ভোটগ্রহণ চলছে ১১৬ উপজেলায়

নিউজ ডেস্ক: পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে ১১৬টি উপজেলায় আজ সোমবার (১৮ মার্চ) ভোট নেওয়া হচ্ছে। সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ চলবে।

রাজনৈতিক দলের ব্যানারে অনুষ্ঠিত এই ভোটে বিএনপিসহ বেশ কিছু নিবন্ধিত দল অংশ না নেওয়ায় খুব একটা উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে না মাঠে। গত ১০ মার্চ অনুষ্ঠিত প্রথম দফার ভোটে মাত্র ৪৩ শতাংশ ভোট পড়েছে। এত কম ভোট দেওয়ার ঘটনা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অতীতে খুব একটা ঘটেনি।
অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। নির্বাচনি সামগ্রী নিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সদস্যদের নিয়ে প্রিসাইডিং অফিসার রবিবার রাত থেকেই নিজ নিজ নির্বাচনি কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। সংশ্লিষ্ট উপজেলাগুলোতে ভোটের দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচনি উপজেলাগুলোতে চলাচলের ওপর বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

এদিকে, অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে। কোনও নির্বাচনি কর্মকর্তা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত হওয়ার প্রমাণ মিললে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানানো হয়েছে। অনিয়মে জড়িত থাকায় দুই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বদলি ও ৪টি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভোটের দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে।

১৮ মার্চকে ভোটগ্রহণের দিনক্ষণ ঠিক করে গত ৭ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল দেয় ইসি। ১৭টি জেলার ১২৯টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল হলেও এর মধ্যে গোপালগঞ্জ জেলার ৫টি উপজেলার ভোট দ্বিতীয় দফার পরিবর্তে তৃতীয় দফায় নেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৯তম জন্মদিন উপলক্ষে ১৭ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টুঙ্গিপাড়া সফর থাকার কারণে তার নিরাপত্তাসহ সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে এ জেলার সব কয়টি উপজেলার ভোটের তারিখ পরিবর্তন হয়েছে। এদিকে দ্বিতীয় ধাপে থাকা দিনাজপুর সদর উপজেলার ভোটও ৪র্থ ধাপে (৩১ মার্চ) স্থানান্তর করা হয়েছে। অপরদিকে, আদালতের আদেশে দ্বিতীয় ধাপের তফসিল ঘোষিত গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ভোট স্থগিত হয়েছে। এছাড়াও ৬টি উপজেলার সবগুলো পদে একক প্রার্থী থাকায় ইতোমধ্যে এসব উপজেলার ফল ঘোষণার নির্দেশ দিয়েছে ইসি। যার কারণে এই ৬টি উপজেলায়ও ভোটগ্রহণের প্রয়োজন পড়ছে না। ফলে সব মিলিয়ে ১১৬টি উপজেলায় সোমবার ভোট হচ্ছে।

দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৪৮ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান ২৩ জন, ভাইস চেয়ারম্যান ১৩ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ১২ জন। যে ৬টি উপজেলার সবগুলো পদেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে সেগুলো হলো চট্টগ্রামের রাউজান, মিরেরসরাই, নোয়াখালীর হাতিয়া, ফরিদপুর সদর, পাবনা সদর ও নওগাঁ সদর।

দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনে মোট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হচ্ছেন- এক হাজার ৩১০ জন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান প্রার্থী ৩৭৭ জন, ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ৫৩৯ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ৩৯৪ জন। এ নির্বাচনে মোট ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৭ হাজার ৩৯টি। ভোটার রয়েছেন ১ কোটি ৭৯ লাখ ৯ হাজার ৬জন।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনটি পদেই দলীয় প্রতীকে ভোটগ্রহণের সুযোগ রয়েছে। তবে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কেবল চেয়ারম্যান পদেই মনোনয়ন দিয়েছে। ফলে এ পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা নৌকা প্রতীকে ভোট করছেন। জানা গেছে, বিএনপি, বাম গণতান্ত্রিক দলসহ বেশ কিছু নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জনে পরিবর্তিত পরিস্থিতি নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করতে আওয়ামী লীগ ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

