ভোট না হলে মেয়াদ শেষে জেলা পরিষদে বসবে প্রশাসক

নিউজ ডেস্ক: জেলা পরিষদের মেয়াদ শেষ হলে পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনায় সরকার প্রশাসক নিয়োগ দেবেন। বিদ্যমান আইনে থাকা প্রতি জেলায় ১৫ জন সাধারণ সদস্য এবং ৫ জন সংরক্ষিত মহিলা সদস্যের পরিবর্তে জেলার অন্তর্গত উপজেলার সমানসংখ্যক সদস্য এবং এক-তৃতীয়াংশ সংরক্ষিত সদস্য নিয়ে পরিষদ গঠন হবে-এমন বিধান যুক্ত করে জেলা পরিষদ (সংশোধন) আইন-২০২২ সংসদে তোলা হয়েছে।

প্রস্তাবিত আইনে উপজেলা পরিষদগুলোর চেয়ারম্যান, নির্বাহী অফিসার ও মেয়র পরিষদের সভায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। তবে তাদের ভোটাধিকার থাকবে না। এদিকে বিদ্যমান আইনে নির্বাচন কমিশনকে ভোটার তালিকা তৈরির কথা বলা হলেও প্রস্তাবিত আইনে নির্বাচন কমিশনকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

রবিবার (২৩ জানুয়ারি) স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম আইনটি সংসদে তুললে ৭ দিনের মধ্যে তার রিপোর্ট সংসদে উত্থাপনের সময় দিয়ে সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়েছে।

জানা গেছে, চলতি সংসদেই এই বিলটি পাস হতে পারে। আর এটা সম্ভব হলে দেশের বর্তমান জেলা পরিষদগুলোতে প্রশাসক বসানো হবে। চলতি মাসের মধ্যে দেশের প্রায় সবগুলো জেলা পরিষদের মেয়াদ শেষ হতে চলেছে।

জেলা পরিষদের বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, প্রত্যেক জেলায় একজন চেয়ারম্যান, ১৫ জন সদস্য ও ৫ জন সংরিক্ষত মহিলা সদস্য অর্থাৎ মোট ২১ সদস্যের পরিষদ রয়েছে। প্রস্তাবিত সংশোধনে জেলার প্রত্যেক উপজেলায় (জেলার মোট উপজেলার সমানসংখ্যক) একজন করে সদস্য এবং চেয়ারম্যানসহ সদস্যদের মোট সংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ (নিকটবর্তী পূর্ণসংখ্যা) নারী সদস্য নিয়ে জেলা পরিষদ গঠনের কথা বলা হয়েছে।

বিদ্যমান আইন ও প্রস্তাবিত আইনে নির্বাচকমণ্ডলী (ভোটার) একই ধরণের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের রাখা হয়েছে। তবে বিদ্যমান আইনে ভোটার তালিকা নির্বাচন কমিশনের প্রণয়ন করার কথা থাকলেও প্রস্তাবিত আইনে সেটা বলা হয়নি।

প্রসঙ্গত, আইন অনুযায়ী জেলার অন্তর্গত সিটি করপোরেশনের (যদি থাকে) মেয়র ও কাউন্সিলররা, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানরা, পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলর এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা জেলা পরিষদের ভোটার।

বিলে নতুন ৩৩ (২-ক) উপধারা যুক্ত করে জেলার অন্তর্গত উপজেলা পরিষদগুলোর চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, পৌরসভার মেয়র এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের মেয়রের প্রতিনিধি জেলা পরিষদের সভায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন বলে বলা হয়েছে। তবে তাদের ভোটাধিকার থাকবে না।

প্রস্তাবিত আইনে জেলা পরিষদের কার্যক্রম সরকারের নিবিড় পর্যবেক্ষণে আনা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইনের ৩৭ ধারার পর ৩৭ (ক) যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে—পরিষদ প্রতি অর্থ বছর শেষে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে সরকারের কাছে সম্পাদিত কার্যাবলীর ওপর একটি বার্ষিক প্রতিবেদন দাখিল করবে।

বিলে বিদ্যমান আইনের কর্মকর্তাদের পদ-পদবির পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ‘একজন সচিব’ শব্দগুলোর পরিবর্তে সিনিয়র সহকারী সচিব পদমর্যাদার একজন নির্বাহী কর্মকর্তা শব্দ প্রতিস্থাপিত হবে।

বিদ্যমান আইনে কেবল নতুন জেলা পরিষদ গঠনের ক্ষেত্রে প্রশাসক নিয়োগের বিধান থাকলেও চলমান কোনো পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর প্রশাসক নিয়োগের কোনো বিধান নেই। প্রস্তাবিত আইনে জেলা পরিষদের মেয়াদ শেষ হলে সরকার কর্তৃক প্রশাসক নিয়োগের বিধান যুক্ত করা হয়েছে।

এক্ষেত্রে বিদ্যমান আইনে ৮২ নম্বর ধারা সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে কোন জেলা পরিষদের মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে এবং পরবর্তী পরিষদ গঠিত না হওয়া পর্যন্ত পরিষদের কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য সরকার একজন উপযুক্ত ব্যক্তিকে বা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত কোনো কর্মকর্তাকে প্রশাসক নিয়োগ করতে পারবে। প্রশাসকের মেয়াদ ও অব্যাহতি সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হবে।

বিলটির উদ্দেশ্য সম্পর্কিত বিবৃতিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, বিদ্যমান আইনে জেলার আয়তন, জনসংখ্যা ও উপজেলার সংখ্যা ইত্যাদি নির্বিশেষে সকল জেলা পরিষদে সমসংখ্যক মোট ২১ জন সদস্য রয়েছে। কিন্তু বৃহৎ আয়তনের তুলনায় ক্ষুদ্র আয়তনের জেলা পরিষদগুলোর রাজস্ব আয়ের সংস্থান খুবই কম। ফলে ক্ষুদ্র জেলার পরিষদের পক্ষে সদস্যদের সম্মানী পরিশোধ ও অন্যান্য প্রশাসনিক ব্যয় নির্বাহের পর উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ সম্ভব হয় না। এ সমস্যা হতে উত্তরণে প্রত্যেক জেলা পরিষদের সদস্য সংখ্যা যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করা প্রয়োজন।

জেলা পরিষদগুলোকে আরও কার্যকর ও জনবান্ধব করার জন্য জেলা পরিষদ ও সংশ্লিষ্ট জেলার সকল উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের মধ্যে আন্তঃসমন্বয় সুসংহত প্রয়োজন বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, বিদ্যমান আইনে জেলা পরিষদগুলোর মেয়াদ ৫ বছর শেষ হওয়া সত্ত্বেও নতুন পরিষদের ১ম সভায় মিলিত না হওয়া পর্যন্ত পূর্বের পরিষদ দায়িত্ব পালন করতে পরে। এ শর্তটি সংশোধনক্রমে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা পরিষদের ক্ষেত্রে পরবর্তী নতুন পরিষদ গঠন না হওয়া পর্যন্ত প্রশাসক নিয়োগ করা প্রয়োজন।