বৈদেশিক অর্থায়নের প্রকল্পে গতি বাড়ছে

বৈদেশিক অর্থায়নের প্রকল্পে গতি বাড়ছে

নিউজ ডেস্ক: বৈদেশিক অর্থায়নের প্রকল্পে গতি বাড়ছে। এর প্রভাবে অর্থছাড় বেড়েছে গত ৯ মাসে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ পর্যন্ত উন্নয়ন সহযোগীরা ছাড় করেছে ৪৫২ কোটি ১৫ লাখ ডলার।

গত অর্থবছরে একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৩৪২ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। তুলনামূলকভাবে ছাড় বেড়েছে ১০৯ দশমিক ৭৭ কোটি ডলার। সেই সঙ্গে বেড়েছে ঋণ পরিশোধের পরিমাণও। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সর্বশেষ প্রতিবেদন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

অর্থছাড় বৃদ্ধির পেছনে তিনটি উদ্যোগ ফলদায়ক হয়েছে বলে মনে করছে ইআরডি। সংস্থারটির অতিরিক্ত সচিব (বর্তমানে সচিবের দায়িত্বে) মো. শহিদুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, শক্তিশালী মনিটরিং অব্যাহত রাখা হয়েছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের নিয়ে দ্বিপাক্ষিক, ত্রিপাক্ষিক ও রিভিউ মিটিং নিয়মিতভাবে করাসহ মন্ত্রী পর্যায় পর্যন্ত ডিও লেটার দেয়া হচ্ছে। এছাড়া ফরমাল প্রক্রিয়ার বাইরে গিয়ে ইনফরমালি প্রকল্পের গতি বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। এসব কারণেই মনে করছি চলতি অর্থবছর অর্থছাড়ের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।

ইআরডি সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের (২০১৮-১৯) ৯ মাসে বিভিন্ন প্রকল্পের অনুকূলে উন্নয়ন সহযোগীরা যে অর্থছাড় করেছে, এর মধ্যে ঋণের পরিমাণ ৪৩১ কোটি ৩৮ লাখ মার্কিন ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৩২২ কোটি ডলার। এছাড়া অনুদান ছাড় হয়েছে ২০ কোটি ৭৬ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে অনুদান ছাড় হয়েছিল ২০ কোটি ৩৮ লাখ ডলার।

এদিকে চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে ৬২০ কোটি ৭৪ লাখ ডলার। এর মধ্যে ঋণ হচ্ছে ৫০৬ কোটি ২৮ লাখ ডলার এবং অনুদান রয়েছে ১১৪ কোটি ৪৫ লাখ ডলার।

ঢাকায় নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, আগের তুলনায় প্রকল্প বাস্তবায়নের সক্ষমতাতো কিছুটা বেড়েছেই। ফলে এক অর্থবছরের তুলনায় আর এক অর্থবছরে বৈদেশিক অর্থছাড় বাড়ছে। তবে চলতি অর্থবছরের অর্থছাড় বেশি হওয়ার আরেকটি অন্যতম কারণ হচ্ছে, ফেব্রুয়ারিতে বিশ্বব্যাংক বাজেট সহায়তা হিসেবে ২৫ কোটি ১০ লাখ ডলার ছাড় দিয়েছে। এটি একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা।

ইআরডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে রেকর্ড তৈরি করেছে বাংলাদেশ। স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত খেলাপি হয়নি কখনও। নিয়মমতো নির্ধারিত সময়েই সব ঋণ পরিশোধ করতে সক্ষম হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতা এখনও অব্যাহত।

এক্ষেত্রে গত অর্থবছরের ৯ মাসের তুলনায় চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে ঋণ পরিশোধ বেড়েছে। গত ৯ মাসে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে ১২১ কোটি ১৮ লাখ ডলার। এর মধ্যে আসলের পরিমাণ ৮৯ কোটি ৯২ লাখ ডলার আর সুদ হচ্ছে ৩১ কোটি ২৫ লাখ ডলার।

গত অর্থবছরের একই সময়ে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ছিল ৮৬ কোটি ৬৮ লাখ ডলার। এর মধ্যে আসলের পরিমাণ ৬৮ কোটি ১৮ লাখ ডলার এবং সুদ হচ্ছে ১৮ কোটি ৪৯ লাখ ডলার। তুলনামূলকভাবে চলতি অর্থবছর ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ৩৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার।

ইআরডি সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে বিভিন্ন প্রকল্পের অনুকূলে বৈদেশিক অর্থছাড়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৬৩৫ কোটি ১০ লাখ ডলার। অন্যদিকে প্রতিশ্রুতি আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৬০০ কোটি ডলার।

প্রতিশ্রুতির তুলনায় অর্থছাড়ের লক্ষ্যমাত্রা বেশি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে ইআরডির বৈদেশিক সাহায্যের বাজেট ও হিসাব শাখার (ফাবা উইং) এক কর্মকর্তা বলেন, প্রতিশ্রুতি প্রায় প্রত্যেক বছরই একই রকম রাখা হয়। একটু কম করে ধরা হয়। সেজন্য এটি ৬০০ কোটি ডলারের আশপাশেই থাকে। আর পাইপলাইনে বিপুল বৈদেশিক সহায়তার প্রতিশ্রুত অর্থ জমা আছে। সেখান থেকে ব্যয় বাড়বে বলে অর্থছাড়ের লক্ষ্যমাত্রা বেশি ধরা হয়েছে। প্রতিশ্রুতির সঙ্গে অর্থছাড়ের কোনো সম্পর্ক নেই।