রাজশাহীর আমের বিদেশ যাত্রা আটকে দিলো লকডাউন

রাজশাহীর আমের বিদেশ যাত্রা আটকে দিলো লকডাউন

রাজশাহী সংবাদদাতা: লকডাউনের কারণে প্রস্তুতি সত্ত্বেও আটকে গেছে রাজশাহীর আমের বিদেশ যাত্রা। তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে গত দশদিনে অন্তত ১০ টন আম গেছে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে।

সর্বশেষ গত রোববার তিন টন ফজলি ও আম্রপালি আম গেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে। এর মধ্যে এক হাজার ৩০০ কেজি আম্রপালি আম সুইজারল্যান্ডে পাঠিয়েছে রাজশাহীর চারঘাটের নর্থ বেঙ্গল এগ্রো ফার্ম লিমিটেড। তবে নিজ জেলা থেকে কোনো আম পাঠায়নি প্রতিষ্ঠানটি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ ম্যাঙ্গ প্রডিউসার কো অপারেটিভ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল খান শামীম বলেন, তিনি নর্থ বেঙ্গল এগ্রো ফার্ম লিমিটেডকে আম সরবরাহ করেছেন। আরো বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আম সংগ্রহ করে রফতানি করছে। গত ১০ দিন ধরে আম রফতানি শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে প্রায় দশ টন আম গেছে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে। কিছু লক্ষণভোগ, আম্রপালি এবং ফজলি আম পাঠানো হয়েছে। আরো মাসখানেক চলবে আম রফতানি। রফতানি শুরুর আগেই আম শেষ হয়ে যাওয়ায় রাজশাহী থেকে রফতানির সুযোগ হয়নি এবার।

শামীম আরও বলেন, আম রফতানিতে এখনো নানান সংকট রয়েই গেছে। সরকারি উদ্যোগে চাঁপাইনবাবঞ্জে উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র স্থাপন হচ্ছে। আগামী বছর এই সংকট থাকবে না বলে আশা করা যায়।

বেশ কয়েক বছর ধরেই বিশ্ববাজারে রাজশাহীর আম রফতানি করে আসছেন রাজশাহী এগ্রো ফুড প্রডিউসার সোসাইটির আহ্বায়ক আনোয়ারুল হক। তবে এবার আম পাঠাতে পারেননি তিনি। এর প্রধান কারণ লকডাউনের বলে জানান এই আম রফতানিকারক।

তিনি বলেন, দেশে এখন নিরাপদ রফতানিযোগ্য প্রচুর আম উৎপাদন হচ্ছে। লকডাউনের প্রেক্ষিতে ফলের চাহিদা বাড়ায় তৈরি হয়েছে নতুন বাজার। তারা এই সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন। রফতানিযোগ্য সব আম বিক্রি করেছেন স্থানীয় বাজারেই। এতে কোনো ধরনের লোকসানে পড়তে হয়নি চাষিদের। লকডাউনের কারণে আমের বিশ্ববাজার হারানোর শঙ্কা নেই বলেও জানান তিনি।

আম রফতানির বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক শামসুল হক বলেন, তিনি রোববার নর্থ বেঙ্গল এগ্রো ফার্ম লিমিটেডের আম রফতানির খবর পেয়েছেন। এর বাইরে এ বছর রাজশাহী থেকে আম রফতানির খবর নেই। তবে রফতানির উদ্দেশ্যে এ বছর প্রায় ৭ লাখ আমে ফ্রুট ব্যাগিং করা হয়েছিল। জেলার বাঘা, চারঘাট ও পুঠিয়া উপজেলার চাষিরা সবচেয়ে বেশি উন্নত এই প্রযুক্তিতে আম চাষ করেছিলেন। অধিকাংশ আমই বিক্রি হয়েছে স্থানীয় বাজারে।

এই অঞ্চলের বাগানে এখন ঝুলছে আশ্বিনা ও বারি-৪ জাতের আম। রাজশাহীতে গত ১০ জুলাই থেকে এই দুই জাতের আম নামানো শুরু হয়েছে। পুরোদমে উঠছে আম্রপালি। শেষের পথে ফজলি আম।

গত ১৫ মে থেকে শুরু হয় আম নামানো। এরপর একে একে গোপালভোগ, রানীপছন্দ, লক্ষণভোগ বা লখনা, হিমসাগর বা খিরসাপাত এবং ল্যাংড়া বাজারে ওঠে। রাজশাহীর চেয়ে অন্তত দশ দিন পর বাজারে ওঠে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁর আম।

আঞ্চলিক কৃষি দফতরের হিসাবে, রাজশাহী অঞ্চলে এ বছর আম বাগান রয়েছে সবমিলিয়ে ৮০ হাজার ৩৬০ হেক্টর। এ থেকে উৎপাদন হতে পারে ৯ লাখ ৬৮ হাজার ৭৭০ টন আম। গত বছর ৭২ হাজার ৯০৯ হেক্টর আম বাগান থেকে আম উৎপাদন ছিলো ৮ লাখ ২৮ হাজার ৬৭৮ টন।

কৃষি দফতরের তথ্য অনুযায়ী, যথেষ্ট প্রস্তুতি সত্ত্বেও রাজশাহী থেকে আম রফতানি হচ্ছে সামান্যই। গত বছর রাজশাহী জেলা থেকে ৩৬.৪৪৭ টন এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা থেকে ৬৪.৪৫ টন আম রফতানি হয়। এবার তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি আম রফতানির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। তবে লকডাউনের কারণে সেই লক্ষ্যমাত্রা ভেস্তে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।