নিজামীর চূড়ান্ত রায় প্রকাশ, মৃত্যুদন্ড বহাল

নিউজ নাইন২৪ডটকম, ঢাকা: একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর আপিল মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়েও মৃত্যুদন্ড বহাল রাখা হয়েছে।

মঙ্গলবার দুপুরে এ পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

এর আগে রায়ে স্বাক্ষর করেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাসহ আপিল মামলার রায় প্রদানকারী চার বিচারপতি।

অন্য বিচারপতিরা হচ্ছেন, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার সাব্বির ফয়েজ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।

আপিল বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার অরুনাভ চক্রবর্তী মঙ্গলবার বলেন, “পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। আজই ট্রাইবুন্যালে পাঠানোর চেষ্টা করব।”

ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করার পর রায়ের প্রত্যায়িত কপি পাঠানো হবে কারা কর্তৃপক্ষ ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে। নিয়ম অনুসারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও অবহিত করা হবে।

আপিল বিভাগের সর্বোচ্চ সাজার আদেশ হাতে পাওয়ার পর বিচারিক আদালত (ট্রাইব্যুনাল) কারাগারে মৃত্যু পরোয়ানা পাঠাবে। ওই মৃত্যু পরোয়ানার ভিত্তিতেই সরকারের তত্ত্বাবধানে কারা কর্তৃপক্ষ সাজা কার্যকরের প্রস্তুতি নেবে।

অবশ্য দণ্ড কার্যকরের আগে আপিলের রায় পুনর্বিবেচনার সুযোগ পাবেন একাত্তরের বদর প্রধান মতিউর রহমান নিজামী। রিভিউ না টিকলে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষাও তিনি চাইতে পারবেন।

দুই আর্জিই নাকচ হলে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে কারা কর্তৃপক্ষ দণ্ড কার্যকরের ব্যবস্থা নেবে। তার আগে আসামির সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পাবেন পরিবারের সদস্যরা।

একাত্তরে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করতে বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশা বাস্তবায়নে ভূমিকাসহ তিন অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ড বহালের রায় আসে সর্বোচ্চ আদালত থেকে।

প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ গত ৬ জানুয়ারি এই রায়ের সংক্ষিপ্তসার জানিয়ে দেয়। ১৫৩ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় লিখেছেন এ বেঞ্চের সদস্য বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা।

বেঞ্চের অপর দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

যে তিন অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড

অভিযোগ-২: একাত্তরের ১০ মে বেলা ১১টার দিকে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার বাউশগাড়ি গ্রামের রূপসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি সভা হয়। স্থানীয় শান্তি কমিটির সদস্য ও রাজাকারদের উপস্থিতিতে  ওই সভায় নিজামী বলেন, শিগগিরই পাকিস্তানি সেনারা শান্তি রক্ষার জন্য আসবে। ওই সভার পরিকল্পনা অনুসারে পরে ১৪ মে ভোর সাড়ে ৬টার দিকে বাউশগাড়ি, ডেমরা ও রূপসী গ্রামের প্রায় সাড়ে ৪০০ মানুষকে পাকিস্তানি সেনারা হত্যা করে। প্রায় ৩০-৪০ জন নারীকে সেদিন ধর্ষণ করে পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা।

অভিযোগ-৬: নিজামীর নির্দেশে ১৯৭১ সালের ২৭ নভেম্বর পাবনার ধুলাউড়ি গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজতে যায় পাকিস্তানি সেনা ও তাদের দোসর রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা। তারা গ্রামের ডা. আব্দুল আউয়াল ও তার আশেপাশের বাড়িতে হামলা চালিয়ে নারী, পুরুষ ও শিশুসহ ৫২ জনকে হত্যা করে।

অভিযোগ-১৬: মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির  বিজয়ের ঊষালগ্নে অসংখ্য বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করে আলবদর বাহিনী। দেশের বুদ্ধিজীবী শ্রেণীকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস করার জন্য পরিকল্পিতভাবে আলবদর সদস্যরা ওই গণহত্যা ঘটায়। জামায়াতের তৎকালীন ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘ ও আলবদর বাহিনীর প্রধান হিসেবে ওই গণহত্যার দায় নিজামীর ওপর পড়ে।

নিয়ম অনুযায়ী, আসামিপক্ষ পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) জন্য আবেদন করার সুযোগ পাবে। রিভিউ নিষ্পত্তি হওয়ার আগে দণ্ড কার্যকর করা যাবে না।

বুধবার থেকে সেই দিন গণনা শুরু হবে জানিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রিভিউ খারিজ হলে কারা কর্তৃপক্ষ নিয়ম অনুযায়ী দণ্ড কার্যকর করতে পারবে।”

যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে দণ্ডিতদের মধ্যে এ নিয়ে মোট ছয়জনের আপিলের নিষ্পত্তি শেষে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়ে রিভিউয়ের পর্যায়ে এলো।