ভারতের প্রতি সমর্পণমূলক মনোভাব বাংলাদেশের জন্য আত্মঘাতি

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্র বন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে যাওয়া কার্গোগুলোর জন্য ভারতের ওপর ট্রানজিট চার্জ ও কাস্টমস ডিউটি ধার্য করবে না। অবশ্য সড়ক ফি ছাড়াও প্রশাসনিক ফি ধার্য করা হবে, তবে এর পরিমাণের ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।  ভারত জানায়ারিতে পরীক্ষামূলক ট্রানশিপমেন্ট শুরু করবে বলে জানা গেছে। বৃহস্পতিবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত আন্তঃসরকার কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়। ভারত ২০১৫ সালে সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার পর থেকে এই ব্যবস্থার জন্য চাপ দিচ্ছে। পরে ২০১৯ সালে ২৫ অক্টোবর এ নিয়ে একটি চুক্তিতে সই হয়।  গত ৩০৬ অক্টোবর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফরের সময় সমুদ্রবন্দর দুটি ব্যবহারপ্রক্রিয়া নিয়ে একটি চুক্তি সই হয়।

বাংলাদেশ শুভেচ্ছার নির্দশন হিসেবে ২০১০-১১ সময়কালে ৭২৯৭ টন বিদ্যুৎ সরঞ্জাম কলকাতা থেকে ত্রিপুরা পাঠাতে এবং ২০১৪-১৫ সময়কালে মানবিক কারণে ১৯,৫৩৭ টন চাল বিনা ফিতে কলকাতা থেকে আগরতলা পরিবহন করতে দেয়। ট্রানশিপমেন্ট স্থাপনা ব্যবহারের জন্য ২০১৪ সালে টনপ্রতি ফি ১৯২.২২ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছিল। তবে বাংলাদেশ টেরিফ কমিশন ২০১১ সালে ১,০৫৮ টাকা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

তবে ট্রানশিপমেন্টে যে বিনিময় পাওয়া যাবে, তার চেয়ে অর্থ ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় অনেক বেশি।  ২০১৭-২০১৯ সময়কালে বাংলাদেশ ট্রানশিপমেন্ট থেকে আয় করেছে ৩.৪৬ মিলিয়ন টাকা, আর এ সময় ব্যয় করেছে ১২.৯৩ বিলিয়ন টাকা। এই অর্থের এক তৃতীয়াংশ এসেছে ভারতের কাছ থেকে ঋণ হিসেবে।

ভারতকে নৌপথের মাধ্যমে ট্রানশিপমেন্ট স্থাপনা ব্যবহার করতে দেয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তায় একটি ফাঁকা সৃষ্টি করছে। আর ভারত এ থেকে সুবিধা আদায় করে নিচ্ছে। বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দরগুলো ভারত ব্যবহার করতে পারলে দেশটি আরো বেশি লাভবান হবে।  অন্যদিকে বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বুধবার বলেছেন, আসামের নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) নিয়ে জানতে চেয়ে ভারতকে বিব্রত করবে না বাংলাদেশ।  উল্লেখ্য, এর জের ধরে যশোর ও ঝিনাইদহের মাধ্যমে ভারতীয়রা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে। ঢাকা বলছে যে সে নয়া দিল্লির কথায় বিশ্বাস করে। ভারত বলছে, এনআরসি তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। কিন্তু এর পরও ২৫০ জনের বেশি নাগরিক ওই সপ্তাহে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। আর পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি হলে বাংলাদেশের জন্য পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে।

এ ধরনের পরিস্থিতি বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই নয়া দিল্লির কাছে এনআরসির অবস্থা সম্পর্কে উত্থাপন করতে হবে। তবে তা করতে হবে নতজানু মনোভাব ঝেড়ে ফেলে সাহসিকতার সাথে। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই ফি ছাড়াই ট্রানশিপমেন্ট স্থাপনা ব্যবহার করার বিষয়টি নিয়েও নতুন করে ভাবতে হবে।