বিশ্বের ৯০টি দেশে বাংলাদেশের ওষুধ রপ্তানি হচ্ছে

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) ২০৩৩ সাল পর্যন্ত স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে (এলডিসি) ওষুধের মেধাস্বত্বে ছাড় দেওয়ায় এবং বাংলাদেশের ওষুধ প্রস্তুতকারক দুটি কোম্পানি গতবছর যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনের (এফডিএ) অনুমোদন পাওয়ায় নতুন উদ্যমে প্রস্তুতি নিচ্ছেন এ খাতের রপ্তানিকারকরা।

রপ্তানিকারক ও অর্থনীতির গবেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের ওষুধ রপ্তানি শুরু হলে এ খাতে আয় বহুগুণ বেড়ে যাবে।

আর এই আশায় দেশের পুঁজিবাজারে মন্দার মধ্যেও বাড়ছে ওষুধ খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারের দাম।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন মনে করেন, সরকারি নীতি সহায়তা ও সুযোগ-সুবিধাগুলো জোরদার করা হলে কেবল যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেই হাজার কোটি ডলারের (প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা) ওষুধ রপ্তানি সম্ভব।

গতবছর জুনে বাংলাদেশের স্কয়ার ও বেক্সিমকো ফার্মার ওষুধ কারখানা যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনের অনুমোদন পায়।

“শিগগিরই ইনসেপটাও এই সুযোগ পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে অন্য কোম্পানিগুলোও পাবে,” বলেন ফরাসউদ্দিন।

বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের বিজনেস ডেভেলপমেন্ট বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার শওকত হায়দার

বলেন, তাদের ‘সব প্রস্তুতি’ নেওয়া হয়েছে। চার-পাঁচ মাসের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বেক্সিমকোর ওষুধ রপ্তানি শুরু হবে।

“ব্লাড প্রেশারের ওষুধ রপ্তানির মধ্য দিয়ে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশ করব।”

বাংলাদেশে এ খাতের আরেক বড় কোম্পানি স্কয়ার ফার্মাও আমেরিকার বাজারে ওষুধ রপ্তানি শুরু করবে কয়েক মাসের মধ্যে। ইনসেপটা ফার্মাসিউটিক্যালস ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ওধুষ রপ্তানির লক্ষ্যে আলাদা কারখানাও স্থাপন করেছে।

বর্তমানে ইউরোপ ও মধ্যপাচ্যের বিভিন্ন দেশসহ বিশ্বের ৯০টি দেশে বাংলাদেশের ওষুধ রপ্তানি হচ্ছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) বাংলাদেশ পণ্য রপ্তানি থেকে আয় করেছে এক হাজার ৬০৮ কোটি ৪০ লাখ (১৬ দশমিক ০৮ বিলিয়ন) ডলার। এর মধ্যে ৩ কোটি ৭৯ লাখ ডলার (প্রায় ৩০০ কোটি টাকা) এসেছে ওষুধ রপ্তানি থেকে।

এই অংক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ১৮ শতাংশ বেশি। ২০০৯-১০ অর্থবছরের পুরো সময়ে বাংলাদেশ ওই অর্থ আয় করেছিল ওষুধ রপ্তানি থেকে।

আর ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ওষুধ রপ্তানি করে মোট আয় হয়েছিল ৭ কোটি ২৬ লাখ ডলার।

এই মুনাফা আরও বাড়াতে বাংলাদেশের ওষুধ কোম্পানিগুলো বিনিয়োগও বাড়িয়েছে। চলতি বছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে ওষুধ শিল্পে মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি বেড়েছে ২৫ শতাংশ।

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) গত নভেম্বরে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) জন্য ২০৩৩ সাল পর্যন্ত ওষুধের মেধাস্বত্বে ছাড় দেওয়ার যে ঘোষণা দিয়েছে, তাতে বাংলাদেশই সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তারা বলছেন, এর ফলে বাংলাদেশ আরও ১৭ বছর মেধাস্বত্বের জন্য কোনো ব্যয় না করেই ওষুধ তৈরি ও কেনা-বেচা করতে পারবে। ক্যান্সার, আর্থ্রাটিস, অ্যাজমাসহ অনেক জটিল রোগের ওষুধও  দেশের মানুষ কম মূল্যে পাবে।

বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির নেতা আব্দুল মুকতাদির বলছেন, যে ইনজেকশনের দাম বিদেশে ৩ লাখ টাকা, এলডিসির জন্য দেওয়া সুবিধায় বাংলাদেশের একটি কোম্পানি তা ৬০ হাজার টাকায় দিতে পারে। এই সুযোগ ঠিকমতো কাজে লাগাতে পারলে বিদেশ থেকেও রোগীরা বাংলাদেশে চিকিৎসা নিতে আসবেন; ‘মেডিকেল ট্যুরিজম’ বাড়বে।

বাংলাদেশের ওষুধের অভ্যন্তরীণ বাজার ১২ হাজার কোটি টাকার। এক লাখেরও বেশি মানুষ প্রত্যক্ষভাবে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত। গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ মনে করেন, সামনে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের জন্য আরও সুদিন অপেক্ষা করছে।

“ওষুধ খাত নিয়ে আমাদের প্রত্যাশা অনেক। আমরা আশা করছি, আগামী ৭/৮ বছরের মধ্যে ওষুধ রপ্তানি বেড়ে ১০ গুণ হবে।”

নিজের ধারণার পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, আগে সবাই চীন থেকে ওষুধ কিনতো। এখন চীন নিজেদের দেশের চাহিদা মেটাতে ব্যস্ত। তাই সবার ওষুধ কিনছে ভারত থেকে। সম্ভাবনার বিচারে এরপর বাংলাদেশের নামই আসে।

“বাংলাদেশের মতো এতো অল্প পয়সায় ওষুধ খাওয়ানোর মত দেশ আর কোথাও নাই।”

এ খাত থেকে তৈরি পোশাকের চেয়েও বেশি মুনাফা করা সম্ভব বলে মনে করেন হারুনুর রশিদ।