দ্বিতীয় ধাপের ভোটের আগে ও পরে দুইদিনসহ মোট ৫দিন মাঠে থাকছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। এর অংশ হিসেবে শনিবার পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব, আনসার-ভিডিপি, কোস্টগার্ড, আর্মড পুলিশ, ব্যাটালিয়ান আনসার সদস্যরা মাঠে নেমেছেন। আচরণবিধি প্রতিপালন ও বিশৃঙ্খলা ঘটনা রোধে মাঠে রয়েছেন নির্বাহী ও বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট। নির্বাচনে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে পুলিশ, আনসার, ভিডিপি সদস্য ও গ্রাম পুলিশ থাকবে সাধারণ ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রভেদে। সাধারণ কেন্দ্রে ১৪ জন ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১৫/১৬ জন নিয়োজিত থাকবেন।

পার্বত্য তিন এলাকায় সেনাবাহিনী

পার্বত্য তিন জেলায় নির্বাচন উপলক্ষে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থার অংশ হিসেবে সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত দিয়েছে ইসি। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় ভোটের আগে ও পরে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবির পাশাপাশি ইন এইড টু সিভিল পাওয়ারের আওতায় সেনাবাহিনী দায়িত্ব পালনের সিদ্ধান্ত দিয়েছে ইসি।

যা বলছেন সচিব

দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে রবিবার নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতির কথা তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ হয় তার জন্য কমিশনের পক্ষ থেকে যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য কমিশনাররা বিভিন্ন স্থানে সফর করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করেছেন। রবিবার বিকালেও কমিশন সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করে কিছু নির্দেশনা প্রদান করেছেন।

সচিব জানান, সকল কেন্দ্রে ব্যালট পেপারসহ নির্বাচনি সামগ্রী পৌঁছানো হয়েছে। প্রিসাইডিং অফিসাররা কেন্দ্রে কেন্দ্রে অবস্থান করছেন।

পার্বত্য জেলাগুলোতে সেনা মোতায়েন প্রসঙ্গে সচিব বলেন, তিন পার্বত্য জেলাতে আমরা সেনাবাহিনীর সহযোগিতা চেয়েছি। ইতোমধ্যে সেখানে সেনাবাহিনী কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে। আপনারা জানেন এখানে বিরাজমান পরিস্থিতি রয়েছে। শান্তি চুক্তির পক্ষে বিপক্ষে কিছু সমস্যা আছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে এখানে পাহাড়িদের মধ্যে একটি উত্তেজনা কাজ করে। তা প্রশমিত করার জন্যই সেনাবাহিনীর সহযোগিতা নেওয়া হয়েছে। অন্যান্য জেলা উপজেলাগুলোতে পুলিশ র‌্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড ও আনসার মোতায়েন থাকবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ১৭, ১৮ ও ১৯ মার্চ এই তিনদিন সেনাবাহিনী মোতায়েন থাকবে। ওইখানে সেনাবাহিনীর কার্যক্রম এমনিতেই রয়েছে। অপারেশন উত্তোরণের নামে তিন পার্বত্য জেলায় তাদের কার্যক্রম থাকে। যেহেতু এটা দুর্গম এলাকা এবং উপজাতিদের মধ্যে সংঘাত বিরাজমান তাই সব দিক বিবেচনা করে আমরা সেনাবাহিনীর সহযোগিতা চাইলে তারা সাড়া দিয়েছেন।

হেলালুদ্দীন বলেন, কিছু পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে দুইটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বদলির প্রস্তাব কমিশন অনুমোদন দিয়েছে তা হলো মৌলভীবাজারের কুলাউড়া ও গাইবান্ধার ফুলছড়ি। এছাড়া দিনাজপুরের বীরগঞ্জ, বগুড়ার শিবগঞ্জ, নওগাঁর মান্দা, বান্দবানের আলীকদম উপজেলার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে আগামীকালের নির্বাচনি কর্মকাণ্ড থেকে অব্যাহতি দিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পর্যায়ের কর্মকর্তাদেরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমরা কিছু অভিযোগ পেয়ে তা তদন্ত করে সত্যতা পেয়েছি যার পরিপ্রেক্ষিতে এই ব্যবস্থা আমাদের নিতে হয়েছে বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও নিরপেক্ষ হয় এবং কেউ যাতে অনিয়ম না করে তার জন্য কমিশন কঠোর মনোভাব পোষণ করেছেন। কেউ যদি অনিয়মের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয় তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।