মন্দায় পুঁজিবাজারবিমুখ হচ্ছে নতুন বিনিয়োগকারী

আবারও শেয়ারবাজারে বড় দরপতন

নিজস্ব প্রতিবেদক: পতনের ধারা অব্যাহত থাকায় পুঁজিবাজারের প্রতি সাধারণ জনগণের আগ্রহে ভাটা পড়েছে। দীর্ঘদিন মন্দা পরিস্থিতি থাকার কারণে বাজারের প্রতি নেতিবাচক ধারণা হয়েছে সবার। এর জেরে কমে গেছে বিও অ্যাকাউন্ট খোলার প্রবণতা। গত ছয় মাসে নতুন বিও অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে মাত্র ৩৭ হাজার। এজন্য বাজার পরিস্থিতিকে দায়ী করছেন পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্টরা।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, গত জুলাই শেষে বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ২৫ লাখ ২৮ হাজার ৬৯২টি। গতকাল পর্যন্ত এর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৫ লাখ ৬৫ হাজার ৯৮টি। বর্তমানে যে বিও রয়েছে, তার মধ্যে পুরুষ বিনিয়োগকারীর বিও সংখ্যা ১৮ লাখ ৭৯ হাজার ৫৭৯টি। আর নারীদের রয়েছে ছয় লাখ ৮৫ হাজার ৫১৯টি। এছাড়া কোম্পানির বিও রয়েছে ১১ হাজার ৭৪৫টি। সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী এ তথ্য জানা গেছে।

বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্টরা বলেন, দীর্ঘদিন থেকে বাজার মন্দা থাকার কারণে অধিকাংশ শেয়ারদরই বিনিয়োগ যোগ্য অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু তারপরও নতুন বিনিয়োগকারী বাজারে আসছেন না। এর প্রধান কারণ বাজার স্থিতিশীল না থাকা। এছাড়া নতুন আইপিওর শেয়ারও কম আসছে। আসলেও এখান থেকে লাভবান হতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা। ফলে নতুনরা বাজারে আসতে ভয় পাচ্ছেন।

এ প্রসঙ্গে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, বাজারে নতুন আইপিওর অফার থাকলে সাধারণত বিও অ্যাকাউন্ট বাড়ে। তবে বাজার ভালো থাকলে অনেকে সেকেন্ডারি মার্কেটে বিনিয়োগের জন্য অ্যাকাউন্ট খোলেন। ফলে এর সংখ্যা বাড়ে। আবার বাজার ভালো না থাকলে পুঁজিবাজারের প্রতি আগ্রহ কমে যায়। ফলে বিও’র সংখ্যাও কমে। মূলত ২০১০ সালের পর থেকে বিও অ্যাকাউন্ট উল্লেখযোগ্য হারে কমতে থাকে। বর্তমানে অর্ধেকের বেশি অ্যাকাউন্ট হচ্ছে শেয়ারশূন্য। সিডিবিএলের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী এ তথ্য জানা গেছে। বর্তমানে মোট বিও’র মধ্যে শেয়ারশূন্য এবং ব্যবহার করা হচ্ছে না এমন অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ১৪ লাখের বেশি।

গত বছর সময়মতো বিও ফি পরিশোধ না করায় বাতিল হয়ে গেছে প্রায় আড়াই লাখ অ্যাকাউন্ট। সেকেন্ডারি মার্কেটের মন্দা পরিস্থিতি, সে সঙ্গে আইপিও বাজারের নাজুক পরিস্থিতির জন্য এসব অ্যাকাউন্ট ঝরে গেছে বলে মনে করেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। তাদের অভিমত, বর্তমানে বাজারচিত্র পরিবর্তিত হয়েছে। তাছাড়া প্রায় প্রতি মাসেই রয়েছে আইপিও, যে কারণে বিনিয়োগকারীরা বাজারে ফিরে আসছেন।

নিয়মানুযায়ী, জুন মাসে বিও ফি পরিশোধ না করলে সেসব অ্যাকাউন্ট এমনিতেই বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু যেসব হিসাবে শেয়ার কিংবা টাকা থাকে, সেসব হিসাব বন্ধ হয় না। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) ডিপোজিটরি (ব্যবহারিক) প্রবিধানমালা, ২০০৩-এর তফসিল-৪ অনুযায়ী, বিও হিসাব পরিচালনার জন্য ডিপোজিটরি অংশগ্রহণকারী বা বিনিয়োগকারীকে নির্ধারিত হারে বার্ষিক হিসাবরক্ষণ ফি দিয়ে হিসাব নবায়ন করতে হয়।

এর আগে পঞ্জিকাবর্ষ হিসেবে প্রতি বছর ডিসেম্বরে এই ফি জমা নেওয়া হতো। তবে ২০১০ সালের জুন মাসে বিএসইসি বিও হিসাব নবায়নের সময় পরিবর্তন করে বার্ষিক ফি প্রদানের সময় জুন মাস নির্ধারণ করে। এ সময়ে বিও নবায়ন ফি ৩০০ থেকে বাড়িয়ে ৫০০ টাকা করা হয়। এরপর বিএসইসির জারি করা ২০১১ সালের ১৮ এপ্রিল এক সার্কুলারে ৩০ জুনের মধ্যে বিও হিসাব নবায়নের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। না হলে তা বাতিল করা হবে বলে ওই সার্কুলারে বলা হয়েছিল। বর্তমানে বিও নবায়ন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫০ টাকা।