বিতর্কিত সাংবাদিক শফিক রেহমান গ্রেফতার
নিউজ নাইন২৪ডটকম, ঢাকা: ২০১৫ সালের পল্টন থানার রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় বিতর্কিত সাংবাদিক শফিক রেহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ডিবি পুলিশ। শনিবার সকালে তাকে রাজধানীর ইস্কাটনের নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
তার এক সময়ের সহকর্মী জানায় ভালবাসা দিবসের আগে নেপথ্যে থেকে বাংলাদেশে পর্ণো-সাহিত্য প্রকাশ শুরু করেন আর সেই বইগুলোর লেখক হিসাবে ছদ্দনাম ব্যবহার করতেন রসময় গুপ্ত। লন্ডন থেকে বিভিন্ন নগ্ন/পর্ণো ছবি সংগ্রহ করে বাংলাদেশে রসময় গুপ্ত নামে প্রচলিত ভাষায় “চটি” প্রকাশ করে অনেকদিন একচেটিয়া ব্যবসা করেছেন। পরবর্তিতে একই নাম দিয়ে অনেক আন্ডারগ্রাউন্ড প্রকাশকরা প্রকাশ শুরু করলে ব্যক্তিগত সুনাম রক্ষার্থে ব্যবসা থেকে হাত গুটাতে হয়। ১৯৮৪ সালে শুরু করেন সাপ্তাহিক যায়যায়দিন যেখানে লুকিয়ে থাকা গুপ্তের সামান্য ছায়া পড়তো। এছাড়াও “মৌচাকে ঢিল” নামক একটি সেমি-চটি ম্যাগাজিনের সম্পাদক ছিলেন শফিক রেহমান। আলোচিত হয়, বাংলাদেশে লিভ টুগেদার ছড়িয়ে দেয়ার পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান শফিক রেহমানের।
হোটেল ইন্টার-কন্টিনেন্টালে একাউন্টেন্ট হিসাবে কর্মরত থাকতে শফিকের বিরুদ্ধে এক কর্মচারী সমকামীতার অভিযোগ তোলে বলে জানা যায়। ৯১ পরবর্তীতে সাপ্তাহিক যায়যায়দিনে নবীন লেখকদের লেখার সুযোগ দেয়ার নামে নবীনরা এবং ডেমোক্রেসীওয়াচের ছাত্রছাত্রী/সার্ভেয়ারদের মধ্যে অনেককেই সে ফাদে আটকে যৌন-সম্পর্ক গড়ে তুলতো। এ নিয়ে কয়েকবার তার স্ত্রী তালেয়া রেহমানের কাছেও বিরাগভাজন হয়েছে। সমকামীরা লাল সার্ট পরে বলে যুক্ত রাষ্ট্রে প্রচ্লিত আছে।
শফিক রেহমানের কুৎসিত রসিকতা
শফিক রেহমানের আরেকটা ভয়াবহ রকমের বাড়াবাড়ি ছিল, সব কিছু নিয়ে কুৎসিত রসিকতা করা। ভিনসেন্ট পিউরিফিকেশনের নামে যা তা রসিকতা। একবার দিলেন এমন, বিএনপির মাস্তান নামের অসভ্যরা ইডেন কলেজের কিছু ছাত্রীর জামা ছিঁড়ে ফেলেছিল, ভেতরের অন্তর্বাস দেখা যাচ্ছিল।
শফিক রেহমান এই ছবিটার পাশে বোম্বের ব্রা প্রদর্শনীর একটা ছবি দিয়ে কুৎসিত রসিকতা করার চেষ্টা করেন। এখানে এসেই মানুষটার বুদ্ধিশুদ্ধি নিয়ে সংশয় জাগে।
পেশাদার সাংবাদিকের অভাব, তীব্র আওয়ামী বিরোধীতা, পরিকল্পনার অভাবই ছিলো এর কারণ। আর এর নাটের গুরু ছিলেন সাবেক ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার অঘোষিত প্রেস সচিব এবং শফিক রেহমানের মিডিয়া পরামর্শক নূরুল ইসলাম ছোটন, ওরফে নূরুল ইসলাম ভূঁইয়া।
