বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের চারকোল বিক্রি হচ্ছে টনপ্রতি ১০০০ ডলারে

বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের চারকোল বিক্রি হচ্ছে টনপ্রতি ১০০০ ডলারে

নিজস্ব প্রতিবেদক: পাটখড়ি থেকে উৎপাদিত একটি পণ্য হচ্ছে এই ছাই, যা আসলে চারকোল বা অ্যাকটিভেটেড কার্বন। কারখানার বিশেষ চুল্লিতে পাটকাঠি পুড়িয়ে ছাই করা হয়। তিন থেকে চার দিন পোড়ানোর পর চুল্লির ঢাকনা খুলে ছাই সংগ্রহ করে ঠা-া করা লাগে। এ ছাড়া কাঠের গুঁড়া, নারিকেলের ছোবড়া ও বাঁশ থেকেও ছাই বা চারকোল উৎপাদন হয়ে থাকে। তবে দেশে এখন পর্যন্ত পাটখড়ি থেকেই চারকোল উৎপাদিত হচ্ছে।

বাংলাদেশ থেকে ২০০৯-১০ সালে এই পণ্য রপ্তানি শুরু হয়। এ সব ছাইয়ের মধ্যে গড়ে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত কার্বন উপাদান থাকে। টনপ্রতি ৫০০ থেকে ১ হাজার ৭০ ডলারে রপ্তানি হচ্ছে এই পণ্য। পাটখড়ির ছাইয়ে থাকা কার্বন পাউডার দিয়ে প্রসাধনসামগ্রী, ব্যাটারি, কার্বন পেপার, পানির ফিল্টারের উপাদান, দাঁত পরিষ্কার করার ওষুধ ও ফটোকপি মেশিনের কালি তৈরি করা হচ্ছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ছাই রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬৪.৫৩ শতাংশ।

বাংলাদেশ থেকে পাটখড়ির ছাইয়ের প্রধান আমদানিকারক দেশ হচ্ছে চীন। তাইওয়ান, ব্রাজিলেও এটি রপ্তানি হচ্ছে। এর বড় বাজার রয়েছে মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপান, ব্রাজিল, তুরস্ক, দক্ষিণ কোরিয়া, জার্মানিসহ ইউরোপের দেশগুলোতে। পাট দিয়ে চট, বস্তা, কাপড়, কার্পেট তৈরি হলেও পাটখড়ি এত দিন গ্রামে মাটির চুলায় রান্না করার কাজে এবং ঘরের বেড়া দেওয়ার কাজেই ব্যবহৃত হতো। দেশের পার্টিকেল বোর্ড কারখানাগুলোতেও উপকরণ হিসেবে পাটখড়ি ব্যবহৃত হয়।

একটি কারখানার ব্যবস্থাপক বলেন, তাঁদের দৈনিক চাহিদা ৫০০ মণ পাটখড়ি। মৌসুমে প্রতি মণ পাটখড়ি কিনতে হয় ১৮০-২০০ টাকা দরে। আর যখন মৌসুম থাকে না, তখন দাম পড়ে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। সহজ যোগাযোগের কারণে এবং জাহাজ ভাড়া কম পড়ে বলে চীন হলো আপাতত বাংলাদেশি পাটখড়ির ছাইয়ের প্রধান গন্তব্যস্থল। তবে আরও নতুন দেশ আমরা খুঁজছি।
পাট অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশে বছরে ৩০ লাখ টন পাটখড়ি উৎপাদিত হয়। এর মাত্র ৫০ শতাংশকেও যদি ছাই করা যায়, তাহলে বছরে উৎপাদন দাঁড়াবে প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার টন। এক টন ছাইয়ের দাম ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ ডলার।

প্রস্তাবিত পাটখড়ির ছাই রপ্তানিকারক সমিতিটি বাণিজ্য এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের কাছে ছাই রপ্তানির সম্ভাব্য নানা দিক তুলে ধরেছে। এতে বলা হয়, এ খাত থেকে বছরে রপ্তানি আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে ৩১ কোটি ২৫ লাখ ডলার। আর সরকার এ খাত থেকে বছরে রাজস্ব পাবে ৪০ কোটি টাকা। এ ছাড়া প্রত্যক্ষভাবে ২০ হাজার ও পরোক্ষভাবে ২০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে এ খাত থেকে।

সমিতি বলছে, ছাই উৎপাদনের কারখানাগুলো পরিবেশবান্ধব, বহির্বিশ্বে ছাইয়ের ভালো চাহিদা রয়েছে এবং সহজেই আন্তর্জাতিক বাজার ধরা যাবে। এ কারখানায় বিদ্যুৎ বেশি লাগে না, কারখানা স্থাপনে বিনিয়োগের পরিমাণও খুব বেশি নয়। তা ছাড়া কাঁচামাল পাওয়া যায় সহজেই।