মাটির নিচে অদ্ভুত শহর

মাটির নিচে অদ্ভুত শহর

অনলাইন ডেস্ক: কুবার পেডি। মাটির নিচে গোটা এক শহর লুকিয়ে আছে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ায়। পৃথিবীর এক অন্যতম অস্বাভাবিক স্থান এটি। এ শহরের প্রায় ৮০% লোক মাটির নিচে বসবাস করে। তারা কাজ করেই জীবিকা নির্বাহ করে সেখানে।

এ শহরটিকে খনি শিল্পের শহর বলা হয়। কুবার পেডি আসলে বর্ণালি পাথরের খনি। ১৯১৫ সালে খনিগুলো আবিষ্কারের পর এই শহরে খনি শ্রমিকদের কদর বেড়ে যায়। এখানে অনেক সুড়ঙ্গ ও চোরাইপথ রয়েছে। মাটির নিচের এ শহরে রয়েছে শপিং সেন্টার, আর্ট গ্যালারি, হোটেল ও অফিস। শহরে কোনো ঘাস দেখা যায় না, নেই কোনো সবুজ গাছ।

পৃথিবীর একমাত্র মাটির তলার নগরীর নাম কুবার পেডি। অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত নগরী অ্যাডিলেড থেকে প্রায় ৮০০ কিলোমিটার দূরে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মরুভূমিতে এই শহরের দেখা মিলবে। এক সময় এখানে কোনো মানুষের বসবাস ছিল না। সত্যি বলতে এখনো এটি মানুষের বসবাস উপযোগী নয়। কারণ, গ্রীষ্মে এখানকার তাপমাত্রা কখনো কখনো ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠে যায়। আবার শীতকালে তাপমাত্রা নেমে আসে শূন্য ডিগ্রিরও নিচে। আবহাওয়ার এমন বিরূপ পরিস্থিতির জন্য এখানে গাছপালাও জন্মায় কম। এতসব প্রতিকূলতা সত্ত্বেও কুবার পেডিতে গড়ে উঠেছে অত্যাধুনিক একটি শহর। যে শহরটি মাটির ওপরে নয়, নিচে অবস্থিত। আধুনিক নগরীর সুবিধাসংবলিত কুবার পেডিতে রয়েছে রেস্তোরাঁ, বইয়ের দোকান, ব্যাংক, আর্ট গ্যালারি, মার্কেট কমপ্লেক্স। এখানের আয়োজন দেখে মনে হবে আধুনিক পৃথিবীর আধুনিক কোনো শহরেই এসে পড়েছেন। তবে এতসব আয়োজন একদিনে গড়ে উঠেনি। এর পেছনে রয়েছে মজার এক গল্প। এই কুবার পেডির পাথুরে জমির সঙ্গে মিশে ছিল বিশেষ এক ধরনের রত্ন। এ রত্নের নাম ওপাল। এ জায়গাটার বিশেষত্ব প্রথম আবিষ্কার করে উইল হাচিসন নামের ১৪ বছরের এক কিশোর। ঘটনাটা ছিল ১৯১১ সালের। এ মজার আবিষ্কারের আগে এখানকার বাসিন্দা বলতে ছিল মরুভূমির সাপ, বিষাক্ত পোকামাকড়, টিকটিকি আর এমু পাখি। কিন্তু ওপালের অস্তিত্ব আবিষ্কার বদলে দিতে শুরু করল কুবার পেডিকে।

ওপাল আবিষ্কারের পর বহু রত্নলোভী পাড়ি জমাল এখানে। রত্নের সন্ধানে শুরু হলো খোঁড়াখুঁড়ি। খোঁড়াখুঁড়ি যত বাড়তে থাকল এলাকার গভীরে নামতে শুরু করল মানুষ। মাটির নিচে বড় বড় গুহার সৃষ্টি হলো। সেখানে রোদের তাপ থেকে বাঁচতে মানুষ বসবাসও শুরু করে দিল।

আস্তে আস্তে কুবার পেডির বাণিজ্যিক গুরুত্ব বাড়তে লাগল। এখানকার আদিবাসীরা মাইনারদের খোঁড়াখুঁড়ি দেখে তাদের ভাষায় জায়গার নাম দিয়েছিল কুপা সিটি। যার অর্থ মাটিতে সাদা মানুষের গর্ত। কালের বিবর্তনে সেটাই বদলে গিয়ে কুবার পেডি হয়ে যায়। সব মরুভূমিতেই দিনের বেলায় প্রচন্ড গরম আর রাতে হাড় কাঁপানো ঠান্ডা থাকে। মাটির নিচে অপেক্ষাকৃত সহনশীল একটা তাপমাত্রা পাওয়া যায়। মরুভূমির এই বৈশিষ্ট্য কাজে লাগিয়ে কুবার পেডি আরও বসবাসযোগ্য হয়ে উঠল। অন্যদিকে খোঁড়াখুঁড়ির জন্য মাইনারদের দিনের বেশির ভাগ সময়ই কাটাতে হয় মাটির নিচে। তাই সেখানে থাকার ঘরটাও তৈরি করে নিল তারা।

অবাক করার মতো বিষয়, এ শহরে কোনো ঘাস বা সবুজ গাছ নেই। সবুজ বলতে এখানে আছে তৈলাক্ত বালু। তারপরও এই শহরে মানুষের আনাগোনা থেমে থাকেনি। খোঁড়াখুঁড়ির দল বছরের পর বছর কাটিয়ে দিচ্ছে মাটির নিচের এ শহরে। তবে মাটির নিচে থাকলে ধূলিঝড় থেকেও বাঁচা যাবে। সেই ভেবেই শুরু হলো মাটির নিচে বসতি বানানো। এভাবেই গড়ে উঠেছে কুবার পেডি। শুধু থাকার জায়গা নয়, তৈরি হয়েছে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, হয়েছে পানির সমস্যার সমাধান। পানির ব্যাপারে কুবার পেডির জনগণ ভীষণ সচেতন। মরুভূমিতে পানির অভাবের কারণে তারা স্নান ও ধোয়া-মোছায় ব্যবহৃত পানি রিসাইকেলের মাধ্যমে সদ্ব্যবহার করে অন্যান্য কাজে। তবে এসব অসুবিধা সত্ত্বেও আজকের কুবার পেডি এতটাই জমজমাট যে অস্ট্রেলিয়ার অনেক ট্যুরিস্টই এক ঝলক দেখে যান জাগয়াটি। বেশ কয়েকজন কুবার পেডিবাসী অন্যত্র বসবাসের সিদ্ধান্ত নিয়েও কিছুকাল বাইরে কাটিয়ে আবার ফিরে এসেছে কুবার পেডিতে। দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার প্রধান আকর্ষণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই অদ্ভুত সুন্দর শহরটি।