মৌরি কেন খাবেন? জেনে নিন মৌরির বিস্ময়কর উপকারিতা।

স্বাস্থ্য ডেস্ক: মৌরিকে কোথাও মিষ্টি জিরা বলে কোথাও গুয়ামুরি বলে। যেকোন রেস্টুরেন্টে বিল আসার আগে জিরার মতো যে খাবারটি পরিবেশন করা হয় সেটিই মৌরি। এটি মুখের দুর্গন্ধ দূর করার পাশাপাশি শরীরকে তরতাজা, প্রাণবন্ত এবং সুস্থ রাখতে বেশ ভূমিকা রাখে। শরীরকে সুস্থ রাখতে যেসব খনিজ এবং ভিটামিন আপনার প্রয়োজন তার অধিকাংশই এই মৌরিতে বিদ্যমান। রক্ত পরিশোধনের পাশাপাশি, মৌরি রক্তে শর্করা এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।

১) দেহের মেদ কমাতে:-
সারা রাত মৌরি পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে এটি পান করা যেতে পারে। এতে দেহের মেদ কমাতে সাহায্য করে। এটি শরীরে ভিটামিন এবং মিনারেলের শোষণের হার বাড়াতে সহায়ক।

২) ত্বকের জন্য:-
নিয়মিত মৌরি খেলে শরীরে প্রয়োজনীয় মাত্রার জিঙ্ক, ক্যালসিয়াম ও সেলেনিয়ামের যুক্ত হয়। এগুলি হরমোন ও অক্সিজেনের ভারসাম্য রক্ষা করে। ফলে ত্বক ঠান্ডা হয়, ঔজ্জ্বল্য বাড়ে, ব্রণ দূর হয়।

৩) সাইনাসে:-
মৌরিতে যে ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট আছে, তা সাইনাসের সমস্যা দূর করে। ব্রঙ্কাইটিস ও কফের সমস্যা দূর করে।

৪) স্নায়ুর জন্য:-
স্নায়ু ও মনকে শান্ত করতে মৌরির তেল মালিশ করা যায়। এর নানান উপাদান স্নায়ুর জন্য উপকারী।

৫) পাচনতন্ত্রকে স্বাভাবিক রাখে:-
মৌরির গুঁড়োয় থাকা ইস্ট্রাগোল, ফেনকোন এবং অ্যানিথোলের উপস্থিতির কারণে এটি গ্যাস্ট্রিক উৎসেচক নিঃসরণে সহায়তা করে। যাদের বদ হজমের সমস্যা আছে তাদের জন্য মহৌষোধি। সকালে মৌরী ভেজানো পানি বা মৌরী দিয়ে তৈরি চা পান করুন। কোষ্ঠকাঠিন্য বা গ্যাস্ট্রিক দূরে থাকবে।

৬) খাদ্য পরিপাকে সাহায্য:
মৌরি পেটের নানারকম অস্বস্তি ও বদহমের সমস্যা কমায় ও তা দূর করে। হজমের গোলযোগ বা গ্যাস-অম্বলের সমস্যা থাকলে আজ থেকেই মৌরি ভেজানো জল খাওয়া শুরু করুন।

৭) কাশির সমস্যা দূর করে:
ঋতু পরিবর্তনের সময় অনেকেরই ঠাণ্ডা লেগে সর্দি-কাশি হয়। দূষণ বেড়ে যাওয়ায় আজকাল বেশীরভাগ মানুষই শুকনো কাশির সমস্যায় ভোগে। এইসব সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চাইলে রোজ খান মৌরি। কাশি-সর্দির সমস্যা সমাধানে মৌরি খুব উপকারী।

৮) ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখে:
এতে প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম থাকে যা শরীরে রক্তচাপ মাত্রাকে ঠিক রাখতে সাহায্য করে। হার্ট রেটকেও নিয়ন্ত্রণে রাখে মৌরী।

৯) ঋতুস্রাবের ব্যাথা উপশম করে:
সময়ে পেট ব্যথা হয় তারা মৌরী ভেজানো পানি খেলে স্বস্তি পাবেন। মেনোপজের সময়েও খেতে পারেন। ঋতুচক্র ঠিক না থাকলেও খেতে পারেন।

১০) ক্ষতিকর টক্সিন বের করে:
রক্তকে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে মৌরী থেকে তৈরি অ্যাসেনশিয়াল অয়েল। মৌরী দেওয়া চা খেলে শরীরে পুষ্টি বৃদ্ধি পায়।

১১) ছেলেদের শারিরীক সক্ষমতা বৃদ্ধি করে:
মৌরির মধ্যে থাকা ভিটামিন ও খনিজ ছেলেদের শরীরে দৈহিক চাহিদা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এরজন্য ছেলেরা রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে দুধের মধ্যে মৌরি মিশিয়েও খেতে পারেন। এতে একান্ত অবস্থানে সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ঘুম ভাল হয়, টেনশন দূর হয়। মেয়েদের তুলনায় অনেক বেশি ফার্টিলিটির সমস্যায় ভুগছে ছেলেরা। আর তাই কমছে ছেলেদের শুক্রাণুর মানও। ফার্টিলিটি দূর করতে প্রতিদিন মৌরি খেলে উপকারিতা মিলবে। রোজ সকালে মৌরি ভেজানো পানি খেলে স্পার্ম কাউন্ট বাড়বেই।

১২) মৌরি কাঁচা খেতে পারলেই সবচেয়ে ভাল। এতে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়। সেই সঙ্গে মুখের মধ্যে কোনও রকম ইনফেকশনের সম্ভাবনাও থাকে না। তাই রোজ খাওয়ার পর একটু মৌরি মুখে দিন। হজম হবে, শরীরও থাকবে ভাল।

১৩) কিডনির জন্য ভালো: মৌরি চা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা অক্সিডেটিভ ক্ষতির বিরুদ্ধে লড়াই করে। এটি আপনার কিডনি কিডনির পাথর এবং টিস্যুতে থাকা ইউরিক অ্যাসিড ভেঙে দিতে পারে। মৌরির বীজ নতুন কোষ উৎপাদনে সাহায্য করে এবং এমনকি এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য প্রদাহ কমায়।

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:
কথায় বলে অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো নয়। মৌরিও এর ব্যাতিক্রম নয়। অতিরিক্ত মৌরি খেলে যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে- শ্বাস কষ্ট হতে পারে, আমবাত, ফুসকুড়ি, বুক ব্যাথা, বমি বমি ভাব, বমি, চুলকানি ও ত্বক ফোলা ভাব দেখা যেতে পারে।