বিশ্বজুড়ে কমছে জন্মহার: এবার জনসংখ্যা কমে যাওয়া নিয়ে উদ্বেগ!

নিজস্ব প্রতিবেদক:  সাধারণত, প্রজনন হার ২.১ এর কম হলে জনসংখ্যার আকার কমতে শুরু করে। প্রজনন হার ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকলে চলতি শতকের শেষ দিকে বিশ্বের অধিকাংশ দেশের জনসংখ্যাই এখনকার তুলনায় অনেক কম থাকবে বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন না হলে ২১০০ সালের মধ্যে স্পেন ও জাপানসহ ২৩টি দেশের জনসংখ্যা এখনকার অর্ধেক হয়ে যাবে বলেও গবেষকরা আশঙ্কা করছে।

১৯৫০ সালেও একজন নারী জীবদ্দশায় গড়ে ৪.৭টি সন্তানের মুখ দেখতেন, যা ২০১৭ সালে ২.৪ এ নেমে এসেছে বলে ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ ম্যাট্রিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশন ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় উঠে এসেছে।

এখানেই শেষ নয়; প্রজনন হার আরও কমে ২১০০ সাল নাগাদ ১.৭ এ দাঁড়াতে পারে বলে জার্নাল ল্যানসেটে প্রকাশিত এক নিবন্ধে ধারণা দিয়েছে গবেষকরা।

তাদের হিসাব অনুযায়ী, পৃথিবীতে ২০৬৪ সাল নাগাদ মানুষের সংখ্যা ৯৭০ কোটিতে পৌঁছালেও তার ৩৬ বছর পরই এ সংখ্যা ৮৮০ কোটিতে নেমে যাবে।
প্রজনন হারের এ ক্রমাবনতি জাপান, ইতালি, স্পেনসহ বেশকিছু দেশের জন্য এখনি মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে ভাষ্য গবেষকদের।
তাদের মূল্যায়ন অনুযায়ী, জাপানের জনসংখ্যা এ শতাব্দির শেষ নাগাদ গিয়ে দাঁড়াবে মাত্র ৫ কোটি ৩০ লাখে। যেখানে ২০১৭ সালেও দেশটির জনসংখ্যা ছিল ১২ কোটি ৮০ লাখ।

ইউরোপের দেশ ইতালিতে ২০১৭ সালে ছিল ৬ কোটি ১০ লাখ লোক; প্রজনন হার কমতে থাকলে ২১০০ সাল নাগাদ এটি ২ কোটি ৮০ লাখে গিয়ে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

যে ২৩টি দেশের জনসংখ্যা নিয়ে উদ্বেগ বেশি তাদের মধ্যে মাত্র দুটি দেশের জনসংখ্যা এখনকার চেয়ে অর্ধেকের বেশি থাকতে পারে, বলছে গবেষকরা।
প্রজনন হার কমায় চীনের জনসংখ্যাও আগামী ৮ দশকে অনেক কমে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বলছে, আর ৪ বছরের মধ্যে চীনের জনসংখ্যা সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে হবে ১৪০ কোটি। এরপর তা কমতে কমতে ২১০০ সাল নাগাদ থাকবে মাত্র ৭৩ কোটি ২০ লাখ।

গবেষকদের অনুমান, যুক্তরাজ্যের জনসংখ্যা ২০৬৩ সালে হবে সবচেয়ে বেশি, ৭ কোটি ৫০ লাখ। ২১০০ সালে সেটি কমে হবে ৭ কোটি ১০ লাখ।
বিশ্বের ১৯৫টি দেশের ১৮৩টিতেই প্রজনন হার এমন হবে যে তা আর প্রতিস্থাপন যোগ্য থাকবে না; যার ফলে এ বিষয়টি বিশ্বের দেশগুলোর মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তাদের হিসাবে ২১০০ সাল নাগাদ তরুণদের তুলনায় বৃদ্ধ মানুষের সংখ্যা এখনকার অনুপাতে অনেক বেশি থাকবে।

ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বলছে, ২০১৭ সালে বিশ্বজুড়ে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুর সংখ্যা ছিল ৬৮ কোটি ১০ লাখ; ২১০০ সালে এ সংখ্যা থাকবে মাত্র ৪০ কোটি ১০ লাখ।

অন্যদিকে ২০১৭ সালে ৮০ বছরের বেশি বয়সীর সংখ্যা ছিল ১৪ কোটি ১০ লাখ; ২১০০ সালে এটি বেড়ে হবে ৮৬ কোটি ৬০ লাখ।

জনসংখ্যা বাড়াতে যুক্তরাজ্যের মতো অনেক দেশই গত কয়েক বছর ধরে অভিবাসনের উপর জোর দিচ্ছে। কিন্তু যখন বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেরই জনসংখ্যা সংকুচিত হতে শুরু করবে, তখন কেবল অভিবাসনের মাধ্যমে এ সংকটের সমাধান করা যাবে না।

প্রজননে উৎসাহিত করতে অনেক দেশ সবেতন পিতৃত্বকালীন ও মাতৃত্বকালীন ছুটি, বিনামূল্যে শিশুসেবা, নানান ধরনের আর্থিক সুবিধা ও চাকরিকালীন সুযোগ দিলেও এগুলোই যে সুস্পষ্ট সমাধান, তাও বলা যাচ্ছে না।

সুইডেন এ ধরনের সুবিধা দিয়ে প্রজনন হার ১.৭ থেকে ১.৯ এ নিতে পারলেও অন্য অনেক দেশই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে পারেনি। সিঙ্গাপুরের প্রজনন হার গত কয়েক বছরের মতোই এ বছরও ১.৩ এর আশপাশে ঘোরাফেরা করছে।

বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ জনসংখ্যা সংকুচিত হতে দেখলেও সাব-সাহারান আফ্রিকার দেশগুলোর মোট জনসংখ্যা ২১০০ সাল নাগাদ এখনকার তিন গুণ হয়ে ৩০০ কোটি ছাড়াতে পারে বলে ধারণা গবেষকদের। সেসময় ৭৯ কোটি ১০ লাখ মানুষ নিয়ে নাইজেরিয়া বিশ্বের দ্বিতীয় জনবহুল দেশে পরিণত হতে পারে বলেও অনুমান করা হচ্ছে।