যেখানে সেখানে ব্রিজ নির্মাণ না করতে নীতিমালা হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: বড় বড় নদীগুলোতে ন্যূনতম পাঁচ থেকে সাত কিলোমিটারের মধ্যে কোনো সেতু না করার ব্যাপারে একটি নীতিমালা তৈরির নির্দেশনা দিয়েছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।

পাশাপাশি ভূ-প্রকৃতির যাতে ক্ষতি না হয় সেজন্য গ্রামগঞ্জে যত্রতত্র নতুন পাকা রাস্তা সেতু-কালভার্ট না করতেও নির্দেশনা দিয়েছেন তাজুল ইসলাম।

রোববার (১৬ আগস্ট) সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলনকক্ষে এক সভায় মন্ত্রী এসব নির্দেশনা দেন।

প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন, সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে নদীর নাব্যতা, পানির প্রবাহ ঠিক রাখা, নৌ চলাচল, কৃষি সেচ, মৎস্য ও পরিবেশের বিষয়টি নিশ্চিত করা এবং যেখানে সেখানে ব্রিজ নির্মাণ না করে অর্থাৎ আইন অনুযায়ী নির্মাণ করতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীকে প্রধান করে, স্থানীয় সরকার বিভাগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিআইডব্লিউটিএসহ সংশ্লিষ্টদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত দেন মন্ত্রী।

নদীর নাব্যতার স্বার্থে বড় বড় নদীগুলোতে ন্যূনতম পাঁচ থেকে সাত কিলোমিটারের মধ্যে কোনো সেতু না করার ব্যাপারে কমিটিকে একটি নীতিমালা করে তার খসড়া মন্ত্রণালয়ে দাখিল করতে বলেন মন্ত্রী।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, উপজেলা পরিষদের জনপ্রতিনিধি, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে এ কমিটি গঠন করা যেতে পারে।

তিনি বলেন, কমিটি যাচাই-বাছাই করে যে প্রতিবেদন দেওয়া হবে তা বিবেচনায় নিয়ে রাস্তা ও ব্রিজ নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হবে। এতে বন্ধ হবে যত্রতত্র রাস্তা-ঘাট এবং ব্রিজ নির্মাণ।

মন্ত্রী বলেন, দেশের গ্রামগঞ্জে নতুন পাকা রাস্তা, সেতু-কালভার্ট করতে হলে নিজ নিজ উপজেলা পরিষদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটিতে আলোচনার মাধ্যমে যোগ্যতা প্রমাণ সাপেক্ষে কার্যবিবরণীতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে যাতে যত্রতত্র রাস্তা, ব্রিজ নির্মাণ করে বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতির ক্ষতি না হয়।

হাইড্রলজিক্যাল, মরফোলজিক্যাল ও নেভিগেশন সমীক্ষায় নদীর বৈশিষ্ট্য, অভ্যন্তরীণ নদীগুলোতে নব্যতা বাড়িয়ে পানি সরবরাহ, মৎস্য চাষ ও কৃষি সেচ ব্যবস্থা অক্ষুণ্ন রাখার উপর জোর দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ব্রিজ নির্মাণের সময় নদীর দুই পাশের খাল কোনো অবস্থাতেই সংকোচন করা যাবে না।

তিনি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়সহ যে সব সংস্থা ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ করছে তাদের সবাইকে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন মেনে নেভিগেশন, নদীর নাব্যতা, ড্রেজিং এবং নৌ চলাচল ব্যবস্থা ঠিক রেখে নির্মাণ করার আহ্বান জানান।

মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। নদী ও জমির উপর অর্থনীতির বড় একটি অংশ নির্ভর করে। তাই নদীর যে বহুমাত্রিক সুবিধা রয়েছে সেগুলোকে কাজে লাগিয়ে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড জোরদার করতে হবে।

জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তিস্তা নদীর উপর পিসি গার্ডার সেতু ও চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার ডাকাতিয়া নদীর উপর নির্মিত সেতুর ডিজাইন সংক্রান্ত ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন মন্ত্রী।

এ বিষয়ে সভায় তিনি বলেন, তিস্তা নদীর উপর নির্মেয় পিসি গার্ডার সেতু ও ডাকাতিয়া নদীর উপর নির্মেয় সেতু নদীর নাব্যতা, পানি প্রবাহ, নৌ চলাচল- ইত্যাদি বিষয় ঠিক আছে কিনা তা পুনর্বিবেচনা করে ওই কমিটিকে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলেন।

সভায় জানানো হয়, গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সঙ্গে কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলার যোগাযোগ নেটওয়ার্ক তৈরিসহ কুড়িগ্রামের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার যাতায়াতের দূরত্ব কমিয়ে আনা এবং গ্রামীণ এলাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির মাধ্যমে জনগণের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করে দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে ৮৮৫ দশমিক ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে তিস্তা নদীর উপর ১৪৯০ মিটার দীর্ঘ পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ প্রকল্পে অনুমোদন দেয় একনেক।

এছাড়া সভায় চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলাধীন ডাকাতিয়া নদীর উপর সেতু নির্মাণ প্রকল্প প্রকল্পে নদীর নাব্যতা ড্রেজিং পরিবেশসহ বিভিন্ন বিষয় মাথায় রেখে ডিজাইন করার বিষয়ে আলোচনা হয়।

স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী, স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মেজবাহ উদ্দিন, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রোকন উদ-দৌলা, এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুর রশিদ খান, বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোতাহের হোসেন, সেতু নির্মাণের প্রকল্প পরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।