখছেও কম

নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকারের আরোপিত নানা বিধিনিষেধের প্রভাবে হাসপাতালগুলোতে গিয়ে চিকিৎসা সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে সাধারণ রোগীরা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষগুলোর দাবি, রোগীরা আসছেন না। রোগীদের অভিযোগ হাসপাতালগুলো তাদের রাখছে না।

এমনকি গত রোববার রাতেও শিক্ষা অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, তিনি সন্তানসম্ভবা ছিলেন। শারীরিক জটিলতার কারণে আলট্রাসাউন্ড প্রয়োজন পড়ায় সকাল থেকে ১১ টি হাসপাতালে ফোন করে শেষপর্যন্ত সন্ধ্যায় আলট্রাসাউন্ড করাতে সমর্থ হন। চিকিৎসক রিপোর্ট দেখে পরে জানান, গর্ভস্থ শিশুর হৃৎস্পন্দন থেমে গেছে। সে আর বেঁচে নেই। রোববার সকালে ১৬ ঘণ্টা ছয়টি হাসপাতালে ঘুরে চিকিৎসা না পেয়ে একজন মারা যাওয়ার খবরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। সাধারণ মানুষ, চিকিৎসক দুই পক্ষই মনে করছেন এই পরিস্থিতি চলতে পারে না।

রোববার ও সোমবার রাজধানীর বড় ছয়টি সাধারণ ও বিশেষায়িত হাসপাতালে রোগী পাওয়া গেছে খুব কম। রোগী কম কেন? জানতে চাইলে মোটামুটি একই জবাব পাওয়া গেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জাতীয় হৃদ্রোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ ও জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকদের কাছে।

কর্তৃপক্ষগুলো বলছে, ঈদের ছুটিতে যত রোগী হাসপাতালে আসে, তার চেয়েও এখন কম। বেশির ভাগ মানুষ ঢাকা ছেড়ে গেছে। যানবাহনের সংকট একটা বড় সংকট। সরকারের তরফ থেকে প্রয়োজন ছাড়া বের হতে না বলার নির্দেশনা আছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ আগের মতো ব্যস্ত থাকলেও, অন্য বিভাগগুলোয় রোগী কমে গেছে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত। জাতীয় হৃদ্রোগ ইনস্টিটিউটে বহির্বিভাগ ও অন্তঃ বিভাগ মিলে প্রায় দুই হাজার রোগী থাকেন। আজ সকালে বহির্বিভাগে রোগী এসেছেন ৩৫ জন, ভর্তি আছেন ২১৫ জন। জাতীয় নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউটে চিকিৎসকের কক্ষের বাইরে দায়িত্ব পালন করছিলেন দুজন কর্মী। তাদের একজন বলেন, সকাল থেকে বেলা ১২ টা পর্যন্ত ৩৫টা রোগী এসেছে। দিন শেষে হয়তো এই সংখ্যা শতখানেক হবে। স্বাভাবিক সময়ে হাজার খানের রোগী আসেন। বেসরকারি ক্লিনিকগুলো একরকম বন্ধ, সরকারি হাসপাতাল খোলা ।

গত শনিবার এই হাসপাতাল থেকেই ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল মুক্তিযোদ্ধা আলমাছ উদ্দিনকে। এ বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক উত্তম বড়ুয়া জানায়, রোগীর নিউমোনিয়া হয়েছিল। সব নথিপত্র আছে। নিউমোনিয়ার লক্ষণ দেখে ডিউটি ডাক্তাররা মনে করেছেন তিনি সন্দেহভাজন রোগী। এই হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ড থাকার পরও ভর্তি না করে ফিরিয়ে দেওয়া হলো কেন, জানতে চাইলে সে জানায়, এখন থেকে সন্দেহভাজন রোগীও ভর্তি করা হবে। তবে তারপরও করোনার লক্ষণ আছে এমন রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি হতে উৎসাহিত করা হচ্ছে না। সরকার নির্ধারিত হাসপাতালগুলো পূর্ণ হলে তারা ভর্তি রাখতে ইচ্ছুক।

জাতীয় হৃদ্রোগ ইনস্টিটিউটের পরিচালক মীর জামালউদ্দীন বলেন, হাসপাতালে মূলত হৃদরোগীরাই আসেন। সমস্যাটা হচ্ছে অন্য উপসর্গ থাকলে অনেকের অনাগ্রহ থাকে। আজ সকালেও একজন রোগীকে অন্য হাসপাতালে রেফার করে দেওয়া হচ্ছিল। আমি রেখে দিয়েছি। রোগী যাবে কোথায়?