ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যা বাড়ছে

সীমান্তে ভারত কর্তৃক বাংলাদেশী হত্যা আরও বেড়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে মোমেন গত রোববার বলেছিলেন, ঢাকা ও দিল্লি উভয়েই দুই দেশের সীমান্তজুড়ে ‘শূন্য মৃত্যু’ চায়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিজের অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তা হচ্ছে না। এ সময় তার পাশে ছিলেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন ও সমুদ্রবিষয়ক সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) খুরশিদ আলম।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সাংবাদিকেরা সীমান্তে হত্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করেন। তারা গত শুক্রবার লালমনিরহাটে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীদের গুলিতে এক তরুণ নিহত হওয়ার ঘটনা উল্লেখ করেন।

এটি নিয়ে এক সপ্তাহের কম সময়ে বিএসএফের হাতে তিন বাংলাদেশী নিহত হলো। ভারতের নাগরিকত্ব আইনে বাংলাদেশে উদ্বেগ সৃষ্টি হওয়ার প্রেক্ষাপটে এই ঘটনাটি চরমভাবে স্পর্শকাতর। ওই আইনে দ্রুত ভারতীয় নাগরিকত্ব লাভ থেকে মুসলিমদেরকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে। এর বিরুদ্ধে ভারতজুড়ে বিক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

ভারতের শীর্ষ কর্মকর্তারা বেশ কয়েকবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো যে সীমান্তে হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনবে এবং সীমান্তে মারণাস্ত্র ব্যবহৃত হবে না। কিন্তু সীমান্তে হত্যাকা- বেড়ে যাওয়ায় মনে হচ্ছে যে ওইসব প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা হচ্ছে না।

মোমেন বলেন, ভারতের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গে ও সীমান্তে হত্যার ঘটনায় ঢাকা উদ্বিগ্ন এবং আশা করে যে তাদের ‘শূন্য মৃত্যু’ অবস্থানে তারা অটল থাকবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা আপনাদের মতোই উদ্বিগ্ন।

বাংলাদেশ তিন দিক দিয়ে ভারতে পরিবেষ্টিত। দুই দেশের মধ্যে ৪,১৫৬ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। এটি বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম সীমান্ত এলাকা। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯ সালে বিএসএফের হাতে অন্তত ৪৩ জন বাংলাদেশী নিহত হয়েছে। এটি আগের বছরের ১৪ থেকে তিন গুণ বেশি। বস্তুত, ভারতের সীমান্ত সহিংসতা এতই বেড়ে গেছে যে অনেক আন্তর্জাতিক মিডিয়া ও মানবাধিকার সংস্থা বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তকে সবচেয়ে প্রাণঘাতী হিসেবে অভিহিত করেছে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৯-২০১৯ সময়কালে বিএসফের হাতে মোট ৪৫৫ জন বাংলাদেশী নিহত হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছে ৬৫৭ জন, অপহৃত হয়েছে ৫১৮ জন। হত্যাকা- ছাড়াও নির্বাতনের অনেক অভিযোগও রয়েছে।

বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান অবশ্য এসব পরিসংখ্যানের সাথে দ্বিমত প্রকাশ করেছেন। গত বছরের জুলাই মাসে তিনি জাতীয় পার্লামেন্টকে বলেন যে ২০০৯ সাল থেকে গত ১০ বছরে বিএসএফের হাতে নিহত হয়েছে ২৯৪ বাংলাদেশী।

ওই মন্ত্রীর দেয়া তথ্যানুযায়ী, ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে অন্তত ৬৬ জন বাংলাদেশী নিহত হয়েছে। ২০১০ সালে ৫৫ জন, ২০১১ ও ২০১২ সালে ২৪ জন করে, ২০১৩ সালে ২৪ জন, ২০১৫ সালে ৩৮ জন, ২০১৬ সালে ২৫ জন, ২০১৭ সালে ১৭ জন, ২০১৮ সালে তিনজন নিহত হয়েছে।

বাংলাদেশের মানবাধিকার অ্যাক্টিাভিস্ট নূর খান লিটন বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য কোনো সীমান্ত প্রটোকলেই হত্যার জন্য গুলি করাটা (যা ভারত করছে) অনুমোদন করে না। তিনি বলেন, বিশ্বের সবস্থানে অবৈধভাবে আন্তর্জাতিক সীমান্ত অতিক্রমকে বেআইনি অনুপ্রবেশ বিবেচনা করে অন্যায়কারীদের বেসামরিক কর্তৃপক্ষের কাছে সমর্পণ করা হয়। লিটন বলেন, ভারত সরকারের মৃত্যু শূন্যে নামিয়ে আনতে মারণাস্ত্র ব্যবহার না করার বারবারের আশ্বাস সত্ত্বেও তারা মারণাস্ত্রই ব্যবহারকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের অনেক কর্মকর্তা বেআইনিভাবে সীমান্ত অতিক্রমকারীদের লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণকে অনুমোদন করেন। এতে বলা হয়, মানবাধিকারের প্রবক্তা দাবিকারীদের এসব হত্যাকা-ের প্রতি কোনো আগ্রহ নেই। মেক্সিকো সীমান্তে মার্কিন আইনপ্রয়োগকারীদের গুলিতে একজনের মৃত্যুতে আলোড়ন সৃষ্টি হয়, অথচ ভারতীয় বাহিনীর হাতে বিপুলসংখ্যক গ্রামবাসীর হত্যা প্রায় পুরোপুরি এড়িয়ে যাওয়া হয়।