রেকর্ড উৎপাদনেও তরমুজের দাম আকাশছোঁয়া

রেকর্ড উৎপাদনেও তরমুজের দাম আকাশছোঁয়া

নিউজ ডেস্ক: গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর প্রায় দ্বিগুণ তরমুজ উৎপাদন হলেও খুচরা বাজারে এর দাম আকাশছোঁয়া। গত কয়েক বছরের চেয়ে এ বছর অনেক বেশি দামে তরমুজ বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। আর কৃষি বিভাগ বলছে বরিশাল বিভাগে এ বছর তরমুজ উৎপাদন বিগত দিনের রেকর্ড ভেঙেছে।

শনিবার (১৮ মার্চ) নগরীর পোর্ট রোডে তরমুজের আড়তগুলো ঘুরে দেখা যায়, চাষিরা বিভাগের বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের তরমুজ ট্রলারবোঝাই করে বিক্রির জন্য আড়তে নিয়ে আসছেন। শ্রমিকরা তরমুজ নামিয়ে আড়তে মজুত করছেন। কেউ কেউ আবার সরাসরি ট্রলার থেকে কিনে ট্রাকবোঝাই করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়ে যাচ্ছেন।

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালি উপজেলার চালিতাবুনিয়া গ্ৰামের তরমুজচাষি নান্নান গাজী এ বছর ৬ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। তিনি জানান, এ বছর ভালো আবহাওয়ার কারণে তরমুজ খুব একটা নষ্ট হয়নি। তাই ফলনও ভালো হয়েছে। দামও ভালো পাচ্ছেন।

তিনি বলেন, শত হিসেবে আড়তে তরমুজ দিচ্ছেন তিনি। তরমুজের আকার ও সাইজ অনুযায়ী একশ তরমুজ ৫ হাজার থেকে সাড়ে ২২ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

পটুয়াখালীর গলাচিপা থেকে আসা চাষি শফিক মুন্সী বলেন, এ বছর বন্যা বা দুর্যোগ না হলে আরও এক দফা তরমুজ বিক্রি করতে পারবো। কিছু মানুষ তরমুজ নেই বলে বাজারে কথা ছড়াচ্ছে। আসলে তা ঠিক না। এ বছর তরমুজের কোনো অভাব নেই। ক্ষেতে ভালো উৎপাদন হওয়ায় সব বিক্রি করতে পারি কিনা তা নিয়েই দুশ্চিন্তায় আছি।

এদিকে তরমুজের অধিক উৎপাদনেও খুচরা বাজারে এর কোনো প্রভাব নেই। রোববার (১৯ মার্চ) বরিশাল নগরীর বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ ফলের দোকানসহ বিভিন্ন স্থানে তরমুজ বিক্রি হচ্ছে। তবে প্রতিটি দোকানেই দাম বেশি বলে অভিযোগ ক্রেতাদের।

নগরীর চৌমাথা বাজারে তরমুজ কিনতে আসা এক সরকারি কর্মচারী জানান, গত বছরের তুলনায় এবার তরমুজের দাম অনেক বেশি। আগে যে তরমুজ দেড়শ’ থেকে দুইশ’ টাকায় কিনেছি সেই তরমুজ এ বছর ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা চাচ্ছে দোকানীরা।

তিনি আরও বলেন, শুধু দোকানগুলোতে নয়, ভ্যানেও তরমুজের একই দাম। মৌসুমী ফল তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।

ওই বাজারে তরমুজ কিনতে আসা দিনমজুর রাসেল বলেন, বেশ কয়েকটি দোকান ঘুরেও সাধ্যের মধ্যে কোনো তরমুজ মেলেনি। পরে ভ্যান থেকে দুটি ফাটা তরমুজ কম দামে কিনেছি।

চৌমাথা বাজারের কয়েকজন বিক্রেতা জানান, পাইকারি আড়ত থেকে কেনা পড়েছে বেশি, তাই বিক্রিও করতে হচ্ছে বেশি দামে।

এদিকে বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, চলতি (২০২২-২৩) মৌসুমে বিভাগের ৬ জেলায় প্রায় ৬৪ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। যেখানে গত (২০২১-২২) মৌসুমে চাষ হয় ৪৬ হাজার ৪৫১ হেক্টর জমিতে। চলতি মৌসুমে পটুয়াখালী, বরগুনা এবং ভোলা জেলায় সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে। তুলনামূলক কম চাষ হয়েছে বরিশাল, পিরোজপুর এবং ঝালকাঠি জেলায়।

বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর খামারবাড়ির অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) মো. মুছা ইবনে সাঈদ বলেন, আবহাওয়া অনুকূল আর প্রাকৃতিক দুর্যোগ না আসায় বরিশাল বিভাগে এ বছর তরমুজ উৎপাদন বিগত দিনের রেকর্ড ভেঙেছে। তাছাড়া দক্ষিণাঞ্চলের মাটি তরমুজ চাষের জন্য খবুই উপযোগী। এজন্য কৃষকরা ঝুঁকি জেনেও প্রতি বছর তরমুজ চাষ করেন।

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি তরমুজ উৎপাদন হয় বরিশাল অঞ্চলে। সারাদেশে বরিশাল অঞ্চলের তরমুজের চাহিদাও বেশি। আমরা আশা করছি এ বছর সব কৃষকই লাভবান হবেন। তবে খুচরা বাজারে অধিক দামে তরমুজ বিক্রির বিষয়টি শুনেছি।

এ ব্যাপারে বরিশাল ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক অপূর্ব অধিকারী বলেন, মূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে ভোক্তা অধিকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে। তাছাড়া প্রতিদিন আমাদের টিম বাজার তদারকি করছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি জেল জরিমানা করছি।