ব্যবসায়ীরা কুরবানির চামড়া না কিনলে সরকারি গুদামে সংরক্ষণ

ঢাকার বাইরে ২৮-৩২ টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক: কুরবানি পশুর চামড়া নিয়ে প্রতি বছরই চলে নৈরাজ্য। বিগত ৩০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ দরপতন হয় গতবছর। পানির দামে চামড়া কেনেন ব্যবসায়ীরা। আবার অনেক চামড়া বিক্রি না হওয়ায় রাস্তায় পচে। এবার থেকে সিন্ডিকেটের অপতৎপরতা বন্ধ করা, কাঁচা চামড়া সংরক্ষণ ও ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার।

গতকাল ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) মতিঝিল শিল্প মন্ত্রণালয়ে চামড়া শিল্পখাতের উন্নয়নে সুপারিশ প্রদান ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন সম্পর্কিত টাস্ক ফোর্সের সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

বৈঠক শেষে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, চামড়া আমাদের জাতীয় সম্পদ। এ সম্পদের সুরক্ষা এবং সর্বোচ্চ বেনিফিট নেয়া আমাদের দায়িত্ব। আমরা কোনোভাবেই গত কুরবানি ঈদের মতো আর কখনও এ সম্পদ নষ্ট হতে দেব না। আজকের (বুধবার) সভায় এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে এবং সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আসন্ন কুরবানি ঈদে পশুর চামড়া যথাযথভাবে সংগ্রহ ও সংরক্ষণের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে শিল্প, বাণিজ্য, পরিবেশ ও বন, ধর্ম, তথ্য মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং চামড়া শিল্প সংশ্লিষ্টদের অংশগ্রহণে একটি কমিটি গঠন করা হবে। কমিটি আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা করে একটি সুপারিশ পেশ করবে।

কোরবানি পশুর চামড়া কেনার জন্য ট্যানারি মালিকদের প্রয়োজনীয় অর্থ সংস্থানে বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ লক্ষ্যে গতবার অর্থছাড়ের ক্ষেত্রে যেসব দীর্ঘসূত্রতা ও সমস্যা দেখা দিয়েছিল, সেগুলো নিরসনের চেষ্টা করা হবে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় কুরবানি পশুর চামড়া সংরক্ষণের জন্য ট্যানারি মালিক, ফড়িয়া, মৌসুমী/এমেচারদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া স্থানীয় প্রশাসন, মসজিদের ঈমাম, মাঠ পর্যায়ে ইসলামী ফাউন্ডেশন, আলেম-ওলামাসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অন্তর্ভুক্ত করে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এ লক্ষ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও আপলোড করে প্রচার ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।

চামড়া ব্যবসায়ী ও ট্যানারি মালিকরা যথাসময়ে কুরবানি পশুর চামড়া না কিনলে তা সংরক্ষণের জন্য সরকারি পর্যায়ে গুদামে ন্যূনতম তিন মাস সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রয়োজন হলে সাময়িকভাবে কাঁচা চামড়া রফতানির অনুমোদন দেয়া হবে। এ জন্য সরকারের রফতানি নীতি সংশোধন করার দরকার হলে তাও করা হবে।

এছাড়া প্রয়োজন হলে উপজেলা পর্যায়ে ন্যূনতম দু’জন ডিলারকে চামড়া সংরক্ষণ ও বিপণনের জন্য নিয়োগ দেয়া হবে। তারা চামড়া ও চামড়াজাতপণ্য বিক্রি করবে। এ জন্য তাদেরকে প্রয়োজনে প্রণোদনা দেয়া হবে।

চামড়া শিল্পের জন্য বিকল্প বাজার দেখছে সরকার:

চীনে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস বিস্তারের ফলে দেশীয় চামড়া শিল্প যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য সরকার বিকল্প বাজার অনুসন্ধান করছে বলে জানিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন।

নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, ইউরোপের বাজারে দেশীয় চামড়াজাত পণ্য রফতানির লক্ষ্যে ট্যানারিগুলোকে লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সার্টিফিকেশন অর্জন করতে হবে। এজন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সাভার ট্যানারি শিল্পনগরীতে নির্মিত সেন্ট্রাল ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান (সিইটিপি) স্থাপন করা হয়েছে। সার্টিফিকেশন অর্জনে অন্যান্য শর্তপূরণে ট্যানারি মালিকদের আরও সক্রিয় হতে হবে।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, দেশীয় চামড়া শিল্পের স্বার্থে ট্যানারিগুলোকে রক্ষা করতে হবে। কোরবানির চামড়া যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য তৃণমূলের চামড়া ব্যবসায়ীদের কথা চিন্তা করতে হবে। সবার স্বার্থ রক্ষায় যা করণীয় সরকার সেটিই করবে।