পরে আবারো যাযাদি সাপ্তাহিক হিসেবে প্রকাশ হতে থাকে। তবে ততদিনে অন্যান্য প্রিন্ট মিডিয়ার উত্থান ও যাযাদির অন্ধ বিএনপি-নীতি অনুসরণ করার ফলে সাপ্তাহিকটিও দ্রুত বাজার হারায়।
২০০১ সালে বিএনপি-জামাত জোট সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর আবারও মিডিয়া ড্রাগন হিসেবে আবির্ভূত হন শফিক রেহমান। একই সঙ্গে আবির্ভূত হন খালেদা জিয়ার অঘোষিত প্রেস সচিব এবং শফিক রেহমানের মিডিয়া পরামর্শক নূরুল ইসলাম ছোটন। সরকারি বা রাজনৈতিক পদে না থাকলেও অতিক্ষমতাধর ছোটন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে নিয়মিত অফিস করতেন।
হাওয়া ভবনের যোগসাজসে তেজগাঁর খাস জমি বন্দোবস্ত নিয়ে, সরকারি রাস্তার নাম পাল্টে ‘লাভ রোড’ রেখে বসুন্ধরা গ্রুপের টাকা ও ব্যাংক ঋণ নিয়ে আলিশান অফিস তৈরির কাজ চলে। আবার কয়েক কোটি টাকার প্রকল্প নিয়ে যাযাদি দৈনিক হিসেবে আবির্ভূত হতে যাচ্ছে — এমন সাজ সাজ রব পড়ে মিডিয়া জগতে। বছর দেড়েক ধরে শুধু অফিস নির্মাণ, অত্যাধুনিক প্রেস এবং নিজস্ব পাওয়ার স্টেশন বসানো, বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়া থেকে বাছাই করে সংবাদ কর্মী নিয়োগের কাজও চলে। অতঃপর ২০০৬ সালে প্রকাশ হয় একটি সোনার পাথর বাটি।
বিপুল পরিমান অর্থ ব্যয় এবং বাঘা বাঘা সাংবাদিক নিয়োগ করেও দৈনিক যাযাদি অপেশাদার সুলভ নীতি, তীব্র আওয়ামী বিরোধীতা, অদ্ভুদ সব বানান রীতি, ইংরেজী শব্দের যথেচ্ছ ব্যবহার — ইত্যাদির কারণে গোলাপ-শফিক রেহমানের পত্রিকাটি মোটেই পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করে না। উপরন্তু প্রতিদ্বন্দ্বি দৈনিকের সংখ্যাও বাড়তে থাকে।
বিএনপি সরকারের শেষ দিকে প্রকাশনার মাত্র চার মাসের মাথায় ২০০৬ সালের অক্টোবরে বসুন্ধরা গ্রুপের চাপে শফিক রেহমান গার্মেন্টস শ্রমিক ছাঁটাই করার কায়দায় একসঙ্গে ছাঁটাই করেন শতাধিক সংবাদকর্মী। কোনো রকম আগাম নোটিশ এবং দেনা-পাওনা পরিশোধ ছাড়াই ঈদের ছুটির পর এই ছাঁটাই কার্যকর করা হয়। এক সকালে সাংবাদিকরা যাযাদির অফিসে ঢুকতে গিয়ে দেখেন অফিস গেট বন্ধ; প্রধান ফটকে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে ছাঁটাই নোটিশ!
ক্ষুব্ধ সাংবাদিকরা খবর পান, শফিক রেহমান পত্রিকাটি বন্ধ করে তাদের বকেয়া টাকা পরিশোধ করা ছাড়াই লন্ডন পাড়ি জমাচ্ছেন! তারা ধাওয়া করেন বিমানবন্দরে।